গৌতম ব্রহ্ম: টানা ‘রজস্রাব’ হচ্ছিল। তলপেটের ব্যথায় কুঁকড়ে গিয়েছিল ৫৬ বছরের শরীরটা। সংসারের কাজকর্ম শিকেয় তুলে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছিলেন বিজয়গড়ের বধূটি। একাধিক হাসপাতাল ঘুরেছেন। সর্বত্রই শুনেছেন এক কথা। ‘আপনার সমস্যা শুধু গাইনোলজিক্যাল নয়, গ্যাসট্রো, সার্জারির ককটেল’। অতঃপর উন্নততর হাসপাতালে রেফার। ‘উন্নততর’ হাসপাতাল ফিরিয়ে দিয়েছে বেড নেই বলে। বাঁচার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন বিজয়গড়ের কল্পনা বসু। অবশেষে বাড়ির সামনের হাসপাতালই তাঁকে শাপমুক্ত করল। টালিগঞ্জের এম আর বাঙুর হাসপাতালে একেবারে নিখরচায় চিকিৎসা করিয়ে আপাতত তিনি আরোগ্যের পথে।
৮ ফেব্রুয়ারি বাঙুরে সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. জয়দীপ রায়ের অধীনে ভর্তি হন কল্পনাদেবী। পরীক্ষায় জানা যায়, তলপেটের ডানদিকে ‘অ্যাপেন্ডিকুলার লাম্প’ জাতীয় একটা টিউমারের মতো ফোলা অংশ রয়েছে, যোনিতে সংক্রমণ। পাশাপাশি ‘রাইট ফিমোরাল হার্নিয়া’। পেটব্যথায় ছটফট করছিলেন কল্পনাদেবী। ইউএসজি, সিটি স্ক্যানে ধরা পড়ে, পেলভিক এন্ডোমেট্রিসিস নামে একটি রোগে তিনি আক্রান্ত। ‘ইন্টেসটিনাল অ্যাডিশন’ হয়ে তাতে নাড়িভুঁড়ি সব জড়িয়ে গিয়েছে। এবং সমস্যার মূলে রয়েছে কল্পনাদেবীর শরীরে বসানো ‘ইনফ্রা ইউটেরাইন সিস্টেম’ নামে একটি যন্ত্র। যন্ত্রটি জন্ম নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও যোনিপথে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ কমাতে কার্যকর ভূমিকা নেয়। জয়দীপবাবু জানালেন, এই ‘হরমোনাল ডিভাইস’ ঠিকমতো বসানো হয়নি। তাতেই সমস্যা হচ্ছিল। গাইনোকলজিস্টদের সঙ্গে কথা বলে ১৪ ফেব্রুয়ারি ল্যাপারোটমি অপারেশন করা হয়। পার্ক সার্কাসের ন্যাশনাল মেডিক্যালের স্ত্রীরোগ বিভাগের প্রধান ডা. আরতী বিশ্বাস জানালেন, “যোনিপথে রক্তক্ষরণের কারণ না জেনে ‘আইইউএস ডিভাইস’ পরানো অত্যন্ত বিপজ্জনক। বিশেষ করে পোস্ট মেনোপজ পর্যায়ে। এক্ষেত্রে কী হয়েছে তা রিপোর্ট না দেখে বলা মুশকিল।” ডাক্তারদের পর্যবেক্ষণ, অ্যাপেন্ডিসাইটিস ও ওভারিয়ান টিউমারের জোড়া অভিশাপ কল্পনাদেবী শয্যাশায়ী করে ফেলেছিল। অপারেশনে জরায়ু কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে। এখন রোগী সুস্থ। বাঙুরের সুপার স্পেশালিটি বিল্ডিংয়ের ফিমেল সার্জিকাল ওয়ার্ডে ভরতি। জয়দীপবাবু জানিয়েছেন, টানা দু’ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এখন রোগী পুরোপুরি বিপন্মুক্ত। তবে, সমস্যা এতটাই জটিল আকার নিয়েছিল যে, রোগীর জীবন সংশয় হয়েছিল।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, গাইনি সার্জন ছাড়াই অপারেশনটি করেন জয়দীপবাবু। কল্পনাদেবীর ভাই সৌমেন দাস জানালেন, “ছ’মাস আগে দিদির যন্ত্রণা শুরু হয়। সে অসহ্য যন্ত্রণা। শিরদাঁড়া সোজা করতে পারছিলেন না। ডাক্তারবাবু খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে অস্ত্রোপচার করে দিদিকে সুস্থ করেছেন।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.