অভিরূপ দাস: করোনা (Coronavirus) সংক্রমণ বাড়তেই ওষুধ কেনার ধুম। ওষুধের পাইকারি বাজার বাগরি মার্কেটে সোমবার ছোট দোকানিদের লাইন পড়ে যায়। পেটি ভরতি ভিটামিন সি (Vitamin C) আর জিঙ্ক ট্যাবলেটের বাক্স নিয়ে গিয়েছেন বিক্রেতারা। বিকেল হতে না হতেই একাধিক ডিলারের স্টক শেষ। সকাল থেকেই শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ, হাওড়া, হুগলি, দুই চব্বিশ পরগনার দোকানগুলিতে ভিটামিন ক্যাপসুল কেনার হিড়িক ছিল সাংঘাতিক। একই সঙ্গে মাস্ক, স্যানিটাইজারের চাহিদাও এক লাফে অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। ক্যানিং স্ট্রিট, এজরা স্ট্রিট, বর্নফিল্ড লেনে স্যানিটাইজার বিক্রির লাইন পড়ে যায়।
ফের ওষুধ কেনার হুড়োহুড়ির নেপথ্যে সংক্রমণের বাড়বাড়ন্ত। রাজ্যে ফের বাড়তে শুরু করেছে করোনা সংক্রমণ। গড়ে ছ’হাজার রোগী আক্রান্ত হচ্ছেন প্রত্যহ। সোমবার রাজ্যে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৬ হাজার ৭৮ জন। সংক্রমণের শীর্ষে কলকাতা। শেষ ২৪ ঘণ্টায় কলকাতায় আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৮০১ জন। রাজ্যে এদিন কোভিড আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। কেন ভিটামিন ট্যাবলেট কিনতে হুড়োহুড়ি? দোকানিরা বলছেন, নিয়মিত ভিটামিন সি ট্যাবলেট খেলে করোনার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে-এমন ধারণার বশবর্তী হয়েই ওষুধ কেনার ঢল।
সম্প্রতি কোভিড চিকিৎসায় নতুন প্রোটোকল তৈরি করেছে রাজ্যের স্বাস্থ্যদপ্তর। পুরনো প্রোটোকলে জিঙ্ক ট্যাবলেটের উল্লেখ থাকলেও নতুন প্রোটোকলে তা নেই। লেখা রয়েছে ভিটামিন সি ক্যাপসুল আর ল্যাক্সেটিভ ট্যাবলেটের কথা। রাজ্যের জনস্বাস্থ্য আধিকারিক অনির্বাণ দলুইয়ের কথায়, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া অনুচিত। আমজনতা হুজুগে পড়ে ওষুধ কিনছেন। ফলে অনেক সময় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীরা ওষুধ পাচ্ছেন না। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, অনেকে বাড়িতে বাক্স বাক্স ওষুধ মজুত করে রাখছেন। এদিনও একাধিক দোকান থেকে দশটা, বারোটা করে ভিটামিন সি ক্যাপসুলের প্যাকেট কিনে নিয়ে গিয়েছেন ক্রেতারা। শেষে বাধ্য হয়েই কিছু দোকান সিদ্ধান্ত নেয়, একজনকে একটির বেশি ওষুধের স্ট্রিপ বিক্রি করা হবে না।
জনস্বাস্থ্য আধিকারিক অনির্বাণ দলুই জানিয়েছেন, ১৮ হাজারের উপর মানুষ এই মুহূর্তে করোনা আক্রান্ত হয়ে হোম আইসোলেশনে রয়েছেন। তাঁদের ওষুধের প্রয়োজন। ভিটামিন ক্যাপসুল খেলে করোনা আটকানো যাবে, এমন ধারণাকে নস্যাৎ করেছেন চিকিৎসকরা। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বিশ্বাসের পরামর্শ, ভিটামিন ক্যাপসুল খাওয়ার পরিবর্তে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ শ্রেয়। ভিটামিন ক্যাপসুল খেলে রাতারাতি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যাবে, এমন ধারণা ভ্রান্ত। সোমবার রাজ্যে কোভিড টেস্ট কম হয়েছে। রবিবার যেখানে ৩৮ হাজার মানুষের কোভিড টেস্ট হয়েছিল, সেখানে সোমবার তা দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩১ হাজারে। সোমবার প্রতিটি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে নির্দেশ গিয়েছে দ্রুত কোভিড টেস্ট বাড়ানোর। যেখানে বলা হয়েছে প্রতিটি জেলায় আরটি পিসিআর আর র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট মিলিয়ে দৈনিক ন্যূনতম ৫৫ হাজার টেস্ট করতে হবে। এখন টেস্ট হচ্ছে গড়ে ৩৫ হাজারের আশপাশে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.