গৌতম ব্রহ্ম: ছেলে হলে দেড় হাজার, মেয়ে হলে এক হাজার! ‘বিনে পয়সা’র সরকারি হাসপাতালেও প্রসূতির পরিবারের থেকে স্রেফ মিষ্টি খাওয়ার জন্য এভাবে বছরে অন্তত ৯০ লক্ষ টাকা ‘তোলা’ তুলছেন গ্রুপ ডি কর্মীরা। এই অভিযোগ ঘিরে তোলপাড় হাজরার চিত্তরঞ্জন সেবা সদন। রোগীদের অভিযোগ, বহিরাগত এক রাজনৈতিক ‘দাদা’-র মদতেই দিনের পর দিন চলছে এই ‘তোলাবাজি’।
মঙ্গলবার স্ত্রীরোগ বিভাগের চিকিৎসকদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন চিত্তরঞ্জন সেবা সদন হাসপাতালের অধ্যক্ষ ও সুপার। সেখানেই প্রসঙ্গটি নিয়ে আলোচনা হয় স্ত্রীরোগ বিভাগের প্রধান ডাক্তার নারায়ণ জানা ও সুপার ডা. বি এন রায়ের মধ্যে। নারায়ণবাবু বলেন, “এটা ভয়ংকর রোগ। এটা নিয়ে বহুবার জানিয়েছি। বহু আলোচনাও হয়েছে। সুপার বা অধ্যক্ষর সঙ্গে কথা বললেই বুঝতে পারবেন। স্থানীয় ওসিকে ডেকে গ্রুপ ডি কর্মীদের কাউন্সেলিংও করা হয়েছিল। কিন্তু কাজ হয়নি।” তাঁর আক্ষেপ, “রোগীর পরিবারকে আমরা বারবার বলি, কেউ যদি টাকা দিয়ে থাকেন তবে অভিযোগ করুন। হাসপাতাল তদন্ত করবে। কিন্তু কেউ তা করতে চান না।”
গত বছর ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে নিজে উদ্যোগ নিয়ে তিনজন তোলাবাজ গ্রুপ ডি কর্মীকে পাকড়াও করেছিলেন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)-র সর্বভারতীয় সভাপতি তথা শাসকদলের সাংসদ ডা. শান্তনু সেন। হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির বৈঠকেও এ ব্যাপারে কড়া মনোভাব নিয়েছিলেন শান্তনুবাবু। ন্যাশনালে এখন আর গ্রুপ ডি কর্মীদের ঘুষ দিয়ে ‘খুশি’ করতে হয় না প্রসূতির পরিবারকে। কিন্তু চিত্তরঞ্জন সেবা সদনে এখনও চলছে কর্মীদের জুলুমবাজি। জানা গিয়েছে, বছরে প্রায় ১০ হাজার প্রসব হয় সেবাসদনে। প্রতিটি প্রসূতি পরিবারের কাছ থেকে ‘মিষ্টি খাওয়ার’ নামে তোলা আদায় হয়। তোলার অঙ্কও বাঁধা। ছেলে হলে দেড় হাজার, মেয়ে হলে এক হাজার টাকা। কেউ দর কষাকষি করেন, কেউ আবার দিয়ে দেন। প্রসূতি পিছু গড়ে ৮০০-৯০০টাকা তোলা দিতে হয় প্রসূতিদের। না দিলে প্রসূতির ট্রলি সময়মতো পাওয়া যাবে না। লেবার রুম বা ওটি থেকে বেডে ফিরতে সময় লেগে যাবে। জুটবে দুর্ব্যবহারও। সমস্যা এড়াতে তাই বিনে পয়সার সরকারি হাসপাতালেও কর্মীদের ‘খুশি’ করাটাই দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে৷
কর্মীরা অবশ্য আদায় করা টাকার একটা অংশ এক রাজনৈতিক নেতার তহবিলে দান করেন বলে খবর। অভিযোগ, হাসপাতালের কর্মী না হয়েও ওই নেতা হাসপাতালের কর্মী সংগঠনের মাথায় বসে আছেন। ডাক্তার, নার্স ও আধিকারিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন। এই নেতাই তোলাবাজদের ত্রাতা। অনাচার ঠেকাতে এবার তাই ডাক্তার, নার্স ও আধিকারিকরা জোট বেঁধেছেন। তাঁদের বক্তব্য, অনেক হয়েছে। এবার এসব বন্ধ হোক। ‘খুশি’ করার নামে, মিষ্টি খাওয়ার নামে তোলা আদায় বন্ধ হোক।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.