ছবি: প্রতীকী
অর্ণব আইচ: আপনার আত্মীয় করোনা রোগী? তাঁর ভরতি হওয়ার জন্য বেড লাগবে? ‘স্বাস্থ্যদপ্তরে’র কাছ থেকে এই ফোন পেয়ে যেন হাতে চাঁদ পেয়েছিলেন করোনা আক্রান্তর পরিজনরা। আর সেই সুযোগ নিয়েই কলকাতায় রমরমিয়ে চলছিল প্রতারণা। একেকজন রোগীর পরিজনের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছিল মোটা টাকা। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় হানা দেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। শেখ নাসিরউদ্দিন ওরফে শেখ নাসির নামে ওই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
করোনা (Corona Virus) পরিস্থিতিতে যেখানে হাসপাতালে ভরতি করাতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হচ্ছে করোনা আক্রান্তদের আত্মীয়দের, সেখানেই সুযোগ নিত নাসির নামের ওই যুবক। এই অবস্থায় আত্মীয় ও পরিজনকে হাসপাতালে ভরতি করানোর জন্য অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় আবেদন করেন। পুলিশ জানিয়েছে, নাসির নজর রাখত সোশ্যাল মিডিয়ার উপর। যাঁরা আবেদন জানিয়েছেন, তাঁদের ফোন নম্বর জোগাড় করত নাসির। তাঁদের ফোন করত সে। নিজেকে পরিচয় দিত স্বাস্থ্যদপ্তরের আধিকারিক বলে। বলত, সরকারি হাসপাতালে ভরতি করিয়ে দেবে। এতে রোগীর পরিজনরা রাজি হলে সে বলত, এর জন্য টাকা লাগবে। কখনও অনলাইনে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে হাজার দশেক টাকা পাঠাতে বলত। আবার কখনও বা দেখা করে হাতে হাতেই টাকা নিত, অভিযোগ এমনই। কিন্তু কোনও পরিষেবা দেওয়ার ক্ষমতাই তার ছিল না বলে দাবি পুলিশের। আবার অক্সিজেন বা করোনার ওষুধ সরবরাহ করার নাম করেও সে টাকা তোলার চেষ্টা করত বলেও অভিযোগ এসেছে।
সম্প্রতি মধ্য কলকাতার (Central Kolkata) পোস্তা থানা এলাকার শিবতলা স্ট্রিটের বাসিন্দা এক ব্যক্তি তাঁর পরিজনকে হাসপাতালে ভরতি করানোর জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় আবেদন জানান। নাসির সেই আবেদন অনুযায়ী নিজেকে সরকারি আধিকারিক বলে পরিচয় দিয়ে যোগাযোগ করেন। কিন্তু হাসপাতালের বেড পেতে গেলে যখন মোটা টাকা আগাম চায়, তখনই তাঁর সন্দেহ হয়। তিনি কিছু প্রশ্ন করতে শুরু করলে সে অসঙ্গতিপূর্ণ উত্তর দেয়। ওই ব্যক্তি পোস্তা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের গুন্ডাদমন শাখার আধিকারিকরা তদন্ত করতে শুরু করেন। যে মোবাইল নম্বর থেকে ফোন এসেছিল, তার মাধ্যমেই গোয়েন্দারা খোঁজখবর নেন।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার পূজালির বড়বটতলা এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে শেখ নাসিরকে গোয়েন্দারা গ্রেপ্তার করেন। তার বিরুদ্ধে প্রতারণার ধারা ছাড়াও ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট আইনেও মামলা রুজু করা হয়েছে। গোয়েন্দাদের ধারণা, প্রতারণা চক্রে নাসির ছাড়াও অন্য ব্যক্তি রয়েছে। কতজনকে ওই যুবক এভাবে প্রতারণা করেছে, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে অতিমারীর মধ্যে অসহায় মানুষদের ফাঁদে ফেলার প্রায় একই ছবি ধরা পড়েছে বনগাঁয়। ভুয়ো নথিপত্র দেখিয়ে মোবাইলের সিম কার্ড সংগ্রহ করে সেই নম্বর থেকে অক্সিজেন বুকিং করা হত। সেই সিলিন্ডারই পাচার হয়ে যেত অন্যত্র। পরে তা চড়া দামে বিক্রি করা হত। এভাবেই অক্সিজেনের কালোবাজারি চলছিল রমরমিয়ে। এই কালোবাজারি চক্রের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে দুই যুবককে বনগাঁ থেকে গ্রেপ্তার করেছে দিল্লি পুলিশ। ধৃতদের নাম সৌরভ সাহা ও পিন্টু পাল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.