অর্ণব আইচ: এক শিশুকন্যাকে অপহরণ করে নৃশংসভাবে খুনের অভিযোগ। খুনের পর বহুতলের ফ্ল্যাটের মধ্যে বস্তাবন্দি করে দেহটি রেখে দিল এক যুবক। গভীর রাতে সুযোগ বুঝে বস্তাবন্দি দেহটি ফেলে দেওয়ার ছক কষে সে। যদিও পুলিশ খবর পাওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রবিবার রাতে উদ্ধার হল শিশুকন্যার বস্তাবন্দি দেহ। পূর্ব কলকাতার তিলজলায় ঘটেছে এই ঘটনাটি।
পুলিশের দাবি, ৩২টি ফ্ল্যাটে তল্লাশি করে দেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতের মধ্যেই খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় অলোক কুমার নামে ওই যুবককে। ওই শিশুকন্যার উপর শারীরিক নির্যাতন চালানোর পর তাকে খুন করা হয় কি না, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে তাকে জেরা করা হচ্ছে। অভিযুক্ত যুবক খুনের কথা স্বীকার করেছে বলে দাবি পুলিশ আধিকারিকদের। এদিকে, এই ঘটনার পর পুলিশের গাফিলতির অভিযোগ তুলে এলাকার বাসিন্দারা চড়াও হন থানায়। পুলিশের সঙ্গে এলাকার বাসিন্দাদের খণ্ডযুদ্ধ বেঁধে যায়। উন্মত্ত জনতা হামলা চালায় থানার উপর। পুলিশের গাড়ি ও বাইক ভাঙচুর করা হয়। বাধা দিতে গিয়ে আহত হন চারজন পুলিশকর্মী ও আধিকারিক। রাতে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। পুলিশও লাঠি নিয়ে তাড়া করে। গভীর রাত পর্যন্ত চলে এই গোলমাল।
পুলিশ জানিয়েছে, তিলজলা এলাকার শ্রীধর রায় রোডে এই ঘটনাটি ঘটে। এখানেই ওই শিশুকন্যার পরিবার থাকে। উলটোদিকেই রয়েছে একটি পাঁচতলা বাড়ি। সেখানে আছে ৩২টি ছোট ফ্ল্যাট। এদিন সকাল থেকেই সাত বছরের ওই শিশুকন্যাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। ক্রমে পরিবার ও প্রতিবেশীরা সব জায়গায় খুঁজতে শুরু করেন। কোথাও না পেয়ে দুপুর ১২টা নাগাদ থানায় যান। পুলিশ আইন মেনে অপহরণের মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করে। যদিও এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, প্রথমে বাইকে করে পুলিশ টিম এলেও ভাল করে তদন্ত হয়নি। শেষ পর্যন্ত এলাকার বাসিন্দাদের দাবিতে ওই অঞ্চলের সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করতে গিয়েই দেখা যায়, বাড়ির ভিতর প্রবেশ করছে শিশুকন্যা। ওই বহুতলের একতলায় রয়েছে একটি গেঞ্জি কারখানা। কারখানাটিতে তল্লাশি চালিয়ে কিছু উদ্ধার হয়নি। যদিও পুলিশ জানতে পারে যে, কারখানার অনেক কর্মী বহুতলের বিভিন্ন ফ্ল্যাটে থাকেন।
প্রায় আড়াই বছর আগে উত্তর কলকাতার জোড়া বাগানে যৌন নির্যাতনের পর শিশুকন্যা খুনের ঘটনা অভিজ্ঞতা থেকে পুলিশ ওই বহুতলের প্রত্যেকটি ফ্ল্যাটে চিরুনি তল্লাশি চালায়। তিনতলায় অলোক কুমারের ফ্ল্যাটে একটি বস্তা পড়ে থাকতে দেখা যায়। যুবক প্রথমে বলার চেষ্টা করে সেখানে নিজস্ব জিনিসপত্র রয়েছে। কিন্তু বস্তায় হাত দিয়েই নরম কিছু অনুভব করেন পুলিশকর্মীরা। তার উপর বস্তাটি ভিজে দেখেও তাদের সন্দেহ হয়। তড়িঘড়ি সেটি খুলতেই বেরিয়ে পড়ে শিশুকন্যার দেহ। দেখা যায়, নৃশংসভাবে তার মাথা ও কানে সজোরে আঘাত করে খুন করা হয়েছে। দেহ থেকে বেরিয়ে আসছে রক্ত।
অলোক কুমারকে টানা জেরার পর শেষ পর্যন্ত সে খুনের কথা স্বীকার করে। জানা যায়, অভিযুক্ত যুবকের বাড়ি বিহারের সমস্তিপুরে। বছরখানেক আগে এসেছিল সে। শিশুকন্যাকে সে কিছুর লোভ দেখিয়ে নিয়ে গিয়েছিল বলেই পুলিশ জানতে পেরেছে। তার সঙ্গে শিশুকন্যার পরিবারের কোনও গোলমাল ছিল কি না, সেই তথ্য জানার চেষ্টা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের পর খুনের কারণ সম্পর্কে আরও স্পষ্ট হওয়া যাবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.