নব্যেন্দু হাজরা: দিন-রাত এক করে মেট্রোর কাজ চলে। মাটির উপর ভারী যন্ত্রদানবের অভিঘাতে মুহুর্মুহু কেঁপে ওঠে তামাম তল্লাট। এই সেতুও নির্ঘাত কেঁপেছিল। না হলে এভাবে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়বে কেন? মঙ্গলবার বিকেলে মাঝেরহাটে সেতুভঙ্গের পর স্থানীয় মানুষের মনে গেড়ে বসেছে এই প্রশ্ন। তাঁদের অভিযোগ, জোকা-বিবাদী বাগ মেট্রো প্রকল্পের ধুন্ধুমার কাজের ফলে যে মাঝেরহাট ব্রিজের ভিত নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে, সেদিকে কারও নজর পড়েনি। তারই খেসারত দিতে হল এদিন। যদিও মেট্রো কর্তৃপক্ষের দাবি, মাঝেরহাটে সেতু বিপর্যয়ের পিছনে মেট্রোর কাজের কোনও ভূমিকা নেই। তাদের ব্যাখ্যা, ওই এলাকায় মেট্রোর মাটির উপর পিলার তৈরির এবং খোঁড়াখুড়ির কাজ এক বছর আগে শেষ হয়ে গিয়েছে। এখন মাটির উপরে স্ল্যাব তৈরির কাজ চলছে। ফলে এখন এই দুর্ঘটনা মেট্রোর কাজের জন্য হওয়া সম্ভব নয়।
কিন্তু মেট্রো কর্তৃপক্ষ যা-ই বলুক, সংশয় থেকেই যাচ্ছে। প্রস্তাবিত জোকা-বিবাদি-বাগ মেট্রো রুটের একটা বড় অংশ পড়ছে মাঝেরহাটের এই অঞ্চলে। যা তৈরি করছে রেল বিকাশ নিগম লিমিটেড বা আরভিএনএল। পুরো প্রকল্পটিই মাটির উপরে। অর্থাৎ এলিভেটেড মেট্রো। আর সেই প্রকল্প রূপায়ণ করতে গিয়ে পুরো এলাকাজুড়ে চলছে কর্মযজ্ঞ। বছর কয়েক ধরেই একের পর এক উঠছে পিলার, মাটিতে খোঁড়া হচ্ছে ৩০-৪০ ফুটের গর্ত। ফলে বৃষ্টিতে সেখানে জল জমছে। মাটি আলগা হচ্ছে। সঙ্গে যন্ত্র চলায় এলাকায় কাঁপুনিও। সব মিলিয়ে ব্রিজের গোড়াতেই গলদ তৈরি করে দিয়েছিল বলে স্থানীয় বাসিন্দা ও বিশেষজ্ঞদের একাংশের অভিমত।
আরভিএনএলের ডিরেক্টর রাজেশপ্রসাদ বলেন, “ওই এলাকায় মাটির উপর পিলার তৈরির কাজ বা খোঁড়াখুড়ির কাজ এক বছর আগে শেষ হয়ে গিয়েছে। এখন মাটির উপরে স্ল্যাব তৈরির কাজ চলছে। ফলে এই দুর্ঘটনা মেট্রোর কাজের জন্য হওয়া সম্ভব নয়। ওই সেতুর দুই পিলারের মাঝের গার্ডার ভেঙে গিয়েছিল। তাতেই বিপর্যয়।” মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ব্রিজ ভেঙে পড়ার সঙ্গে মেট্রোর কাজের কোনও সম্পর্ক নেই।
মাঝেরহাট ব্রিজের এই পরিণতির আভাস বছর দুই আগেই পেয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। মেট্রোর পাইলিংয়ের কাজ শুরু হতেই থর থর করে কেঁপে উঠত গোটা ব্রিজটি। মেট্রোর ইঞ্জিনিয়ারদের তাঁরা সতর্ক করেছিলেন । কিন্তু অভিযোগ, তাঁদের কথাকে গুরুত্ব দেয়নি মেট্রো কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার গোলাম মোস্তাফা নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, আমাদের কথা শুনলে এই ঘটনা হয়তো এড়ানো যেত। মেট্রোর কাজ শুরুর পর থেকেই আশঙ্কার প্রহর গুনছিলেন স্থানীয়রা। তাঁদের দাবি, পাইলিংয়ের ধাক্কা সহ্য করতে না পেরে রীতিমতো কাঁপতো ব্রিজটি। মাটির উপরে মেট্রোর লাইন তৈরির পিলার বানানোর জন্য গভীর গর্ত খোড়ার কাজ চলছিল। তাতে ব্যবহৃত হচ্ছিল ভারী মেশিন। সেই অভিঘাতে দুর্বল ব্রিজটি ক্রমশ আরও দুর্বল হয়ে যায় বলে স্থানীয়দের দাবি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.