রিংকি দাস ভট্টাচার্য: গরমের হাঁসফাঁস নেই। লাগাম পরেছে তাপমাত্রায়। এর উপর বৃষ্টির পূর্বাভাস। আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর জানাচ্ছে, পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃষ্টি হলে, তাপমাত্রা কমতে পারে আরও কিছুটা।
ভরা হেমন্তে বৃষ্টির মূলে রয়েছে আন্দামান সাগরের উপর থাকা ঘূর্ণাবর্ত। বঙ্গোপসাগর হয়ে ধীরে ধীরে ওড়িশার দিকে এগোবে সেই ঘূর্ণাবর্ত। যার প্রভাবে আগামী সোমবার, সপ্তাহ শুরুর দিন কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। উপকূলবর্তী জেলাগুলির কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস। ঘূর্ণাবর্তের জেরে বৃষ্টি হতে পারে উত্তরবঙ্গেও।
তাহলে কি বৃষ্টির হাত ধরে বঙ্গে পা রাখতে চলেছে শীত? হাওয়া অফিস অবশ্য ততটা আশাবাদী নয়। দপ্তরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস শুক্রবার জানিয়েছেন, বৃষ্টির ফলে তাপমাত্রা কিছুটা নামতে পারে। যার জেরে শীত-শীত ভাব অনুভূত হবে। তবে ওইটুকুই। পাকাপাকি শীতের আমেজ পেতে দক্ষিণবঙ্গবাসীকে অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছুদিন।
হাওয়া অফিস যা-ই বলুক না কেন, গত কয়েকদিন ধরেই হালকা শীতের পরশ মিলেছে। সকালে টাটকা কুয়াশার হিমেল পরশ পেয়েছে শহরবাসী। শহরতলি অবশ্য মুড়ে গিয়েছে কুয়াশার চাদরে। জলেও শিরশিরানি। বেলা গড়াতে টান দিয়েছে চামড়ায়। মোদ্দা কথা, অক্টোবরেই শীতের যাবতীয় উপসর্গ হাজির কলকাতায়। এ পরিস্থিতিতে অনেকে তাই বলতে শুরু করেছে, পুজোর মতো এবং শীতও সময়ের আগে উপস্থিত বাংলায়। এদিন ভোরেই শহরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে তিন ডিগ্রি নেমে পৌঁছয় ২০.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমেছিল ২০.৯ ডিগ্রিতে। তাপমাত্রার এই পারাপতন দেখে দক্ষিণবঙ্গবাসী বলতে শুরু করেছে, শীত এসে গেল বাংলায়! আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর অবশ্য এমন ‘গুজবে’ কান দিতে নারাজ। আবহাওয়াবিদদের ব্যাখ্যা, বর্ষা বিদায় নিলেও বাতাসে আর্দ্রতার মাত্রা যথেষ্ট বেশি। গভীর রাতের দিকে তাপমাত্রা হঠাৎ করে নেমে যাওয়ায় জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে কুয়াশা তৈরি করছে। ফলে ‘শীতশীত’ ভাব অনুভূত হচ্ছে।
আসলে শীত নির্ভর করে উত্তুরে হাওয়ার উপর। উত্তুরে হাওয়ার গতি যত বাড়বে রাজ্যে শীতের দাপটও তত বাড়বে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, নিম্নচাপ বা ঘূর্ণাবর্তের জন্য গোঁসাঘরে খিল দেয় উত্তুরে হাওয়া। সমুদ্র থেকে গরম হাওয়া ঢুকে স্থলভূমির উত্তাপ বাড়ায়। তার উপর অক্টোবর-নভেম্বর মাস বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের মরশুম। এই সময় নিম্নচাপ হলে তা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। বছর তিনেক আগে ঠান্ডার রথে রাশ টেনেছিল অক্টোবর-নভেম্বরে আন্দামান সাগরে তৈরি দু’টি ঘূর্ণিঝড় ‘হেলেন’ ও ‘লহর’। আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, বর্ষা বিদায় নিতেই আকাশ সাফ হয়ে যায়। তার জেরে রাতে ভূপৃষ্ঠ থেকে অনেক বেশি তাপ বিকিরিত হতে পারে। ফলে রাতের তাপমাত্রা দ্রুত হারে কমতে থাকে। শীত পড়ার জন্য এই তাপ বিকিরণ প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্ত্ত নিম্নচাপের জেরে সেই প্রক্রিয়ায় বাধা পড়ে। তাঁদের কথায়, আকাশে মেঘ থাকলে দিনের তাপমাত্রা বাড়বে না। দিন-রাতের তাপমাত্রার তেমন ফারাক থাকবে না, শীত পড়ার জন্য যা নাকি আবশ্যিক শর্ত। এবছরও কি তেমন-কিছু ঘটতে চলেছে? আবহাওয়াবিদরা অবশ্য এত তাড়াতাড়ি কোনও মন্তব্য করতে নারাজ। তাঁদের কথায়, নিম্নচাপ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত তার গতিবিধি সম্পর্কে পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয়। তবে আসন্ন নিম্নচাপের প্রভাব না পড়লে তাপমাত্রা ক্রমশ নামবে বলেই আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.