নব্যেন্দু হাজরা: সেপ্টেম্বরেই কি ফের পাতালপথে যাত্রীদের নিয়ে ছুটবে কলকাতার মেট্রো (Kolkata Metro)? সেই সবুজ সংকেত এখনও রেলবোর্ডের তরফ থেকে আসেনি। কিন্তু রাজ্য জানিয়ে দিয়েছে সামাজিক দূরত্ব রেখে মেট্রো চললে তাদের কোনও আপত্তি নেই। তাই আচমকাই মেট্রো চালানোর নির্দেশ এলে পরিষেবা কীভাবে সচল রাখা হবে, সেবিষয়ে মাস্টারপ্ল্যান তৈরি রাখছে মেট্রো কর্তৃপক্ষ।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) বুধবার নবান্নে জানিয়েছেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মেট্রো চলতেই পারে। রাজ্যের তাতে আপত্তি নেই। মেট্রো কর্তৃপক্ষ (Metro Railway Kolkata) এবিষয়ে রাজ্যের সঙ্গে কথা বলতে পারে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের বড় চিন্তা, মেট্রোয় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে যাত্রী চাপ সামাল দেওয়া। সেক্ষেত্রে যাত্রীদের ওঠা নামার সময় নজরদারি প্রয়োজন। প্রতি মেট্রোর প্রতি কামরায় সেই নজরদারি করবে কে? কারণ, ওই বিপুল সংখ্যক আরপিএফ মেট্রোর হাতে নেই। যাঁরা আছেন, তাঁদের বেশ কয়েকজন আবার করোনায় (CoronaVirus) আক্রান্ত। একটা বড় অংশ কোয়ারেন্টাইনে। তাই কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, যাত্রীদের আরও সচেতন হতে হবে। নিজের ভাল বুঝে ভিড় এড়াতে হবে।
প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, একদম শুরুতে জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের নিয়েই ছুটবে মেট্রো। প্রতি স্টেশনে দাঁড়াবে ৪০ সেকেন্ড। কোচে নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি যাত্রী হয়ে গেলেই অতিরিক্ত যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হবে। একই সঙ্গে টোকেন ব্যবস্থা তুলে দিয়ে শুধু স্মার্টকার্ড পরিষেবাই চালু রাখা হবে। ইতিমধ্যেই মেট্রোর কাউন্টারে ভিড় এড়াতে অ্যাপের মাধ্যমে স্মার্টকার্ড অনলাইন রিচার্জ শুরু হয়েছে। দিনের কোন সময় কতটা ব্যবধানে মেট্রো চলবে, তাও জানানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় (Indrani Banerjee) বলেন, “মিনিস্ট্রি অফ হোম অ্যাফেয়ার্স ও রেল মন্ত্রকের নির্দেশ পাওয়ার পরই আমরা মেট্রো চালানো নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করব। মেট্রো সমস্ত দিক থেকে পরিষেবা শুরু করতে প্রস্তুত।” তবে সূত্রের খবর, প্রাথমিকভাবে ঠিক হয়েছে প্রত্যেক যাত্রীকে মাস্ক পরে স্টেশনে ঢুকতে হবে। স্টেশনে প্রবেশের আগে সকলের থার্মাল স্ক্যানিং হবে। শরীরের তাপমাত্রা বেশি হলে যাত্রীকে আর স্টেশনে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। সামাজিক দূরত্ব মেনে প্লাটফর্ম এবং টিকিট কাউন্টারের বাইরে হলুদ দাগ দিয়ে যাত্রীদের দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করা থাকছে। এক মিটার অন্তর দাঁড়াতে হবে তাদের। স্টেশনে থাকা কর্তব্যরত আরপিএফ কর্মীরা প্রত্যেকেই পিপিই পড়ে কাজ করবেন। হাতে থাকবে গ্লাভস। কর্মীদের কোনওভাবে যাত্রীদের সঙ্গে হাত মেলানো বা সংস্পর্শে আসতে নিষেধ করা হয়েছে।
মেট্রো সূত্রে খবর, এতদিন একই গেট দিয়ে যাত্রীরা প্লাটফর্মে ঢুকতেন আবার বেরতেন। কিন্তু এবার থেকে মেট্রোর এন্ট্রি এবং এক্সিট গেট আলাদা করা হচ্ছে। যাত্রীদের প্রবেশ ও প্রস্থানের মূল গেটে কর্তব্যরত আরপিএফ এবং প্ল্যাটফর্মের আরপিএফরা সবসময় ওয়াকিটকির মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান করবেন। নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রী প্লাটফর্মে হয়ে গেলে সেখান থেকে মূল গেটে থাকা রেল পুলিশকে তা জানানো হবে। সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হবে মূল গেট। ট্রেন এলে যাত্রীরা তাতে উঠবেন। প্লাটফর্ম ফাঁকা হবে। তখন সেই খবর জানানো হবে গেটে দাঁড়িয়ে থাকা আরপিএফকে। পরবর্তী ট্রেনের জন্য তখন আবার যাত্রীরা প্ল্যাটফর্মে ঢুকবেন। অকারণে মেট্রো স্টেশনে বসে থাকা বা ঘোরাঘুরি করা যাবে না। নির্দিষ্ট দূরত্ব বিধি মেনে প্লাটফর্মে, চেয়ারে এবং মেট্রোর কোচে মার্কিং করা হয়েছে। এদিকে, স্টেশনে ঢোকার মূল গেট আটকে দিলে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন পড়ে যেতে পারে স্টেশনের বাইরে। কখনও কখনও ক্ষোভ-বিক্ষোভ হতে পারে। তা সামাল দেওয়ার জন্যই মেট্রোরেলের তরফে কলকাতা পুলিশকে বিষয়টি দেখার অনুরোধ করা হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.