ছবি: প্রতীকী
অর্ণব আইচ: “মা, মনের মানুষ খুঁজে পেয়েছি। এবার আমি তার সঙ্গেই থাকব।” যৌনকর্মীকে ভালবাসার কথা ফোনের মাধ্যমে এভাবেই মা’কে জানাচ্ছিলেন যুবক। শয্যাসঙ্গিনীর তাতে আপত্তি ছিল। তিনি আবার “ফেলো কড়ি, মাখো তেলে’ বিশ্বাসী। রাতের সঙ্গী মাকে ফোন করছেন দেখেই চূড়ান্ত বিরক্ত হন। খদ্দেরের মোবাইল ফোনটি কেড়ে দোতলা থেকে ছুড়ে নিচে ফেলে দেন। মোবাইল বাঁচাতে দোতলার ছাদ থেকেই ঝাঁপ দেন এক যুবক। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভরতি করা হয়।
রবিবার উত্তর কলকাতার বড়তলা থানা এলাকার নীলমণি মিত্র স্ট্রিটে ঘটেছে ঘটনাটি। ওই যুবককে উদ্ধার করেন বড়তলা থানার আধিকারিকরা। পুলিশ জানিয়েছে, শনিবার রাতে এই ঘটনার সূত্রপাত। সোনাগাছির নীলমণি মিত্র স্ট্রিটের এক যৌনকর্মীর বাড়িতে গিয়েছিলেন ওই যুবক। দক্ষিণ দিনাজপুরের বাসিন্দা ওই যুবক কলকাতায় কাজ করেন। এর আগেও তিনি ওই দোতলা বাড়ির উপরের তলার বাসিন্দা ওই যৌনকর্মীর কাছে গিয়েছেন। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, কখনও এক বা দু’রাত কাটাতেনও সেখানে।
জানা গিয়েছে, শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত যুবক মদ্যপান করেন। যৌনপল্লির ওই বাড়িটিতেই রাত কাটান। যখন ঘুম ভাঙে, তখন বেলা গড়িয়েছে। ওই যৌনকর্মীর পাশের বাড়িতেই পরিবার নিয়ে থাকেন এক ব্যবসায়ী। নিতাই রায় নামে ওই ব্যবসায়ী জানান, সকাল দশটা কুড়ি মিনিট নাগাদ তিনি বাথরুম থেকেই প্রচণ্ড জোরে একটি শব্দ শুনতে পান। তাড়াতাড়ি বাথরুম থেকে বেরিয়ে দেখেন, তাঁদের বাড়ির চত্বরেই একটি অ্যাসবেসটসের ছাদ ভেঙে নিচে পড়ে রয়েছেন যুবক। এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে বড়তলা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়।
হাসপাতালে ভরতি হওয়ার পর যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে ওই যুবক পুুলিশকে জানান, ওই বাড়ির এক যৌনকর্মীর কাছে এর আগেও এসেছেন তিনি। কিন্তু কয়েকবার যাতায়াতের পরই যৌনকর্মীর প্রেমে পড়ে যান যুবক। তাই দু’একবার রাতও কাটান যৌনকর্মী ওই যুবতীর সঙ্গে। এর মধ্যে বাড়ির লোকেরাও যুবককে বিয়ের জন্য চাপ দেন। তাঁর জন্য মেয়ে দেখেছেন বলে জানান। কিন্তু যুবক যে ওই যৌনকর্মীর প্রেমেই পাগল। সম্প্রতি তিনি যৌনকর্মীকে জানান, তিনি তাঁর প্রেমে পড়েছেন। তাঁকে বিয়ে করতে চান। কিন্তু যুবতী তাঁকে মুখের উপর ‘না’ বলে দেন। পেশাদার ওই যৌনকর্মী কারও স্ত্রী হতে চাননি।
কিন্তু যুবক নাছোড়বান্দা। তিনি যৌনকর্মীকে ভালবেসে যেতে চান। ‘প্রেমিকা’ নারাজ হওয়ায় সারারাত ধরে মদ্যপানও করেন। সকালে ওঠার পরও নেশাচ্ছন্ন ছিলেন। তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে লাগোয়া ছাদে গিয়ে যৌনকর্মী ‘প্রেমিকা’র সামনেই মাকে ফোন করেন। সরাসরি মাকে জানান, তিনি ‘মনের মানুষ’ খুঁজে পেয়েছেন। কিন্তু মাকে ফোন করতে দেখেই রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন যৌনকর্মী। মোবাইল কেড়ে নিয়ে ছুড়ে ফেলেন পাশের বাড়িতে। তারপরই ঘটে এই ঘটনা।
পুলিশের এক আধিকারিক জানান, সরাসরি না পড়ে অ্যাসবেসটসের ছাদ গর্ত করে নিচে পড়ার ফলে কোনওমতে প্রাণে বেঁচে যান যুবক। যদিও তাঁর কোমরে গুরুতর চোট লেগেছে। আঘাত রয়েছে হাত ও পায়েও। প্রথমে পুলিশ তাঁকে এলাকার একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যায়। এর পর তাঁকে ভরতি করা হয় মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। সেখানেই তাঁর চিকিৎসা চলছে। পুরো ঘটনাটির তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.