ছবি: প্রতীকী
গৌতম ব্রহ্ম ও অভিরূপ দাস: চলে গেলেন কাঞ্চন। যার ত্রাসে কাঁপত ঝিটকা, বান্দোয়ান, বেলপাহাড়ি। ইনসাস রাইফেলের অব্যর্থ টিপের জন্য মাওবাদী রাজ্য সম্পাদকের মতো দায়িত্ব পেয়েছিলেন যিনি। সেই সুদীপ চোংদার ওরফে কাঞ্চনের শেষটাও অত্যন্ত যন্ত্রনার মধ্যে দিয়েই। আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে বন্দি ছিলেন। গভীর রাতে সেরিব্রাল স্ট্রোক হয় তার। জানতেও পারেনি কারারক্ষীরা। গত সোমবার সকালে কাঞ্চনকে লকআপে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পরে থাকতে দেখেন আলিপুর সেন্ট্রাল লকআপের কারারক্ষীরা। দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ তাকে নিয়ে আসা হয় টালিগঞ্জের এম আর বাঙুর হাসপাতালে। ব্রেন ডেথ ঘোষণা হয়েছিল আগেই। শুক্রবার দুপুর একটা কুড়িতে মৃত্যু হয় সুদীপের। ভেন্টিলেশনের সাহায্যে কৃত্রিম উপায়ে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গুলিকে সচল রাখা হয়েছিল।
‘জেলবন্দি ছেলে ঠিকভাবে চিকিৎসা পাচ্ছে না।’ মাওবাদীদের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক সুদীপ চোঙদার ওরফে কাঞ্চনের মা শেফালিকাদেবীর এমনই একটি পোস্ট গত কয়েকদিন ধরে ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে অসুস্থ হয়ে পড়েন সুদীপ চোঙদার। তাঁকে বাঙ্গুর হাসপাতালে ভরতি করেন সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ। সুদীপের মা শেফালিকা চোঙদার নাতির সাহায্য নিয়ে ফেসবুকে একটি আবেদন পোস্ট করেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় এই পোস্ট বলে পরিবারের তরফে বৃহস্পতিবার জানানো হয়েছে। ফেসবুকে কী আবেদন জানিয়েছেন সুদীপের মা? পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘‘আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে অসুস্থ রাজবন্দি সুদীপ। চিকিৎসা ও চিকিৎসকের পরিষেবা থেকে তাকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। এখন সে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে। আমি মহিলা। একজন মা হিসেবে আরেকজন মায়ের কাছে ভাল চিকিৎসার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। আমার সন্তানকে সুস্থভাবে ফিরিয়ে দিন। ইতি-মা।’’
সুদীপ চোঙদারের মা শেফালিকার বয়স ৭০ ছাড়িয়েছে। তাঁর বিশ্বাস, সোশ্যাল মিডিয়ায় এই আবেদন দেখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিছু একটা করবেন। ছেলে অসুস্থ শুনেই ব্যাকুল হয়ে পড়ছেন তিনি। ছেলেকে দেখতে কলকাতায় যাওয়ার ইচ্ছেও প্রকাশ করেছেন। সুদীপের ভাইপো কৌশিক চোঙদার বলেন, ‘‘ঠাকুমা এই লেখা ফেসবুকে দেওয়ার জন্য আমার কাছে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। বলেন, তোরা সব সময় মোবাইল, কম্পিউটার নিয়ে কী করিস। যে ভাবেই হোক এই কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানা। ঠাকুমার জন্যই এই পোস্টটি দেওয়া হয়েছে।’’ কৌশিক আরও বলেন,‘‘গত ৩ তারিখ রাতে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয় কাকা। জেল কর্তৃপক্ষ জানতেই পারেনি। পরের দিন সকাল দশটা নাগাদ তাঁকে বাঙুর হাসপাতালে ভরতি করা হয়। তবে এমন জায়গায় ভরতি করা হয়েছে যেখানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসকই নেই। হাসপাতালে বাড়ির কাউকে দেখা করতেও দিচ্ছেনা।’’
একসময় মাওবাদীদের রাজ্য সম্পাদক ছিলেন সুদীপ ওরফে কাঞ্চন। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর কামারপুকুর কলেজে বিএ পড়তে পড়তেই বাড়ি ছেড়ে চলে যান। শিলদা ইএফআর ক্যাম্পে হামলা-সহ একাধিক নাশকতায় নাম জড়ায় তাঁর। ২০১০ সালে কাঞ্চনকে কলকাতার ময়দান এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশের এসটিএফ। পরে আদালতে তিনি রাজনৈতিক বন্দির মর্যাদা পান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.