ছবি: প্রতীকী
স্টাফ রিপোর্টার: বঙ্গ বিজেপির (BJP) মধ্যে শোরগোল। দাবি মতো ৭ লক্ষ টাকা দিতে না পারায় দলের এক মন্ডল সভাপতিকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। উত্তর কলকাতা শহরতলি সাংগঠনিক জেলার ৫ নম্বর মন্ডল কমিটির সদ্য অপসারিত সভাপতি উত্তম সাউয়ের বিস্ফোরক এই অভিযোগকে ঘিরে চাঞ্চল্য পড়ে গিয়েছে গেরুয়া শিবিরে।
দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে লেখা চিঠিতে উত্তম অভিযোগের আঙুল তুলেছে কলকাতা উত্তর শহরতলি জেলা বিজেপির সভাপতি অরিজিৎ বক্সী ও জেলার এক নেত্রীর বিরুদ্ধে। তাঁর অভিযোগ, ওই জেলা নেতারা রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়ের নামও নিয়েছে। জগন্নাথ নাকি এ ব্যাপারে জেলা সভাপতিকে চাপ দিয়েছিলেন। এই অভিযোগপত্র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumder) ও রাজ্য সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তীকে দিয়েছেন অপসারিত ওই মন্ডল সভাপতি। আর এই অভিযোগের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই মঙ্গলবার বিকেলে বিজেপির রাজ্য দপ্তরে ডেকে পাঠানো হয় উত্তম সাউকে।
পার্টি অফিসে উত্তমের সঙ্গে কথা বলেন দলের দুই রাজ্য সংগঠন সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তী ও সতীশ ধনদ। নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে এসে এদিন সন্ধ্যায় আরও বিস্ফোরক অভিযোগ করেন উত্তম সাউ। বলেন, “আমি জেলা সভাপতি অরিজিৎ বক্সী ও জেলার এক সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে চিঠি দিয়েছিলাম। তারা বলেছিল মন্ডল সভাপতির পদ রাখতে গেলে ৭ লক্ষ টাকা দিতে হবে। আমি না দিতে পারায় ৫ ফেব্রুয়ারি জেলার কার্যকারিণী বৈঠকের দিন আমায় মন্ডল সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।” এরপরেই উত্তমের অভিযোগ, কোনও সুরাহা হয়নি উলটে এদিন পার্টির রাজ্য দফতরে তাঁকে নেতৃত্ব অভিযোগপত্রটি ছিঁড়ে ফেলতে বাধ্য করে।
এদিকে, কলকাতা উত্তর শহরতলি জেলা বিজেপির সভাপতি অরিজিৎ বক্সী সংবাদ মাধ্যমকে জানান, “এই বিষয়ে কিছু জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি।হতে পারে কোনও প্ররোচনায় পা দিয়ে উনি এরকম করেছেন। চিঠি যদি দিয়ে থাকেন তার যা দলীয় প্রক্রিয়া হওয়ার কথা তাই হবে।” রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য-র বক্তব্য, “বিজেপিতে এরকমভাবে কিছু হয় না। দলকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। চিঠি কারা বাইরে বের করল সেটা দল খতিয়ে দেখছে।” বিজেপির কলকাতা উত্তর শহরতলি জেলার রাজারহাট-নিউটাউন এলাকায় দলের ৫ নম্বর মন্ডলের সদ্য অপসারিত সভাপতি উত্তম সাউ চিঠিতে অভিযোগ করেছেন, জেলা সভাপতি ও জেলা সাধারণ সম্পাদক তাঁর কাছে প্রথমে ৭ লক্ষ টাকা দাবি করেন।
অভিযোগ, রাজ্য বিজেপির এক সাধারণ সম্পাদকের চাপেই নাকি ওই টাকা দাবি করা হয়েছে। উত্তম চিঠিতে লিখেছেন, “ব্যবসায় আর্থিক ক্ষতি হওয়ায় ও পরিবারিক আর্থিক অনটনের জন্য ওই টাকা দিতে ব্যর্থ হই। টাকার দাবির প্রবল চাপ পূরণে আমি আত্মহত্যার কথাও ভেবেছিলাম। পরবর্তী কালে তারা কমিয়ে ৫ লক্ষ টাকা দাবি করেন। এই টাকা দিতেও আমি ব্যর্থ হই। তারপরই আমায় দল থেকে বিতাড়ণের হুমকি দেওয়া হয়। এরপর গত ৫ ফেব্রুয়ারি উত্তর শহরতলি জেলার কার্যকারিণী বৈঠকের দিন রাতে জানতে পারি মন্ডল সভাপতি পদ থেকে আমায় অপসারিত করা হয়েছে।”
বিজেপির এই মন্ডলের নেতার অভিযোগ, নেতাদের দাবি মতো টাকা দিতে না পারায় আমায় অন্যায়ভাবে অপসারণ করা হয়েছে। একইসঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, দলের প্রতি আনুগত্য দেখাতে গেলে আমার কাজ বড়, নাকি টাকা? এদিন রাজ্য বিজেপি দফতরের সামনে উত্তম সাউ বলেন, আমার জেলা সভাপতি ও জেলা নেত্রী রাজ্য সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়ের নাম নিয়েছিলেন। তাই আমি চিঠিতে ওরা বলেছে বলে সেই বিষয়টি উল্লেখ করেছি। এই ঘটনাটি নিয়ে অভিযোগপত্রের ছবি তুলে ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়ে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বকে কাঠগড়ায় তুলেছে ‘সেভ বেঙ্গল বিজেপি’ সংগঠন।এদিকে, দিলীপ ঘোষ, সুকান্ত মজুমদারদের তিনি শ্রদ্ধা করেন বলে এদিন জানান উত্তম সাউ।
অপসারিত ওই মন্ডল সভাপতির আরও অভিযোগ, “এখন অনেকে দলের আদর্শকে নষ্ট করছে। পার্টিতে এইধরণের দুর্নীতি বন্ধ হোক। পার্টির সাংগঠনিক শক্তি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফাঁপা হয়ে গিয়েছে ভিতরটা। জেলা পার্টিতে অনৈতিক কাজ চলছে।” বঙ্গে বিজেপি দলের সংগঠনের বেহাল অবস্থা যখন বারবার সামনে আসছে, একের পর এক বিধায়ক যখন দল ছেড়ে তৃণমূলে চলে যাচ্ছে, দলের মধ্যে তৈরি হয়েছে আন্দোলন বিমুখতা। তখন মন্ডল সভাপতি সরানো নিয়ে ওঠা আর্থিক অভিযোগ প্রকাশ্যে আসায় নতুন করে অস্বস্তিতে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.