শুভঙ্কর বসু: সরকার বেতন বন্ধ করেনি। অথচ দেড় বছর হল মাইনে পাচ্ছেন না শিক্ষক। এমনকী তাঁকে স্কুলেও ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। অন্য সম্প্রদায়ভুক্ত হওয়ায় প্রতিনিয়ত তাঁর উপর অকথ্য মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে। এমনই চাঞ্চল্যকর অভিযোগে এবার কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন বারাসত ২ নম্বর ব্লকের গোলাবাড়ির পল্লিমঙ্গল হাই স্কুলের ইংরেজির শিক্ষক রাজু জানা। স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে এর কোনও সদুত্তর না এলে প্রধান শিক্ষককে আদালতে হাজিরা দিয়ে বিষয়টির ব্যাখ্যা দিতে হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে আদালত।
বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর এজলাসে ওই শিক্ষক নিজেই সওয়াল করে বলেন, ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার্স এডুকেশন বা এনসিটিই-র তরফে শিক্ষকদের বিএড কোর্স বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু এহেন একটি জরুরি কোর্স পড়তে চাওয়ায় তিনি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের রোষের মুখে পড়েছেন। রেগুলার কোর্সে বিএড পড়ার জন্য একটি কলেজে ভরতি হওয়ার পর ২০১৮-র ডিসেম্বর মাস থেকে তাঁর মাইনে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
শুধু তাই নয়, শিক্ষকের অভিযোগ, তিনি অন্য সম্প্রদায়ভুক্ত হওয়ায় স্কুলে থাকাকালীন তাঁর উপর প্রতিনিয়ত মানসিক নির্যাতন চালানো হত। সম্প্রদায় তুলে খোটা দেওয়ার পাশাপাশি তোলা হিসেবে তাঁর থেকে টাকাও চাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। এমনকী পুলিশে জানিয়েও কোনও কাজ হয়নি বলে দাবি করেছেন তিনি। প্রধান শিক্ষকের শর্ত না মানায় গত বছরের জুলাই মাস থেকে তাঁর স্কুলে ঢোকাই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা স্কুল পরিদর্শকের আইনজীবী তুলসীদাস রায়ের কাছে বিষয়টি জানতে চান বিচারপতি চক্রবর্তী। তুলসীবাবু অবশ্য স্পষ্ট জানিয়ে দেন, “রাজ্য সরকার তথা স্কুল পরিদর্শকের তরফে ওই শিক্ষকের বেতন বন্ধ করা হয়নি। স্কুল কর্তৃপক্ষই এ ব্যাপারে জবাব দিতে পারবে।” যদিও মামলায় পক্ষ করে নোটিস দেওয়া হলেও শুনানিতে স্কুলের তরফে কোনও প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। এই পরিস্থিতিতে কেন ওই শিক্ষকের বেতন বন্ধ করা হয়েছে ও তাঁকে কী কারণে স্কুলে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না, স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে তার জবাব তলব করেছেন বিচারপতি চক্রবর্তী। তিন সপ্তাহ পর ফের মামলার শুনানি। ওই দিনও স্কুলের তরফে কোনও প্রতিনিধি উপস্থিত না হলে প্রধান শিক্ষককে আদালতে সশরীরে হাজিরা দিয়ে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিচারপতি চক্রবর্তী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.