ব্রতদীপ ভট্টাচার্য: বিয়ের সবই ঠিক। কিন্তু শাস্ত্র মতে চৈত্র মাসে যে চার হাত এক হওয়া সম্ভব নয়। চৈত্রে বিয়ে মানেই নাকি অমঙ্গল। তাই পাঁজি দেখে একেবারে বৈশাখ-জৈষ্ঠ্যে নিকটতম লগ্নই বেছে নিয়েছিলেন কন্যাদায়গ্রস্ত পিতারা। কিন্তু তাতেও বাধা। এবার আরও বিপাকে পড়লেন তাঁরা। বৈশাখ-জৈষ্ঠ্যেই এ রাজ্যে বিয়ের রমরমা, তখনই আবার বাংলায় ভোট। সাত দফা ভোটের বেশ কয়েকটি তারিখে বিয়ের লগ্ন তো পড়েইছে। এমনকী বেশ কিছু ক্ষেত্রে বউভাতও পড়ছে ভোটের দিনেই। তার জেরেই নানা সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে সব অয়োজন বাতিল করে নতুন লগ্ন খুঁজতে হচ্ছে পাত্র-পাত্রীর বাড়ির লোককে।
[ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতেই চিঠিতে শুভেচ্ছাবার্তা মুখ্যমন্ত্রীর, খুশি রোগীরা]
রবিবার সকাল পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। কিন্তু বিকেলে হঠাৎ বদলে গেল পরিস্থিতি। নির্বাচন কমিশন ভোটের দিন ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গে যেন সমস্ত পরিকল্পনা ওলট-পালট হয়ে গেল বারাসতের রায় পরিবারের। ছেলের বিয়ে ২২ বৈশাখ, অর্থাৎ ৬ মে। সেদিন বনগাঁ, বারাকপুর, হাওড়া, উলুবেড়িয়া, হুগলি, শ্রীরামপুর ও আরামবাগে ভোট। পাত্রী হুগলির উত্তরপাড়ার বাসিন্দা। প্রত্যাশিতভাবেই কিছুক্ষণের মধ্যে উত্তরপাড়া থেকে ফোন আসে বারাসতের রায়বাড়িতে। “বেয়াই মশাই এবার কী হবে? ক্যাটারার ফোন করে জানাল, বিয়ের দিন কাজ করতে পারবে না। ইলেকট্রিশিয়ানও একই কথা বলল।” একই রকম পরিস্থিতি হয় নব বারাকপুরের বাসিন্দা তমালি দেবনাথের (নাম পরিবর্তিত)। ২৭ এপ্রিল অর্থাৎ বৈশাখের ১৩ তারিখ তাঁর বিয়ে। তাতে কোনও অসুবিধা নেই। স্কুল শিক্ষক পাত্রের বাড়ি পূর্ব বর্ধমানে। গোলযোগ সেখানেই। ২৯ এপ্রিল বউভাতের সমস্ত প্রস্তুতি ছিল তাঁদের। কার্ড বিলি হয়ে গিয়েছে। অনুষ্ঠান বাড়ি ভাড়া নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেদিন ভোট হওয়ায় বেঁকে বসেছেন বাকিরা। ক্যাটারার, ইলেকট্রিশয়ান থেকে শুরু করে কেউই কাজ করতে রাজি নন। পাত্রের পরিবারের লোকেদের কথায়, “কী করব বুঝে উঠতে পারছি না। যে অনুষ্ঠান বাড়িটি ভাড়া নেওয়া হয়েছে সেটি পরের কয়েক দিন টানা বুকিং আছে। এদিকে সব আত্মীয়দের নিমন্ত্রণ সারা।”
এই চার পরিবারের মতো অসহায় অবস্থা রাজ্যের বহু মানুষের। কারও ক্ষেত্রে ক্যাটারার বেঁকে বসেছে তো কারও ডেকরেটার। অনেকে নিজেরাই আতঙ্কে বিয়ের তারিখ বদলে দিচ্ছেন। সোদপুরের বাসিন্দা তারক মণ্ডল জানিয়েছেন, ভাগনির বিয়ে ছিল মে মাসের ১৯ তারিখ। দমদমে বাড়ি। পাত্র বসিরহাটের। দু’জায়গাতেই সেদিনই ভোট। ভোট মানেই তো গন্ডগোলের সম্ভাবনা। বিয়ে পিছোলে সব আয়োজন আবার নতুন করে করতে হবে ঠিকই। কিন্তু আমরা কোনও রিস্ক নিতে চাই না।” দেশের মতো রাজ্যেও সাত দফায় ভোট। এপ্রিল মাসের ১১, ১৮, ২৩, ২৯ তারিখ এবং মে মাসের ৬, ১২ ও ১৯ তারিখ ভোটগ্রহণ। পাঁজি ঘেঁটে দেখা গিয়েছে বৈশাখ মাসে আটটি বিয়ের দিন রয়েছে, এবং জৈষ্ঠ মাসে দু’টি। তার মধ্যে ভোটের দিনেই বিয়ের লগ্ন পড়েছে ৬ মে ও ১৯ মে। এছাড়া এপ্রিলের ২৬ ও ২৭ তারিখও বিয়ের লগ্ন রয়েছে।
[ চমকপ্রদ গল্প-আবদার, মাধ্যমিকের উত্তরপত্র দেখে আঁতকে উঠছেন পরীক্ষক]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.