কৃষ্ণকুমার দাস: দল ও দলীয় নেতা সম্পর্কে ‘বেসুরো’ প্রবীণ মন্ত্রী সাধন পাণ্ডের (Sadhan Pande) মন্তব্য নিয়ে এবার তৃণমূলের তরফে কার্যত কড়া সতর্কবার্তা দিলেন দলের অন্যতম রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম নিয়ে শুক্রবার তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘ওঁর যদি কোনও বক্তব্য থাকে, তা হলে সেটা দলের অন্দরে জানান। বাইরে বলে ওস্তাদ হওয়ার কোনও দরকার নেই! সংবাদমাধ্যমে অভিযোগ আকারে বলে দলকে ছোট না করাই যে কোনও শৃঙ্খলাপরায়ণ কর্মীর দায়িত্ব ও কর্তব্য।’’
তৃণমূল কংগ্রেসের ২৩ তম প্রতিষ্ঠা দিবসে (TMC Foundation Day) এদিন নিজের বিধানসভা কেন্দ্রে এক কর্মসূচিতে ক্রেতাসুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে ক্ষোভপ্রকাশ করে বলেন, ‘‘দলের নানা পদে ও দায়িত্বে অনেক খারাপ লোক বসে আছে। তৃণমূলের ভালর জন্যই যারা খারাপ, তাদের দল থেকে এক্ষুনি বাদ দেওয়া উচিত।’’ বস্তুত গত কয়েক মাস ধরে সাধনবাবু প্রকাশ্যেই দল বা অন্য সহকর্মী মন্ত্রী শশী পাঁজা, বিধায়ক পরেশ পাল সম্পর্কে কটূক্তি করেছেন। সমর্থকদের নিয়ে দ্বন্দে জড়িয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত ‘দুয়ারে সরকার’ চলাকালীন প্রাক্তন বরো চেয়ারম্যান অনিন্দ্য রাউত বা কাউন্সিলর অমল চক্রবর্তীর কর্মসূচিতে হাজির হয়ে তিনি সরকারি কর্মসূচি ‘ভন্ডুল’ করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ। সাংগঠনিকভাবে গোপনে দল দু’পক্ষ নিয়ে মিটিয়েও দিয়েছে। কিন্তু ফের প্রকাশ্যে বেসুরো হতেই এবার সাধন পাণ্ডের বক্তব্য নিয়ে দলের প্রতিষ্ঠা দিবসের পাশাপাশি নিজের ৬৩ তম জন্মদিনের কর্মসূচি শেষে এদিন সংযত হতে বলে দিলেন কলকাতার বিদায়ী মেয়র তথা পুরমন্ত্রী (Firhad Hakim)।
ময়দানি ভাষায় তৃণমূলের তরফে ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রীকে কার্যত ‘হলুদ কার্ড’ দেখিয়ে ফিরহাদ বলেন, “যদি সাধনদার কিছু বক্তব্য থাকে, তা হলে সেটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) জানাবেন। সংবাদমাধ্যমে বলে দিলেই তো কেউ খারাপ বা ভাল হয় না। আর কে খারাপ, কে ভাল, সেটার বিচার কে করবেন? একমাত্র বিচারের মালিক দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিই বিচার করবেন, সিদ্ধান্ত নেবেন।” এখানেই শেষ নয়, উত্তর কলকাতার প্রবীণ মন্ত্রীর সহকর্মীদের সম্পর্কে প্রকাশ্যে এমন কটাক্ষ বা মন্তব্যকে দল যে মোটেই হালকাভাবে নিচ্ছে না তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন পুরমন্ত্রী। দু’সপ্তাহ আগে শুভেন্দু অধ্যায়ের পর তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব যে শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে অত্যন্ত কড়া তা বুঝিয়ে দিয়ে বেসুরো মন্ত্রী-বিধায়কদের উদ্দেশ্য এদিন ফিরহাদ বলেছেন, “শুধু মাত্র সাধনদা নন। এমন যাঁরাই আছেন, তাঁদের উচিত যা বলার, দলের ভিতরে বলা। বাইরে বলে ওস্তাদ হওয়ার কোনও দরকার নেই! এতে দলের ভাবমূর্তি ছোট হয়। ওই নেতার নাম বা ছবি হয়তো একদিন সংবাদমাধ্যমে বড় করে দেখায়, কিন্তু আদতে তৃণমূলের ক্ষতি হয়। এটা দলীয় নেতৃত্ব অনুমোদন করে না।”
পুরমন্ত্রীর এই কড়া বার্তার পর এখন দেখার সাধন পাণ্ডে বা বেসুরো বিধায়করা কী সিদ্ধান্ত নেন। এদিন কাঁথি পুরসভার প্রশাসক সৌমেন্দু অধিকারীর (Soumendu Adhikari) বিজেপিতে যোগ দেওয়া নিয়েও কটাক্ষ করেন পুরমন্ত্রী। বলেন, “কুর্সি চলে যেতেই নীতি বিসর্জন দিয়েছে, ওঁদের সম্পর্কে কিছু বলে নিজেকে ছোট করব না।” বিজেপি দেশের বিরোধী দলগুলিকে কীভাবে ভাঙছে তারও ব্যাখ্যা দেন পুরমন্ত্রী। বলেন, ‘‘ভোটের আগে অন্য রাজ্যের মতো বাংলাতেও বিজেপি তিন রকম ভাবে দল ভাঙানোর চেষ্টা করছে। প্রথম, ইডি-সিবিআই দিয়ে ভয় দেখানো। দ্বিতীয়, বিভিন্ন পদের প্রলোভন দেখানো এবং তৃতীয়, রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা। কিন্তু আমরা ওসবে ভয় পাই না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্ভীক সৈনিক আমরা। প্রয়োজনে প্রাণ দেব কিন্তু নীতিভ্রষ্ট হব না।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.