Advertisement
Advertisement

Breaking News

মুখ্যমন্ত্রীর ফর্মুলায় মন্ত্রিত্ব-মেয়রের দায়িত্ব সামলাব: ফিরহাদ

আর কী বললেন ভাবী মেয়র?

 Mayor Firhad Hakim hails Mamata
Published by: Tanujit Das
  • Posted:November 23, 2018 5:37 pm
  • Updated:November 23, 2018 5:37 pm  

কৃষ্ণকুমার দাস: রাজনীতি করছেন প্রায় ৪৬ বছর৷ কিন্তু একদিনের জন্যও তিনি নেত্রী বদলাননি। কোনও পরিস্থিতিতে নয়, এমনকি কোনও হাতছানিতেও নয়। ১৯৭২ সালে ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের নির্বাচনে বালিগঞ্জে পোস্টার মারার মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে হাতেখড়ি। চেতলায় যুব কংগ্রেসের হয়ে সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে বেশ কয়েকবার লাল-সন্ত্রাসের ভয়াবহ আক্রমণের শিকার হয়েছেন। কিন্তু কখনওই এক মুহূর্তের জন্য ভয়ে এক চুলও পিছিয়ে যাননি। উলটে নিউ আলিপুর কলেজে অরূপ বিশ্বাসকে বুকে আগলে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দিতে ভূমিকা নিয়েছেন। নেত্রীর ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ অত্যন্ত নিষ্ঠা ও দায়িত্বের সঙ্গে দ্রুত পালনে অদ্ভুত তৃপ্তি অনুভব করেন। এবার নেত্রী পুর-আইন সংশোধন করে তাঁকেই কলকাতার মেয়রের দায়িত্ব নিতে নির্দেশ দিতেই বাধ্য সৈনিকের হাজির।

[সাউথ সিটি মলের সামনে মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে ডাকাতি, গ্রেপ্তার ৪]

Advertisement

তিনি ফিরহাদ হাকিম, রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী। কাছের মানুষের কাছে ববি, ববিদা। মেয়র প্রার্থী নির্বাচনের ঘণ্টা চারেক আগে বিধানসভায় তাঁর সম্পর্কে স্বয়ং নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “কর্পোরেশনের কাজ জানে, চেনে ও দীর্ঘদিন পুরসভার কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত এক অভিজ্ঞ জনপ্রতিনিধি।” সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনে তৃণমূলনেত্রীর সঙ্গে দিনের পর দিন রাস্তায় থেকে আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন ফিরহাদ। ছুটির দিনে আচমকা অবসর নেওয়া মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর বাড়ি যাওয়া, বিহারে লালুপ্রসাদের সভা থেকে শুরু করে নানা সরকারি কর্মসূচিতে নিজের প্রতিনিধিত্ব ও দলীয় বহু ‘গোপন-গুরুত্বপূর্ণ’ অভিযানে নেত্রী ববিকেই ডেকে নেন। এবার মেয়রের নাম চূড়ান্ত হতেই স্বয়ং ফিরহাদ বলছেন, “নেত্রী যখন যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তখনই তাঁর সৈনিক হিসাবে সেটাই প্রথম ও প্রধান কর্তব্য বলে পালন করেছি। এবারও সপ্তাহে সাতদিনই ২৪ ঘণ্টা পরিশ্রম করে শহরবাসীর চাহিদা পূর্ণ করতে নেত্রীর ভাবনা ও নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করব। সঙ্গে থাকবেন কলকাতার কাউন্সিলররা।” মেয়র প্রার্থী নির্বাচনের পর উত্তীর্ণ থেকেই সোজা চলে যান রবীন্দ্রভবনে ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষের স্বাস্থ্যবান্ধব পুরস্কার বিতরনে। বিদায়ী মেয়র সম্পর্কে ভাবী মেয়র বলেন, “শোভন বহু বছরের বন্ধু। ওর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কিছু বলব না। চাইব সমস্যা মিটিয়ে বেরিয়ে আসুক, ফের একসঙ্গে দিদির হয়ে মিছিল করব।”

খিদিরপুরের সেন্ট থমাস স্কুলের ছাত্র ফিরহাদের বাবা ছিলেন কলকাতা ডক লেবার বোর্ডের দক্ষ ল-অফিসার। মা মনিকা মুখোপাধ্যায় শিক্ষিকা। স্কুল জীবন থেকেই পাড়ার সরস্বতী ও কালীপুজোর আয়োজনে ভূমিকা ছিল অগ্রণী। মায়ের লাল বেনারসি কেটে মণ্ডপ বানিয়ে বেধড়ক মার খেয়েছিলেন চেতলা অগ্রণীর পুজোর সভাপতি। এখনও স্ত্রী ইসমাত, তিন মেয়ে প্রিয়দর্শনী, সাব্বা, আফসাদের নিয়ে পুজোর ক’দিন মণ্ডপেই কাটান আদ্যন্ত ধর্মনিরপেক্ষ উদারচেতা মানুষ হিসাবে জনপ্রিয় ববি। মেয়র হিসাবে আগামির সাফল্য নিয়ে এদিন তাঁর মন্তব্য ছিল গীতায় শ্রীকৃষ্ণর উদ্ধৃতি “কাজ করে যাও, ফলের আশা করো না।” নেত্রীর আদর্শ উল্লেখ করেই তাঁর কথা, “মমতাদির কাছে শিখেছি, মানুষই সব, মানুষের জন্য, মানুষের পাশেই ২৪ ঘণ্টা থাকো।”

[ভাবী মেয়রকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রাক্তনকে সার্টিফিকেট রত্নার]

২০০০-এ চেতলার ৮২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রথম কাউন্সিলর। প্রথমবার ভোটে খরচের টাকা ব্যাঙ্ক থেকে তুলতে ‘মেয়ের অন্নপ্রাশনের’ কথা লিখেছিলেন ববি। ২০০৫-এ বরো ৯-এর চেয়ারম্যান এবং ২০১০-এ কলকাতা পুরসভায় রাস্তা ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মেয়র পারিষদ। ২০০৯-এ আলিপুর বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনে প্রথমবার বিধায়ক। ২০১১ ও ২০১৬-র বন্দর কেন্দ্র থেকে বিধায়ক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারে এসে পুর দপ্তর ফিরহাদের হাতে দেন। সঙ্গে কেএমডিএ-এর চেয়ারম্যান এবং তারকেশ্বর বা ফুরফুরা শরিফ উন্নয়ন পর্ষদের মতো একাধিক সরকারি উন্নয়ন সংস্থার কর্মসূচি বাস্তবায়নের দায়িত্ব। কলকাতার মা ও গার্ডেনরিচ উড়ালপুল, ভাসমান বাজার, দক্ষিণেশ্বর স্কাইওয়াক, নব আঙ্গিকে রবীন্দ্র সরোবর ও ইকো-পার্কের মতো মুখ্যমন্ত্রীর বহু স্বপ্নের প্রকল্প বাস্তবায়নে ফিরহাদের ভূমিকা আজ প্রশংসনীয়। পুরমন্ত্রীর পাশাপাশি মেয়রের কাজ কি চাপ বাড়াবে? প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই ভাবী মেয়রের উত্তর, “মমতাদিকে দেখে শিখেছি, উৎসাহ পেয়ে চলেছি। কীভাবে কাজের চ্যালেঞ্জ নিতে হয়, কীভাবে একসঙ্গে মানুষের কাজ সম্পূর্ণ করতে হয়। দিদির ফর্মূলাতেই মন্ত্রক সামলে নাগরিক পরিষেবা দেব মানুষকে।”

মেয়রের সঙ্গে ভাবী ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষের গভীর বন্ধুত্ব ১৯৮৪ থেকেই। শুধু নিজের নয়, দুই পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও। যে কোনও ঘরোয়া অনুষ্ঠানে কলকাতার ভাবী ফার্স্ট লেডি ইসমাত হাকিমের সঙ্গে ডেপুটি-ফার্স্ট লেডি ঝুমা ঘোষ এক ফ্রেমে বন্দি হননি এমন ঘটনা বিরল। তৃণমূল প্রতিষ্ঠার পর শ্যামবাজারে দলের প্রথম জনসভা আয়োজনের দায়িত্ব অতীনকেই দেন মমতা। দলকে নির্বাচন কমিশন নথিভুক্ত করার সময় জেলার জনপ্রতিনিধিদের ফর্ম পাঠানোর ক্ষেত্র নীরব-গোপন সৈনিক অতীন। এমনকী দলের নিবন্ধকরণেও প্রথম ১১ জনের মধ্যে তাঁর নাম রাখেন তৃণমূলনেত্রী। ১৯৮৫-তে প্রথম ১১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন অতীন। স্বাস্থ্য দপ্তরের মেয়র পারিষদ হিসাবে আট বছরে সাড়া ফেলা অতীন এবার ডেপুটি মেয়র।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement