সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়: হাওড়ার নামী শিবপুর বিই কলেজ মডেল স্কুলের ‘হামিকাণ্ড’-এর জেরে বহিষ্কারের সাময়িক মানসিক ‘চাপ’ কাটিয়ে এবার স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ফের নতুন করে আপসহীন লড়াইয়ের পথে নামতে চলেছেন অভিযুক্ত পড়ুয়াদের অভিভাবকরা।
লড়াইয়ের প্রথম ধাপ হিসাবে তাঁরা আজ, বৃহস্পতিবার স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাবেন রাজ্য মানবাধিকার কমিশনে। এরপর তাঁরা লিখিত অভিযোগ জানাবেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে। শিক্ষামন্ত্রী মঙ্গলবারই জানিয়েছিলেন যে এ বিষয়ে তিনি নিজেই ঘটনাটি খতিয়ে দেখবেন। প্রয়োজন মতো তিনি কথা বলবেন মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গেও। এই সবের পাশাপাশি অভিভাবকরা স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের পথে হাঁটবেন বলে জানিয়েছেন। এর জন্য তাঁরা ইতিমধ্যেই কথা বলা শুরু করেছেন আইনজ্ঞদের সঙ্গে। রাজ্য মানবাধিকার কমিশনে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নাপরাজিত মুখোপাধ্যায় জানান, “অভিযোগ এলেই আমরা বিষয়টি তদন্ত করে খতিয়ে দেখব। ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সিসিটিভির ফুটেজও আমরা চেয়ে পাঠাব। এরপর তদন্তের রিপোর্ট জমা দেব নবান্নে।”
বুধবার নেতাজি জন্মজয়ন্তীর কারণে বন্ধ ছিল শিবপুর বিই কলেজ মডেল স্কুল। আজ, বৃহস্পতিবার স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। সেই কারণে স্কুলের পঠন-পাঠন বন্ধ থাকবে। কাল, শুক্রবারও ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য স্কুল বন্ধ। স্কুল খুলবে সেই সোমবার। তাই মঙ্গলবারই দশম শ্রেণির ছ’জন অভিযুক্ত পড়ুয়ার মধ্যে চারজনের অভিভাবকই ট্রান্সফার সার্টিফিকেট নিয়ে চলে যান। তবে দু’জন অভিভাবক এখনও স্কুল থেকে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট নিতে আসেননি। এই সার্টিফিকেট নিয়ে অন্য স্কুলে ছেলেমেয়েদের ভর্তি করলেও কর্তৃপক্ষের এই অমানবিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নতুন করে লড়াই শুরু হবে বলে জানিয়েছেন অভিভাবকরা। অভিভাবকদের অভিযোগ, “ট্রান্সফার সার্টিফিকেট বা টিসি দেওয়ার আগে স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের দিয়ে জোর করে চিঠি লিখিয়ে নেয়। তাতে লেখা ছিল, আমরা স্বেচ্ছায় আমাদের ছেলেমেয়েদের অন্য স্কুলে ভর্তি করাতে চাই। তাই আমাদের হাতে টিসি দেওয়া হোক। একে দশম শ্রেণির ছেলেমেয়েদের বহিষ্কারের বিষয়ে অমানবিক সিদ্ধান্ত, অন্যদিকে স্কুল কর্তৃপক্ষের চিঠি লেখার বিষয়ে এই চাপ। এর ফলে মানসিকভাবে বিভ্রান্ত হয়ে আমরা কর্তৃপক্ষের কথা মতো টিসি নেওয়ার আগে চিঠি লিখে দিতে বাধ্য হই।” এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন শিবপুর মডেল স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভাশিস দত্ত। তিনি জানান, “কোনওভাবেই অভিভাবকদের উপর আমরা চাপ সৃষ্টি করিনি। কোনও মুচলেকাও লিখিয়ে নেওয়া হয়নি।”
[‘গণচুম্বন’ কাণ্ডে পড়ুয়াদের বহিষ্কারে বিতর্ক, পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবেন শিক্ষামন্ত্রী]
অভিভাবকদের প্রশ্ন, ১) ঘটনাটি ঘটেছে গত অক্টোবর মাসে নবম শ্রেণির ফাইনাল পরীক্ষার আগে। ঘটনা যদি সতি্য হত, তবে তখনই কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত পড়ুয়াদের বহিষ্কার না করে নবম শ্রেণির ফাইনাল পরীক্ষায় বসতে দিল কেন? তখনই যদি এই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হত, তবে পরিস্থিতি আমরা এতদিনে সামলে উঠতাম। সামনেই মাধ্যমিক পরীক্ষা। অভিযুক্ত পড়ুয়ারাও মানসিকভাবে এভাবে ভেঙে পড়ত না। প্রশ্ন ২) দশম শ্রেণির অভিযুক্ত ছ’য় পড়ুয়াকে বহিষ্কার করার মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাদের কাউন্সেলিং করানো হল না কেন? তা হলে তারা নিজেদের দোষ সংশোধন করার একটা সুযোগ পেত। প্রশ্ন ৩) বহিষ্কারের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পড়ুয়াদের কৈশোর ও ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে তাদের একটি সুযোগ দেওয়া হল না কেন?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.