ছবি: প্রতীকী
কলহার মুখোপাধ্যায়, বিধাননগর: সোশ্যাল সাইটে ভুয়ো পরিচয় দিয়ে লোক ঠকানো নতুন কিছু নয়। তবে নিজেকে খোদ পুলিশের অফিসার বলে পরিচয় দিয়ে প্রতারণার নজির এখনও তেমন নেই। এবার সেটাই হল। এভাবেই প্রতারণার শিকার হয়েছেন বছর পঁয়ত্রিশের এক গৃহবধূ।
ঘটনাটি লেকটাউন থানা এলাকার। ফেসবুকের আলাপ-পরিচিতির সূত্রে প্রতারকের ফাঁদে পা দিয়ে প্রায় সর্বস্বান্ত হয়েছেন তিনি। শেষপর্যন্ত সবটা বুঝতে পেরে পুলিশেরই দ্বারস্থ হন। লেকটাউন থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই মহিলা।
পুলিশ কর্তাদের মতে, ফেসবুকে ফাঁদ পেতে তাঁকে যেভাবে জালে জড়ানো হয়েছে, তা রীতিমতো চমকপ্রদ। এর পিছনে পাকা মস্তিষ্ক রয়েছে বলে অনুমান তদন্তকারীদের। ঘটনাটা কী? মাসকয়েক আগে ফেসবুকে এই গৃহবধূর সঙ্গে আলাপ রূপম মণ্ডল নামে এই যুবকের। জানা গিয়েছে, ওই যুবক কলকাতা পুলিশের এক অফিসার বলে নিজের পরিচয় দিয়েছিল। পরে তদন্তে নেমে পুলিশ অবশ্য জানতে পারে রূপমের নাম এবং পরিচয় দুটোই ভুয়ো। এই পরিচয় ব্যবহার করেই সে ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলেছিল। “ছেলেটি হ্যান্ডসাম, ব্যবহারও বেশ ভাল।” – একথা পুলিশকে জানিয়েছেন ওই মহিলা। এই কারণেই তিনি যুবকের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেন বলে কবুল করেছেন ওই গৃহবধূ।
সোশ্যাল সাইটে প্রাথমিক মুগ্ধতাটুকু গোপন করেননি লেকটাউনের অভিযোগকারী মহিলা। আর সেই ইঙ্গিত পেয়েই ফাঁদ পাতার কাজ শুরু করে দেয় রূপম। বেশ কয়েকমাস ধরে বার্তা চালাচালির পর, শুরু হয় ফোনে কথা বলা। রূপমের মিষ্টি কথার জালে আরও জড়াতে থাকেন মহিলা। এই পর্যায় থেকে সাক্ষাৎপর্ব পর্যন্ত গড়াতে বেশি সময় লাগেনি। তারপরই শুরু হয় রূপমের আসল খেল, বলছেন এক তদন্তকারী।
দিনকয়েক ঘোরাঘুরির পর ওই গৃহবধূকে প্রেম নিবেদন করে রূপম। বিয়ের প্রস্তাবও দেয়। সেই সম্পর্ক তৈরিতে মহিলা রাজি না হলে আত্মহত্যার হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। অবস্থা এমন দিকে গড়ায় যে নিজের শিশুকন্যা ও স্বামীকে ছেড়ে ছেলেটির সঙ্গে ঘর বাঁধতে রাজি হয়ে যান ওই গৃহবধূ। পালিয়ে বিয়ে করার পরিকল্পনা পাকা করে গত শনিবার সকালে লেকটাউনের বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়া স্থির করেন তিনি। সেদিন সকালে তাঁর স্বামী মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরন। তারপর নিজের সমস্ত গয়নাগাঁটি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন ওই গৃহবধূও। পুলিশের কাছে মহিলা জানিয়েছেন, সোনা-রূপো মিলিয়ে লাখ পাঁচেক টাকার গয়না নিয়ে রূপমের কাছে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছিলেন তিনি।
এরপরের ঘটনা সিনেমার মতো অনেকটা। লেকটাউনের একটি রাস্তায় বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়েছিল রূপম। মহিলা আসার পর তাঁকে নিয়ে রওনা দেয়। মহিলা পুলিশকে জানিয়েছেন, কলকাতার অনেক রাস্তায় ঘোরাঘুরি করেন তাঁরা। প্রায় ঘণ্টা চারেক পর আনন্দপুরে বাইপাসের ধারে বাইক থামায় রূপম। তার মোবাইলে একটি ফোন এসেছিল। কথোপকথনের পর সে জানায়, তাকে মিনিট দশেকের জন্য একটু অন্যত্র যেতে হবে, জরুরি দরকার। মহিলাকে রাস্তার ধারে দাঁড় করিয়ে বাইক স্টার্ট দেয় সে। তারপর বলে, ‘ব্যাগটা আমাকে দাও। গয়না নিয়ে একা এভাবে দাঁড়িয়ে থাকা ঠিক হবে না। মহিলা সরল মনে ৫ লক্ষ টাকার গয়নাভরতি ব্যাগটি তুলে দেন যুবকের হাতে। তারপর কয়েকঘণ্টা কেটে যাওয়ার পরও রূপমের দেখা নেই। তার ফোনও বন্ধ। সন্ধে অবধি ওইভাবেই রাস্তায় তিনি অপেক্ষা করেন। তারপর বাড়ির পথ ধরেন। লেকাটউনে ফিরে স্বামীকে সব কথা খুলে বলেন। শেষে লেকটাউন থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।
তদন্তে নেমে লেকটাউন থানার পুলিশ বারুইপুর থানার একটি মামলার কথা জানতে পারে। যাতে মারামারিতে অভিযুক্ত এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেই ব্যক্তিই রূপম। তাকে রিমান্ডে পাওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছে লেকটাউন থানার পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.