নব্যেন্দু হাজরা: এখনও করোনা সংক্রমণের ভয়ে কাঁটা কমবেশি প্রত্যেকেই। তাই হাজার রকমের আয়োজনের পরও ক্রেতার দেখা নেই রেস্তরাঁয়। ফলে রুজি রোজগারের স্বপ্ন নিয়ে প্রায় আড়াই মাস পর রেস্তোরাঁ খুলেও মাছি তাড়াচ্ছেন মালিকরা। নষ্ট হচ্ছে মাছ-মাংস-অনাজ। জায়গার হেরফেরেও ছবির বদল নেই। পার্ক স্ট্রিট থেকে সাউথ সিটি মল বা বাইপাস থেকে করুণাময়ী সাজিয়ে বসা বাতানুকূল দেশি-বিদেশি খাবারের রেস্তোরাঁয় ক্রেতার দেখা নেই। তাই দিন দশেক যেতে না যেতেই আনলকের বাজারেও একের পর এক ঝাঁপ পড়ছে হোটেল, রেস্তেরাঁ, ক্যাফের।
বহু মালিকের কথায়, দিনে এক থেকে দেড় হাজার টাকার বিক্রি হচ্ছে। কোনও কোনওদিন তাও নয়। তা দিয়ে রেস্তোরাঁয় যাবতীয় খরচ, কর্মীদের বেতন, ট্যাক্স, বিদ্যুতের বিল, এত কিছু দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে খোলার পরও রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দিচ্ছেন অনেকেই। প্রত্যেকেরই বক্তব্য, বার না খোলা পর্যন্ত এই সমস্ত বড় বড় রেস্তোরাঁ চালানো অসম্ভব। বার খুললে তবু কিছু কাস্টমার পাওয়া যাবে। মদ্যপান করতে এসে তাঁরা খাবার খাবেন। না হলে এমনিতে এই পরিস্থিতিতে কেউই বিশেষ রেস্তোরাঁর খাবার খাচ্ছেন না। ভরসা বলতে শুধুই কিছু হোম ডেলিভারি।
সরকারের দেওয়া নির্দিষ্ট স্বাস্থ্যবিধি মেনে গত ৮ জুন থেকে খোলা হয়েছিল হোটেল রেস্তোরাঁ। যে পরিমাণ আসন সংখ্যা তার ৫০ শতাংশ ক্রেতাকে বসানোর অনুমতি দিয়েছিল সরকার। কিন্তু মালিকদের কথায়, অর্ধেক আসন তো দূর, কোনও কোনও দিন একজন ক্রেতাও হচ্ছে না। ফলে লোকসানের বহর বাড়ছে। এমনিতেই ৫০ শতাংশ কর্মী দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। কিন্তু তাতেও সম্ভব হচ্ছে না চালানো। এখনও শহরের ৬০ শতাংশ রেস্তোরাঁ খোলেইনি। তবু যারা খুলেছিল তারাও আসতে আসতে বন্ধ করছেন। গত চারদিনে বাইপাস, করুণাময়ী, সাউথ সিটি পার্ক স্ট্রিট অঞ্চলে অন্তত কুড়ি থেকে পঁচিশটি রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
পার্ক স্ট্রিটের (park street) এক রেস্তোরাঁ মালিকের কথায়, ক্রেতা আসবে কী আসবে না সেটা তো আগে থেকে বোঝা সম্ভব না। কিন্তু তিনি এসে তো যা খুশি খাবার অর্ডার দিতে পারেন। রেস্তোরাঁর সুনাম রাখতে সেটা তো সাপ্লাই দিতে হবে। তাই সমস্ত রকম আয়োজন করে রাখতে হয়। মাছ-মাংস থেকে শুরু করে অন্যান্য যাবতীয় আনাজপাতি। আর এই জিনিস তো দিনের পর দিন ফ্রিজে থাকে না। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ক’দিন পরই। ক্ষতি হচ্ছে অনেক। গোলপার্কের ক্যাফে থেকে বাইপাসের নামকরা রেস্তোরাঁ। সমস্যা সেই একই। তাই বাধ্য হয়ে খোলার পরেও ঝাঁপ বন্ধ হচ্ছে অনেক দোকানের। অনেক মালিক ভেবেছিলেন পরিস্থিতি দেখে দোকান খুলবেন। বর্তমান পরিস্থিতি দেখে তাঁরা আর খোলেননি। হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া ইস্টার্ন রিজিওনের সভাপতি সুদেশ পোদ্দার বলেন, “রেস্তোরাঁ খুললেও একদম বেচাকেনা নেই। তাই অনেকেই আবার বন্ধ করে দিচ্ছেন। বার না খোলা পর্যন্ত পরিস্থিতি বদলাবে না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.