অভিরূপ দাস: করোনা আবহে নজির গড়ল কলকাতার আর এন টেগর হাসপাতাল। এই সংকটের দিনেও সফলভাবে কিডনি ও লিভার প্রতিস্থাপন করে রোগীকে নতুন জীবন দান করলেন চিকিৎসকরা। পূর্ব ভারতে এই প্রথম একসঙ্গে কিডনি ও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করে মুমুর্ষু রোগীর প্রাণ রক্ষার বিরল ঘটনা ঘটল।
গত বছর জানুয়ারি থেকেই কিডনির জন্য ডায়ালিসিস চলছিল মিজোরামের আইজলের বাসিন্দা লালরিনঘেটার। মাস ছয়েক আগে আবার দোসর হয় লিভারের সমস্যা। দিন কয়েক আগেই চিকিৎসকরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, হাতে আর মাত্র সাতদিন সময় রয়েছে। কিডনির সমস্যা স্টেজ ফাইভে পৌঁছে গিয়েছে। এবার জীবন বাঁচাতে গেলে মিরাকল ছাড়া উপায় নেই। সেই মিরাকলই ঘটালেন পুর্তদপ্তরের কর্মী লালরিনঘেটার ভাই-বোনেরা। বাবা মারা যাওয়ার পর কোলে-পিঠে করে তাঁদের বড় করে তোলার প্রতিদান হিসেবে নতুন জীবনই উপহার পেলেন তিনি। ভাই লালরিনপুইয়া নিজের একটি কিডনি দিলেন এবং বোন লালরিনওয়ামি লিভার দিয়ে দাদার প্রাণ রক্ষা করলেন।
কিডনি প্রতিস্থাপক বিশেষজ্ঞ ডা. ডিএস রায়, লিভারের অসুখের বিষেশজ্ঞ ডা. এনপি বহিজার এবং লিভারের শল্যচিকিৎসক ডা. সঞ্জয় গজার হাত ধরেই নতুন জীবন ফিরে পান লালরিনঘেটা। মঙ্গলবার দীর্ঘ সাড়ে ১৮ ঘণ্টার সফল অস্ত্রোপচারের পর প্রথমে ৪৪ বছরের রোগী এবং তাঁর ভাই ও বোনকে আইসিইউতে রাখা হয়েছিল। পরে লালরিনপুইয়া ও লালরিনওয়ামিকে আইসিইউ’র বাইরে আনা হয়। তাঁরা সকলেই এখন স্থিতিশীল বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। করোনা আবহে এমন জটিল প্রতিস্থাপন সফলভাবে করতে পারায় সন্তুষ্ট তাঁরাও।
পেশায় স্কুল শিক্ষক লালরিনপুইয়া বলছিলেন, “অনেক অল্প বয়সে আমরা মা-বাবাকে হারিয়েছি। দাদাই মানুষ করেছে। ও-ই আমাদের কাছে বাবার মতো। তাই দাদাকে কিডনি দিতে হবে শুনে দ্বিতীয়বার ভাবিনি।” এমন কঠিন দিনে দাদার সঙ্গে লিভার ‘ভাগ’ করে নিতে পেরে খুশি বোন লালরিনওয়ামিও। বলছিলেন, “জানতামই না, দাদার অসুস্থতা এতটা জটিল পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। ভাই-ই জানাল লিভার লাগবে। কিন্তু ইচ্ছে থাকলেই তো দেওয়ার উপায় নেই। তবে ডাক্তাররা যখন জানালেন দাদার সঙ্গে ব্লাড গ্রুপ ম্যাচ হয়েছে, তখন স্বস্তি পেলাম। বাবার মতো দাদার জন্য যে কিছু করতে পারলাম, এটা ভেবেই ভাল লাগছে।” করোনা কালে এই অস্ত্রোপচার নিঃসন্দেহে চিকিৎসার সাফল্যের নিদর্শন হয়ে রইল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.