অভিরূপ দাস: প্রথমে অভিযোগ ছিল বকেয়া টাকা না দিলে হাসপাতাল রোগী ছাড়ছে না। সে রোগীকে ছাড়িয়ে এনে মহা ফাঁপড়ে স্বাস্থ্য কমিশন। বকেয়া বিল মেটানোর জন্য এবার কার্যত কমিশনের কাছেই হাত পাতল রোগীর পরিবার। অভিযোগ, চাহিদা বদলে যাওয়ায় অবাক স্বাস্থ্য কমিশনও। স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনের চেয়ারম্যান প্রাক্তন বিচারপতি অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, রোগীর পরিবারের কাছ থেকে হাসপাতাল ১৯ লক্ষ টাকা পায়। তাঁদের অনুরোধে যদি পাঁচ লক্ষ টাকা হাসপাতাল কমিয়েও দেয়, বাকি টাকা দিতে অপারগ রোগীর পরিবার। তারা স্বাস্থ্য কমিশনের কাছেই সাহায্য চাইছে। এদিকে রোগীর বকেয়া বিল মেটানোর মতো কোনও নিয়ম নেই স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনের আইনে।
গত ১২ জুন করোনা নিয়ে বাইপাসের ধারের মেডিকা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভরতি হন ডায়মণ্ড হারবার কোর্টের আইনজীবী অলোককান্তী ন্যায়বান। কোভিড ছাড়াও তাঁর শরীরে অন্যান্য সমস্যাও ছিল। টানা ৭৭দিন মেডিকা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে, চিকিৎসাবাবদ অলোকবাবুর বিল হয় সাড়ে ৩৫ লক্ষ টাকা! কোনওরকমে ১৬ লক্ষ টাকা দিতে পেরেছেন মধুমিতা ন্যায়বান।
এরপরই অভিযোগ আসে স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কমিশনে। অলোকবাবুর স্ত্রী মধুমিতা বলেন, “বিল বাকি থাকার জন্য হাসপাতাল আমার স্বামীকে ছাড়ছে না। সমানে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ব্যবস্থা নিন।” তড়িঘড়ি মধুমিতার স্বামীকে হাসপাতাল থেকে বের করে আনে স্বাস্থ্য কমিশন। কিন্তু তারপর বিপাকে পড়তে হয় কমিশনকেই। তাদের কাছেই অভিযোগকারীর আরজি, “একটু সাহায্য করুন।”
স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান প্রাক্তন বিচারপতী অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ওঁ বোধহয় আর্থিক সাহায্য চাইছেন। কিন্তু বকেয়া বিল মেটানোর এক্তিয়ার স্বাস্থ্য কমিশনের নেই। এদিকে টানা ৭৭ দিন হাসপাতালের বেডে শুয়ে তাঁর সারা শরীরে বেডসোর হয়ে গিয়েছে। দেখা গিয়েছে সামান্য মানসিক সমস্যাও। মেডিকা হাসপাতালে আর চিকিৎসা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো সামর্থ্য নেই ওই পরিবারের। সমস্ত বিষয় বুঝে কমিশন জানিয়েছে, মধুমিতাদেবী চাইলে সরকারি ক্ষেত্রে তাঁর স্বামীর চিকিৎসার বন্দোবস্ত করবে স্বাস্থ্য কমিশন। কিন্তু বকেয়া টাকার কী হবে? কারণ চিকিৎসায় যে গাফিলতি হয়েছে এমন অভিযোগ করেননি রোগীর পরিবার। অর্থাৎ সঠিক চিকিৎসা মিলেছে। কিন্তু বিল দিতে পারছেন না ন্যায়বান দম্পতি। হাসপাতালের পক্ষ থেকে ডা. অলোক রায় জানিয়েছেন, “স্বাস্থ্য কমিশনে অভিযোগ জানানোটা অনেকের কাছেই অভ্যেসে পরিণত হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালে আসছেন। চিকিৎসা নিচ্ছেন। তারপর বিল হলেই কমিশনে চলে যাচ্ছেন।” তবু মধুমিতাদেবীর বিষয়টি মানবিকতার সঙ্গেই দেখছে মেডিকা কর্তৃপক্ষ।
এর আগে স্বাস্থ্য কমিশনের অনুরোধে একাধিক হাসপাতাল তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে অনেক টাকাই ছেড়ে দিয়েছে। এক্ষেত্রে তাতেও খুব একটা লাভের আশা দেখছে না কমিশন। চেয়ারম্যানের কথায়, “আমরা অনুরোধ করলে হয়তো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিছু টাকা কমাবে, কিন্তু সেটুকুও দেওয়ার সামর্থ্য নেই এই পরিবারের।” চাইলে মেডিকা হাসপাতাল আইনের পথে হাঁটতেই পারে বলে জানিয়েছে কমিশন।যদিও মেডিকা কর্তৃপক্ষের আশ্বাস, তারা এমন কিছু করবেন না যাতে কোনও রোগীর পরিবার বিপাকে পড়ে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.