কৃষ্ণকুমার দাস: করোনা মোকাবিলায় বহুতল ফ্ল্যাটবাড়ির চেয়ে ঘিঞ্জি বসতিকে পাখির চোখ করে করোনা আক্রান্তদের খুঁজে বের করতে চায় কলকাতা পুরসভা। তাই এই এলাকাগুলিতে কার্যত তল্লাশি শুরু করা হয়েছে। বেলগাছিয়া, নারকেলডাঙা, কাশীপুর, চেতলা লকগেট, সেলিমপুর রেলকলোনির মতো ৫০টি ঘনবসতি এলাকায় ‘গোষ্ঠী সংক্রমণ’ রুখতে বাড়ি বাড়ি তথ্য সংগ্রহ শুরু করলেন পুরকর্মীরা। তবে সেই তথ্য জোগাড় করতে গিয়ে প্রচুর বাধার সম্মুখীন হতে হল পুরকর্মীদের। বাড়িতে কেউ অসুস্থ কিনা, কারোর জ্বর,সর্দি হয়েছে কিনা প্রশ্ন করলেই উত্তর এড়িয়ে যাচ্ছেন বসতির বাসিন্দারা। অনেক সময় তথ্য জোগাড় করতে গিয়ে বাসিন্দাদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে পুরসভার কর্মীদের।
বৃহস্পতিবার পুরসভায় এক জরুরি বৈঠকে বেলগাছিয়া (৩ নম্বর ওয়ার্ড) ও নারকেল ডাঙা মেন রোডের (২৯ নম্বর ওয়ার্ড) বসতিতেই শহরের সর্বাধিক করোনা পজিটিভ মেলায় মাইক্রোপ্ল্যানিংয়ে (Micro Planning) সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তবে প্রথম দিন তথ্য সংগ্রহে গিয়ে বেশ কয়েকটি গলিতে বাসিন্দাদের বাধার সম্মুখীন হয়েছেন পুরকর্মীরা। করোনা ভাইরাস কিছু করতে পারবে না, তাই তথ্য নেওয়ার প্রয়োজন নেই, বলে মন্তব্য করেছেন বেলগাছিয়ার কিছু বসতিবাসী। কোথাও আবার মাইক্রোপ্ল্যানিং টিমকে ঘিরে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন বাসিন্দারা। কেউ কেউ তথ্য জানাতে অস্বীকার করেছেন। কিছু মানুষের ক্ষোভের কথা স্বীকার করে স্থানীয় কাউন্সিলর ডাঃ শান্তনু সেন দাবি করেন, অধিকাংশই অসুস্থতা নিয়ে তথ্য দিয়েছেন। তবে করোনা প্রতিরোধ করতে ক্ষোভ উপেক্ষা করেই আজও পুরকর্মীরা নিজেদের কাজ চালিয়ে যাবেন।
লকডাউনের সময় করোনা মোকাবিলায় অনেক স্থায়ী পুরকর্মী নিয়মিত কাজে না এলেও কার্যত জীবন বাজি রেখে পরিষেবা দিচ্ছেন ক্যাজুয়াল কর্মীরা। তাঁদের পুরস্কৃত করার ভাবনা তুলে ধরে মেয়র এই বৈঠকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, “করোনা—যুদ্ধে পরিষেবা দেওয়া ক্যাজুয়াল কর্মীরা আমাদের কাছে দুঃসময়ের সহযোদ্ধা। আগামীতে এই কর্মীদের স্থায়ীকরণের প্রস্তাব কার্যকর করার পথে চলবে পুরসভা।” লেবার কোয়ার্টারেও কড়া নজরদারি চালাবে পুরসভা। লকডাউনের মধ্যে শহরে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মাইক্রোপ্ল্যানিং কার্যকর করতে অনেক বেশি সংখ্যক পুরকর্মী প্রয়োজন। কিন্তু লকডাউনের অজুহাতে একাংশের পুরকর্মী, হেলথ সেন্টারের ডাক্তাররাও আসছেন না। বস্তুত সেই সমস্ত পুরকর্মী ও ডাক্তারদের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে জাতির এমন সঙ্কটকালে কাজে যোগ দিতে বৈঠকে আবেদন করেন মেয়র।
বৃহস্পতিবারে পুরসভার প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠকে মেয়র জানান, “প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের অসুস্থতার তথ্য প্রতিদিনই সংগ্রহ করা হবে। করোনা শুধু নয়, যে রোগীই পাওয়া যাবে পুরসভা তাদের সকলকেই হাসপাতালে ভর্তি করবে।” পুলিশকে নিয়ে মাইক্রোপ্ল্যানিং স্পটে ব্যারিকেড গড়ে বাসিন্দাদের লকডাউনে আটকে রাখার চেষ্টা হবে। বৈঠকে এদিন মেয়র স্পষ্ট করে দেন, কেন্দ্রীয় সরকার রেড বা গ্রিন যে জোনই দেখাক, রাজ্য তথা পুরসভার কাছে সমস্ত ওয়ার্ডই সমান গুরুত্বপূর্ণ। এদিন বেলগাছিয়ার বস্তিতে মাইক্রোপ্ল্যানিং প্রথম কার্যকর করতে মাঠে নামে ১৫টি টিম। ১৮টি বুথে টিম নামার আগে বরো—১ অফিসে টিমের সদস্যদের পিপিই পরিয়ে কীভাবে বাড়ি বাড়ি তথ্য সংগ্রহ করা হবে তার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.