কৃষ্ণকুমার দাস: ছটপুজোর পুণ্যার্থীদের ধর্মাবেগকে আঘাত করে পুলিশ দিয়ে লাঠিচার্জ করিয়ে বিজেপির রাজনৈতিক ফাঁদে পা দিতে চায়নি রাজ্য সরকার। রবীন্দ্র সরোবরে ছটপুজোয় গেটের তালা ভাঙা ও হামলার পরেও কড়া ব্যবস্থা না নেওয়া নিয়ে সোমবার এমনই মন্তব্য করলেন পুরমন্ত্রী ও মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
একই সঙ্গে সুভাষ দত্ত-সহ সমস্ত পরিবেশবিদদের উদ্দেশ্যেই মেয়রের স্পষ্ট কটাক্ষ, “দিল্লি গিয়ে মামলা করে খবরের কাগজে নাম না তুলে আমাদের সঙ্গে বসতিতে বসতিতে সচেতন কর্মসূচিতে যোগ দিন। টিভি চ্যানেলে মুখ দেখিয়ে প্রকৃতিপ্রেমী না হয়ে, পাড়ায় পাড়ায় মানুষকে বোঝাতে চলুন। কারণ, সরোবর দূষণে সকলের ক্ষতি কতটা হবে, বিপদে পড়বে সবার নাতি-নাতিনিরা।” নাম না করে বিজেপির ছটপুজো নিয়ে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ভেস্তে গিয়েছে বলে এদিন সন্তোষ প্রকাশ করেন মেয়র। বলেন, “অধিকাংশ পুণ্যার্থী পাটুলি বা নোনাডাঙার মতো বিকল্প জলাশয়ে গিয়েছিলেন ছটপুজোর ব্রত পালনে। কিন্তু কিছু মানুষ ট্র্যাডিশন মেনে রবীন্দ্র সরোবরে পুজো সেরেছেন। তবে সেই মানুষের ধর্মীয় ভাবাবেগকে ধাক্কা দেওয়ার কোনও অভিপ্রায় সরকারের ছিল না।”
তবে সরোবরের গেটে পুজোর নামে একদল যুবকের নেতৃত্বে যে হামলা হয়েছে ও উন্মত্ততা চলেছে এদিন তার নিন্দা করেন, দূষণ হওয়ায় দূঃখপ্রকাশও করেন মেয়র। প্রকৃতি-প্রেম ও পরিবেশ বাঁচানো নিয়ে গোটা দেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চেয়ে বড় প্রকৃতিপ্রেমী আর কেউ নেই বলেও দাবি করেন মেয়র তথা পুরমন্ত্রী। কলকাতা পুরসভায় সাংবাদিক বৈঠকে মেয়র বলেন, “বাম সরকারের আমলে সবুজে ঢাকা রবীন্দ্র সরোবর একসময় প্রোমোটারের হাতে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল। নিজের জীবন বিপন্ন করে মমতাদি আন্দোলন করে শহরের ফুসফুস সরোবর আটকে ছিলেন। নিউটাউনের ৪০০ একরের জলাশয় আবাসন সংস্থাকে দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। জলের ধারে চড়াদামে ফ্ল্যাট বিক্রির পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু মমতাদিই সেই জায়গায় ইকোপার্ক গড়েছেন, গোটা দেশের কাছে প্রকৃতিতীর্থ এখন সেরা পরিবেশের ঠিকানা।”
মুখ্যমন্ত্রীর উদাহরণ দিয়ে রবীন্দ্র সরোবর নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ করা পরিবেশবিদদের আক্রমণ করে মেয়র বলেন, তখন কোথায় ছিলেন আপনারা? এরপরই তিনি দাবি করেন, “সুভাষ সরোবর ও রবীন্দ্র সরোবর, দু’টি ক্ষেত্রেই পুরসভা সঙ্গে সঙ্গে পরদিনই ১০০ শতাংশ সাফ করে দিয়েছে।” মাছ ও কচ্ছপ মরা নিয়েও পালটা সাফাই দিয়ে মেয়র বলেন, “লক্ষ লক্ষ মাছ রয়েছে সরোবরে। তার মধ্যে প্রতিদিনই দু-তিনটে মাছ মরে থাকে, আজও মরেছে। কচ্ছপও মরে। এমন তথ্য দিয়ে দূষণে প্রাণীরা মরেছে বলে জনমানসে অযথা বিভ্রান্তি ছড়ানো অনুচিত।” এদিন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের ১৫০-তম জন্মদিনে কেওড়াতলা শ্মশানে এক অনুষ্ঠানে যোগ দেন মেয়র। ছিলেন সাংসদ তথা চেয়ারপার্সন মালা রায়। পরে বিকেলে পুরভবনে দোতলায় দেশবন্ধুর একটি পূর্ণাবয়াব তৈলচিত্র উন্মোচন করেন ফিরহাদ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.