বিধান নস্কর ও রমণী বিশ্বাস, দমদম ও তেহট্ট: পহেলগাঁও হামলা নিয়ে আতঙ্কের মাঝেই কাশ্মীরের আরেক সীমান্ত এলাকা উধমপুরে বৃহস্পতিবার জঙ্গিদের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে শহিদ হয়েছিলেন বাংলার জওয়ান ঝন্টু আলি শেখ। তেহট্টের ভূমিপুত্র সেই শহিদের দেহ শুক্রবার রাতে এল রাজ্যে। এদিন রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ দমদম বিমানবন্দরে কফিনবন্দি দেহ নিয়ে আসে সেনাবাহিনীর বিশেষ বিমান। সেনার তরফে বিমানবন্দরেই গান স্যালুট দেওয়া হয়।
হাজির ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, তৃণমূল নেতা সব্যসাচী দত্ত, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার। সকলেই ঝন্টুর কফিনে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বলেন, শহিদ জওয়ান বাংলার সন্তান, দেশের গর্ব! এই আবহে সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে সব্যসাচী দত্তর বলেন, ”কার কী ধর্ম জানি না। ওঁরা দেশের সেবা করে। ওঁদের জন্য আমরা সুরক্ষিত থাকি। দেশের এমন বীর সন্তানকে হারানোর বেদনা আমাদের সকলের। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।” জানা গিয়েছে, নদিয়ার তেহট্টে ঝন্টুর কফিনবন্দি দেহ পৌঁছবে শনিবার। সেখানেই হবে শেষকৃত্য। স্বজন হারানোর কান্না বুকে চেপেই তার প্রস্তুতি সারছেন পরিবারের সদস্যরা।
জম্মু-কাশ্মীরের উধমপুর জেলায় নিরাপত্তা বাহিনী ও জঙ্গিদের মধ্যে গুলিযুদ্ধে শহিদ তেহট্টের পাথরঘাটার ঝন্টু আলি শেখের বয়স মাত্র ৩৭ বছর। তিনি ৬ প্যারাশুট রেজিমেন্ট স্পেশাল ফোর্সে কর্মরত ছিলেন। তিনদিন আগেই অনন্তনাগের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হানায় ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যু হয়। তার পর থেকেই অভিযান চলছে নানা এলাকায়। উধমপুরের সুরনকোট এলাকায় জঙ্গিদের কার্যকলাপের উপস্থিতি টের পেয়ে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে তল্লাশি চালানো হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে শুরু হয় গোলাগুলি। প্রাথমিক সংঘর্ষে আহত হন সৈনিক ঝন্টু। চিকিৎসা করা হলেও প্রাণে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। এই দুঃসংবাদ পরিবারে পৌঁছতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন স্ত্রী, মা, বাবা, দাদা।
পরিবারের পাশে দাঁড়াতে শুক্রবার বিকেলে তেহট্টে যান আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। এনিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগে তাঁর বক্তব্য, ”দেশের নিরাপত্তা দিতে গিয়ে শহিদ হয়েছে ঝন্টু আলি শেখ। সে কখনো ধর্ম দেখেনি। ভারত মায়ের সন্তান হিসাবে দেশের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য জঙ্গিদের সঙ্গে লড়াই করেছে। এই মৃত্যুর পর অনেকে ধর্মের বিভেদ করার চেষ্টা করছে। জঙ্গিরা ঢুকল, অথচ জানতে পারল না সরকার! এটা সরকারের ব্যর্থতা।”
নওশাদ সেখানে থাকাকালীন পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে পৌঁছে যান কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী। তাঁর মত, ভারত সরকারের উচিত এই মুহূর্তে জঙ্গিদের নিষ্কাশন করা দেশের সুরক্ষার স্বার্থে, সরকারের উচিত অল আউট আক্রমণে যাওয়া। তবে বিরোধীদের আক্রমণের তিরে যেই থাক, এই মুহূর্তে সবচেয়ে অসহায় ঝণ্টুর পরিবার। জঙ্গিদের গুলিতে বীর সন্তানকে হারানোর বেদনা কোনও দিনই মুছবে না তাঁদের মন থেকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.