অর্ণব আইচ: আর জি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা একজনের পক্ষে ঘটানো সম্ভব। শুধু তাই নয়, নির্যাতিতার দেহ থেকে উদ্ধার হওয়া লালারস একজন, ধৃত সঞ্জয় রায়ের। শরীর থেকে মেলেনি কোনও বীর্যও। সিবিআইয়ের প্রশ্নে এমনই রিপোর্ট পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ফরেনসিক টিম ও অন্যান্য কেন্দ্রীয় হাসপাতালের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত ‘এমআইএমবি’ ।
নির্যাতিতার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট, ডিএনএ রিপোর্ট- সহ আরও বেশ কিছু নথি খতিয়ে দেখার জন্য সিবিআইয়ের সুপারিশেই এই বিশেষজ্ঞ দল (Medical Investigation Monitoring Board-MIMB) গঠন করা হয়েছিল। সিবিআই মোট ন’টি প্রশ্ন করে। ‘এমআইএমবি’ রিপোর্টে বিস্তারিত তথ্য সিবিআইকে জানায়। উল্লেখ্য, নির্যাতিতার দেহ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মূল অভিযউক্ত সঞ্জয় রাইকে কলকাতা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। পরে তাকে তুলে দেওয়া হয় সিবিআইয়ের হাতে। সিবিআই কেন্দ্রীয় ফরেনসিকের রিপোর্টের ভিত্তিতেই তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে। এরপর ওই রিপোর্টের ভিত্তিতেই তার বিচারপর্বও শুরু হয়, যা এখন শেষের দিকে। নির্যাতিতার মৃত্যুর কারণ ও সময় সম্পর্কে জানতে চায় সিবিআই। ‘এমআইএমবি’-র উত্তর, নির্যাতিতাকে শ্বাসরোধ ও গলা টিপে হত্যা করা হয়। তাঁর মৃত্যু হয় ৮ আগস্ট রাত বারোটা থেকে ৯ আগস্ট সকাল ৬টার মধ্যে। সিবিআইয়ের প্রশ্ন, কী ধরনের যৌন নির্যাতন নির্যাতিতার উপর করা হয়? ছবি ও ভিডিও দেখে বোঝা গিয়েছে যে, দু’ভাবে তাঁর যৌনাঙ্গের হাইমেন ছিঁড়ে গিয়েছে। রক্তাক্ত দেহরস উদ্ধার করা হয়। চোয়ালের কাছে আঘাতের চিহ্ন ও গলার কাছে যে চিহ্নটি দেখা গিয়েছে, সেটি ‘লাভ বাইট’ চিহ্ন বলে পরিচিত। নির্যাতিতার দেহের উপরের অংশ থেকে লালারস সংগ্রহ করা হয়। তার ডিএনএ পরীক্ষা হয়। সেই ডিএনএ পরীক্ষার স্পষ্ট উল্লেখ করা রয়েছে যে, গত ২১ আগস্ট যে ডিএনএ রিপোর্ট সিবিআইয়ের হাতে এসেছে, তাতে দেখা গিয়েছে যে, ওই লালারস সঞ্জয় রাইয়ের।
সিবিআইয়ের প্রশ্ন, এই নির্যাতন কি একজনের পক্ষে ঘটানো সম্ভব? উত্তরে ‘এমআইএমবি’ জানিয়েছে, মুখ, গলা ও যৌনাঙ্গের আঘাত দেখে বলা যায়, একজনের পক্ষে এই আঘাত উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সিবিআইয়ের প্রশ্ন, মৃত্যুর আগে নির্যাতিতার দেহে কী ধরনের আঘাত রয়েছে ও তার কারণ কী? এই প্রশ্নের উত্তরে ‘এমআইএমবি’ জানিয়েছে, প্রত্যেকটি আঘাতই মৃত্যুর আগের। ক্রমাগত শ্বাসরোধের ফলেই চোখ রক্তাক্ত হয়। গলায় আঘাতের কারণ জোরে চেপে ধরা। নির্যাতিতা বাঁচার চেষ্টা করার কারণে যে ধ্বস্তাধস্তি হয়, তার ফলেই দেহে আরও কিছু আঘাত হয়। নাকে আঘাতের চিহ্ন চশমা ভেঙে যাওয়ার কারণে। যৌনাঙ্গে আঘাত হয় জোর করে কোনও কিছু প্রবেশ করার কারণে। সিবিআইয়ের প্রশ্নে নির্যাতিতার যৌনাঙ্গে মূলত দু’ধরনের আঘাত কীভাবে হয় তা উল্লেখ করেছে ‘এমআইএমবি’। সিবিআইয়ের প্রশ্নে বাধা দেওয়ার কারণে কী কী আঘাতে নির্যাতিতার দেহে ছিল, সেই উত্তরে সিবিআইকে ‘এমআইএমবি’ জানায়, ভোঁতা বস্তু দিয়ে আঘাত করা হয় যখন নির্যাতিতা বাধা দেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, সেই আঘাত সঞ্জয়ের শক্ত হাতের কারণে হতে পারে।
সিবিআইয়ের প্রশ্ন ছিল, ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটে থাকলে নির্যাতিতার যৌনাঙ্গ থেকে বীর্য অথবা সিমেনের চিহ্ন মেলেনি কেন? ‘এমআইএমবি’ সিবিআইকে জানায়, অনেক কারণেই সিমেন বা বীর্য না পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পুরুষের যৌনাঙ্গ ছাড়া অন্য কিছু যৌনাঙ্গে প্রবেশ করালে, অথবা কন্ডোমের মতো কোনও বস্তু ব্যবহার করলে তা সম্ভব। উল্লেখ্য, পরে সিবিআই জানতে পারে যে, সঞ্জয় কোনও কন্ডোম জাতীয় বস্তু ধর্ষণের সময় ব্যবহার করেছিল, এমন প্রমাণ মেলেনি। সেই ক্ষেত্রে সে অন্য উপায়ে যে যৌন নির্যাতন করেছিল, সিবিআই সেই প্রমাণ পেয়েছে। এ ছাড়াও ‘এমআইএমবি’ জানিয়েছে যে, ময়নাতদন্ত ও অন্য আঘাতের রিপোর্ট দেখে তা যে আলাদা তা মনে হয়নি বিশেষজ্ঞদের। তবে ময়নাতদন্তের সময় ঘরে অতিরিক্ত ব্যক্তির উপস্থিতি নজরে এসেছে, যা নিয়ম বহির্ভূত। এ ছাড়াও নির্যাতিতার দাঁতে ‘ব্রেস’ থাকার কারণে মুখের ভিতর বেশি সংখ্যক আঘাত দেখা যায় বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.