কলহার মুখোপাধ্যায়: হীরের নকল গয়না বিক্রি করে টাকা হাতানোর কথা আকছার শোনা যায়। কিন্তু প্লাস্টিকের পুঁতির মালা বিক্রির নামে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। গল্পের বইতে এসব গল্প পাওয়া যায়। তবে বাস্তবের এমন একটি ঘটনা তাজ্জব করে দিয়েছে পুলিশকে। পুঁতির মালা বিক্রির নামে এক যুবক অনেকের থেকে কোটি টাকা গায়েব করেছে বলে অভিযোগ। অভিযুক্তের নাম সুদীপ্ত সরখেল। বাড়ি বাগুইআটির রেল কলোনিতে। খদ্দের সেজে ও প্রেমের ফাঁদে ফেলে তাকে ধরেছে পুলিশ। খাতায়কলমে এখনও পর্যন্ত ৭০ লক্ষ টাকা প্রতারণার খোঁজ মিলেছে। যা দু’কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে তদন্তকারীদের অনুমান।
সুদীপ্তর বিরুদ্ধে গত মাসের ২১ তারিখ বাগুইআটি থানায় প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন মৈত্রেয়ী বসু ঠাকুর নামের এক মহিলা। যার ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়। পুলিশি তৎপরতার খবর পেয়ে গা ঢাকা দেয় অভিযুক্ত। তবে ফোন নম্বর পেয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন তদন্তকারীরা। এক মহিলা পুলিশকর্মী পুঁতির মালা কিনবেন বলে যোগাযোগ করেন। তারপর বেশ কয়েকবার ফোনালাপের পর সুদীপ্তকে প্রেমের প্রস্তাব দেওয়া হয়। সেই টোপ গিলে নিজের বাসস্থানে গোপনে ফিরে আসে সুদীপ্ত। খদ্দের সেজে তার বাড়িতে হাজির হয় বাগুইআটি থানার পুলিশ। ধরা পড়ে যায় ওই যুবক। রবিবার ধৃতকে বারাসত আদালতে তোলা হলে বিচারক সাতদিনের জন্য পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। পুলিশ সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত সুদীপ্তর বিরুদ্ধে ১৮ জন অভিযোগ দায়ের করেছেন। গ্রেপ্তারির খবরে এদিন বাগুইআটি থানায় ভিড় জমে যায় অভিযোগকারীরা।
কীভাবে টাকা গায়েব করত এই প্রতারক?
রাজ্যের সর্বত্র প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে সুদীপ্ত। মূলত উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণবঙ্গের নদিয়া, বর্ধমান, দুই ২৪ পরগনা ও হাওড়ায় প্রতারণার ব্যবসা খুলেছিল সে। এদিন সেই সব জেলা থেকে প্রতারিতরা এসেছিলেন বাগুইআটি থানায়। রঞ্জন চৌধুরি বর্ধমানের বাসিন্দা। পুঁতির মালা তৈরির বরাত দেওয়ার নামে সুদীপ্ত তাঁর কাছ থেকে দু’লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ। রঞ্জনবাবু জানিয়েছেন, মালা গেঁথে দেওয়ার পুঁতি দিত সুদীপ্ত। মালা তৈরি করে দিলে মোটা টাকা পারিশ্রমিক দিত। টানা একমাস মোটা পারিশ্রমিক ব্যাংকের মাধ্যমে ফেরতও দিয়েছিল সে। তারপর পুঁতি দেওয়ার নামে তিন লক্ষ টাকা নিয়ে ফোন বন্ধ করে দেয়। খড়গপুরের এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, থার্মোকলের বাসন তৈরির মেশিন কেনার জন্য অনলাইন শপিং সাইটে বিজ্ঞাপন আসে। বিজ্ঞাপনদাতা জয় মেশিনারি নামের এক সংস্থা। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। প্রতিটি হাইড্রোলিক মেশিনের জন্য এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা দাম ঠিক হয়। পাঁচ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার পর পাঁচটি মেশিন ডেলিভারি দেয় সংস্থা। কিন্তু চালাতে গিয়ে দেখা যায় প্রতিটি মেশিন বিকল। তাঁদের সঙ্গে জয় বন্দ্যোপাধ্যায় নামে একজনের চুক্তি হয়েছিল। পরে জানতে পারেন জয়ের আসল নাম সুদীপ্ত সরখেল। গ্রেপ্তারির খবর পেয়ে এদিন তিনিও ছুটে এসেছিলেন বাগুইআটি থানায়। এরকম মোট আঠারো জন প্রতারিতর খোঁজ পেয়েছে পুলিশ। সংখ্যাটা আরও বাড়বে বলে অনুমান তদন্তকারীদের।
জানা গিয়েছে, জুন মাসে ধূপগুড়িতে ৫৫ লক্ষ টাকার একটি প্রতারণার ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। সেই ঘটনাতে জয় ওরফে সুদীপ্ত ও অপরাজিতা দত্ত নামে দু’জনের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। সুদীপ্তর বর্তমান ঠিকানা বাগুইআটির রেল কলোনি। সেখানে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকত সে। বাগুইআটি জ্যাংড়াতে একটি ঝাঁ চকচকে অফিস খুলেছিল। সেখানে পারমিতা বলে এক মহিলা তার প্রতারণার ব্যবসা সামলাত বলে জানা গিয়েছে। তবে পারমিতাকে খুঁজছে পুলিশ। উত্তরবঙ্গ-সহ জয়পুরেও সুদীপ্তর শাখা রয়েছে। গোটা প্রতারণা চক্রে একাধিক মহিলা জড়িত রয়েছে বলে জানতে পারা গিয়েছে। তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.