Advertisement
Advertisement

Breaking News

মাথা এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিয়েছে লোহার রড, জটিল অস্ত্রোপচারে প্রাণ বাঁচল যুবকের

ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন পরিবারের লোকেরাও।

Man impaled in head saved by Kolkata doctors
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:May 30, 2018 12:06 pm
  • Updated:May 30, 2018 12:06 pm  

গৌতম ব্রহ্ম: কপাল এফোঁড়-ওফোঁড় করে বেরিয়ে গিয়েছে আস্ত একটি রড। গাড়িতে মহম্মদ তারেককে দেখে চমকে গিয়েছিলেন দুঁদে পুলিশ অফিসাররাও। বাঁচবে তো? সংশয়ে ছিলেন তাঁরা। কিন্তু, ওই যে কথায় বলে না, রাখে হরি মারে কে! এক্ষেত্রে তেমনটাই হল। জটিল অস্ত্রোপচার করে বছর চব্বিশের ওই যুবককে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনলেন শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা। আপাতত হুইলচেয়ারে ভরসা হলেও, যথাযথ শুশ্রুষা ও চিকিৎসায় মহম্মদ তারেক পুরোপুরি সেরে উঠবেন বলে আশা করছেন চিকিৎসকরা। দিন দশেক আগে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন তিনি।

[সিপিএমের অফিস ভাঙচুর, অভিযোগের তির শাসকদলের দিকে]

Advertisement

পার্ক সার্কাসের সিআইটি রোডের বাড়ি মহম্মদ তারেকের। গত ২৮ এপ্রিল গভীর রাতে গাড়ি করে বন্ধুদের সঙ্গে বেরিয়েছিলেন তিনি। চালকের পাশের আসনে বসেছিলেন তারেক। কেষ্টপুরে উড়ালপুলে ওঠার মুখে ডিভাইডারে ধাক্কা মেরে উলটে যায় গাড়িটি। তারেকের কপাড় ফুঁড়ে ঢুকে যায় ডিভাইডারে রেলিংয়ের একটি লোহার রড। রডটির অপরপ্রান্তটি গাঁথা ছিল সিমেন্টে। অল্পবিস্তর চোট পান বাকিরাও। কিন্তু, বছর চব্বিশের ওই যুবকের অবস্থা দেখে হতবাক হয়ে যান সকলেই। পুলিশেরও কিছু করার ছিল না। শেষপর্যন্ত, খবর পাঠানো হয় মানিকতলা দমকলকেন্দ্রে। গ্যাস কাটার দিয়ে রড কেটে তারেককে যখন বের করে দমকলকর্মীরা, ততক্ষণে জ্ঞান হারিয়েছেন তিনি। রক্তাক্ত ওই যুবককে ভরতি করা হয় বাইপাস লাগোয়া একটি বেসরকারি হাসপাতালে। হাসপাতালের এর্মাজেন্সি বিভাগের চিকিৎসক তারক দাস বলেন, ‘এমন দৃশ্য সিনেমাতেই দেখা যায়। রড কপাল দিয়ে ঢুকে মাথার পিছন দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছে। এমন অবস্থায় অনেকের ভয়েই হার্ট ফেল হয়ে যায়।‘  মহম্মদ তারেকের বাঁচার আশার ছেড়ে দিয়েছিলেন পরিবারের লোকেরাও। কিন্তু রোগীর ওই অবস্থা দেখেও ঘাবড়ে যাননি ব্রেন সার্জেন বিনোদকুমার সিংঘানিযা। বরং পরিবারের লোকেদের তিনি আশস্ত করেন, মাথা থেকে রড বের করতে পাঁচ মিনিট লাগবে। দেখতে হবে, মাথার ভিতরের কলকবজা কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আঘাত গুরুতর না হলে ভয়ের কিছু নেই।

[রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের জন্য সুখবর, চলতি বছরেই বাড়তে পারে বেতন]

শুরু হয়ে যায় অপারেশনে তোড়জোড়। কিন্তু, তাতেও সমস্যা! দেড় ইঞ্চি চওড়া, সাড়ে তিন ফুট লম্বা রড সমেত রোগীকে সাধারণ সিটি স্ক্যান মেশিনে ঢোকানো যায়নি। বড় আকারের বিশেষ মেশিনের বন্দোবস্ত করতে হয়। স্ক্যানে ধরা পড়ে, মস্তিষ্কের অন্তত দশ শতাংশ টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।  ক্লিপ দিয়ে মাথার ভিতরের রক্তক্ষরণ বন্ধ করে আড়াই ঘণ্টা ধরে চলে অস্ত্রোপচার। অস্ত্রোপচারের পর দু’দিন ভেন্টিলেটর, পাঁচদিন আইসিইউ। খাওয়া-দাওয়া রাইলস টিউবে। একদিন আবার জ্বরও আসে। ব্রেন সার্জেন বিনোদকুমার সিংঘানিয়া জানিয়েছেন, ‘রাস্তার নোংরা রড ঢুকে গিয়েছিল মাথায়। ম্যানিনজাইটিস হয়েছিল। তবে আমরা সতর্ক ছিলাম। এ লড়াইয়ে হার মানা যাবে না।‘ এখন বিপন্মুক্ত বছর চব্বিশের মহম্মদ তারেক। তবে বাকশক্তি হারিয়েছেন তিনি। চিকিৎসকরা অবশ্য জানিয়েছেন, স্পিচ থেরাপির সাহায্যে ফের বাকশক্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব। কিন্তু, মাথায় এভাবে রড বিঁধে যাওয়ার পর কীভাবে বাঁচানো গেল ওই যুবককে? বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, এক্ষেত্রে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে আনাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আর বিঁধে যাওয়ার জিনিসটি যেমন আছে, তেমনি থাকতে দিতে হবে। তারেকের ক্ষেত্রে দুটি শর্তই পূরণ করতে করা গিয়েছিল। শুধু রোগীকে বাঁচিয়ে তোলাই নয়, পরিবারের আর্থিক অবস্থার কথা চিন্তা করে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ওই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মহম্মদ তারেকের পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন, বিলের প্রায় ৯ লক্ষ টাকা মকুব করে দেওয়া হয়েছে।

[শহরে পথের শাসন মানতে পরামর্শ দেবে সুপারহিরো ‘ডেডপুল’]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement