Advertisement
Advertisement

দেশের কাজে জীবন বিলিয়েও ‘ব্রাত্য’ বাংলার দেশপ্রেমিক      

একটাই আক্ষেপ আজও ভারত সরকার কোনও স্বীকৃতি দিল না।

Meet the forgotten hero from Bengal who served India
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:January 30, 2018 9:45 am
  • Updated:January 30, 2018 9:45 am  

দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: বয়সের হিসেবে একশোর কোটা প্রায় ছুঁইছুঁই। কিন্তু কর্মচঞ্চল মানুষটিকে দেখে কে বলবে এত সময় গড়িয়ে গিয়েছে প্রবীণ মুখের রেখায়! আজও যেখানেই জাতীয় পাতাকা উত্তোলন হয়, রক্তে এক অদ্ভুত টান অনুভব করেন। চেষ্টা করেন ছুটে যেতে। আসলে গোটা জীবনটাই যে দেশের কাজে দশের জন্য উৎসর্গ করেছেন তিনি। বাংলার সুশীল কুমার রায় যেন স্বাধীনতাত্তোর ভারতের চলমান ইতিহাস।

[ মাছ ধরার নামে বালিকার যৌন নির্যাতন, অভিযুক্ত প্রতিবেশী গ্রেপ্তার ]

Advertisement

উত্তরপাড়ার মাখলা ১নং গর্ভনমেন্ট কলোনিতে বাস ৯৬ বছরের ‘যুবক’ সুশীল কুমার রায়ের। অংশগ্রহণ করেছিলেন ১৯৪৩-এর ভারত-চিন যুদ্ধেও। ১০০-র দোরগোড়ায় পৌঁছে আজও দেশের প্রজাতন্ত্র দিবস থেকে শুরু করে যেখানেই জাতীয় পতাকা উত্তোলন হয় সেখানেই ছুটে যান সুশীল বাবু। মন ও শরীরের দিক থেকে আজও যেন তিনি আর দশটা যুবকের থেকে অনেকটাই এগিয়ে। তবু তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনের পর সেরকমভাবে সম্মান না পাওয়ায় মনের কোথাও এখনও ব্যথাটা রয়ে গেছে। ক্ষণিকের আলাপচারিতায় সে কথাই প্রকাশ পেল এই বীর যুবকের কথায়।

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূতের ‘বাসা’, আতঙ্কের ছবি ভাইরাল ]

ভারত-চিন যুদ্ধের সময় দেশ পরাধীন থাকা সত্ত্বেও যখন শুনেছিলেন চিন ভারত আক্রমণ করতে আসছে, তখন নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি। দেশকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন সুশীল বাবু। ১৯৪৩-এ মার্কিন সেনার হয়ে সাউথ ইস্ট এশিয়া কম্যান্ডে নায়েক পদে যোগ দিয়েছিলেন। পোস্টিং হয় বার্মাতে। সুশীলবাবু জানান, সেসময় মহারাষ্ট্রের দেউলালিতে তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। এলাহাবাদে অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছিল। পরের দিকে স্টেনগান চালানো শেখানো হয়েছিল। যুদ্ধের সময় চট্টগ্রাম বর্ডারে ডাকোটা প্লেনে করে গিয়ে সেনাবাহিনীর রেশন ও অস্ত্র পৌঁছে দিতেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেসময় দেশকে বাঁচানোর মন্ত্রে দীক্ষিত হয়েছিলেন। সুশীলবাবু জানান, দেশ স্বাধীন হওয়ার একদিন আগে হঠাৎই কৃষ্ণনগরে পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলনকে কেন্দ্র করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। সেসব ঘটনার তিনি সাক্ষী ছিলেন। এছাড়া স্বাধীন হওয়ার পরে এ রাজ্যে পুলিশের সংখ্যা কমে যায়। কারণ দেশ স্বাধীনের পর অধিকাংশ মুসলিম পুলিশই পূর্ব পাকিস্তানে চলে যাওয়ায় প্রফুল্ল ঘোষ বাংলার যুবক যুবতীদের পুলিশে যোগদানের আহ্বান জানান। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি পুলিশে যোগ দেন। দেড় বছর চাকরি করার পর হঠাৎই হায়দরাবাদে রাজনৈতিক ক্রাইসিস তৈরি হয়। তখন সেখানে আলাদা রাষ্ট্র গড়ার একটা প্রবণতা গড়ে ওঠায় দিল্লি থেকে ডাক আসে। দিল্লির ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি হায়দরাবাদ ছুটে যান। দেশের স্বাধীনতা ও অখণ্ডতা বজায় রাখার জন্য এতকিছু করার পরও আজও তিনি তাঁর প্রাপ্য সম্মানটুকু পাননি বলেই মনে করেন এই দেশপ্রেমিক। এর জন্য আজও তার মনের কোণে খেদ রয়ে গিয়েছে। সুশীলবাবু বলেন, বাম জামানায় হাওড়া জেলা সৈনিক বোর্ড থেকে ৫০০ টাকা মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করা হয়। তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী সেই ভাতা বাড়িয়ে ১৫০০ টাকা করেছেন। তার জন্য তিনি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। তার কর্মজীবনের স্বীকৃতি হিসেবে বৃটিশ কমনওয়েলথ সার্ভিস লিগ থেকে এখন সামান্য কিছু টাকা অনুদান পান। দুই ছেলে ও তাঁদের পরিবার নিয়ে পুরোনো স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে আজও রীতিমতো প্রাণোচ্ছ্বল ৯৬ বছরের মানুষটা। কিন্তু আক্ষেপ একটাই ভারত সরকারের পক্ষ থেকে আজও তাঁর কাজের কোনো স্বীকৃতি মেলেনি।

দিঘায় পর্যটকের রহস্যমৃত্যু, বাথরুমে উদ্ধার ঝুলন্ত দেহ ]

২০১৫-য় ফিমার ভেঙে যাওয়ার পরও অসম্ভব মনের জোরে আর ব্যায়ামের শক্তিতে ফের ঘুরে দাঁড়িয়েছেন সুশীলবাবু। শুক্রবার স্থানীয় মাখলা তরুণ দলের উদ্যোগে আয়োজিত এক সম্বর্ধনা সভায় সুশীলবাবুকে সম্বর্ধনা জানান ক্লাব কর্তারা। এবারের প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে স্থানীয় ক্লাবে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ক্লাব প্রাঙ্গনে জাতীয় পতাকা তুলে রীতিমতো আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছেন। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা তাঁকে যেভাবে সম্মান দিয়েছে তা যেন ভুলিয়ে দিচ্ছে অনেক আক্ষেপ। সুশীলবাবু জানান, এরকমভাবে দুঃস্থদের সাহায্যে ক্লাবগুলি যদি আরও বেশি করে এগিয়ে আসে তবেই দেশ ও দশের মঙ্গল হবে।

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

#UN
Advertisement