স্টাফ রিপোর্টার: আধভাঙা মাঝেরহাট ব্রিজ গুঁড়িয়ে দিয়ে তা নতুন করে তৈরি করার জন্য রেলের প্রয়োজনীয় অনুমতি মিলছিল না। সে বিষয়ে তোপ দাগলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রেলের বিরুদ্ধে সরব হয়ে তিনি জানিয়েছেন, মাঝেরহাট ব্রিজ ভেঙে পড়ার পরে রাজ্য সরকার তড়িঘড়ি কাজ শুরুর চেষ্টা করলেও, রেল গড়িমসি করছে। এক বছর আগে ব্রিজ ভেঙে পড়লেও, রেল মাত্র কয়েকদিন আগে তা নতুন করে তৈরি করার অনুমোদন দিয়েছে।
প্রায় একবছর আগে ভেঙে পরে মাঝেরহাট ব্রিজ। বেহালা থেকে ধর্মতলা-সহ একাধিক জায়গায় যাওয়ার মূল যোগসূত্র ছিল এই সেতু। সেতু ভেঙে যাওয়ার পর বেকায়দায় পড়েন বেহালার বাসিন্দারা। সেতু নতুন করে তৈরি করা যাচ্ছিল না। কারণ রেল লাইনের উপর থেকে যাওয়ার ফলে এই ভাঙা সেতুর কাজ করতে গেলে রেলের অনুমতির দরকার। রেলের বিরুদ্ধে তোপ দেগে এদিন মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, এক বছর টালবাহানা করেছে রেল।
তাঁর কথায়, ‘বেহালার মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেব যে আপনাদের দুর্গতি হচ্ছে মাঝেরহাট ব্রিজের জন্য। আসলে এটা এক বছর আগে যখন ভেঙেছিল তখনই আমরা সব মালপত্র বিদেশ থেকে নিয়ে এসে রেখেছিলাম। সব পড়ে আছে। কাজে লাগছে না। রেলের অনুমতি পেতে আমাদের এক বছর লাগল। ওরা যদি অনুমতি দিয়ে দিত, এতদিনে আমাদের কাজ হয়েও যেত। সবে অনুমতি দিয়েছে দু-তিনদিন হল।’ তবে এখন মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ দরকারে বেশি করে লোকবল দিয়ে এই কাজ করতে হবে।
একইভাবে টালা ব্রিজের বর্তমান অবস্থা নিয়েও চিন্তিত মুখ্যমন্ত্রী। বেহালায় একটি পুজোর উদ্বোধনে গিয়ে এদিন তিনি বলেছেন, ‘টালা ব্রিজ যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে যাবে। ৬০-৭০ বছর আগে ব্রিজটি তৈরি হয়েছে। অথচ এতদিন কোনও পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়নি। রক্ষণাবেক্ষণও হয়নি।’ মাঝেরহাটের মতো এই ব্রিজের নিচ দিয়েও রেল লাইন গিয়েছে। ফলে রেলের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। এই পরিস্থিতিতে রেলও নিজেদের মতো করে পরীক্ষা সেরেছে। লাইনের উপরে ব্রিজে যে অংশ রয়েছে, সেই অংশে কাজ করার কথা রেলের। আপাতত দফায় দফায় যৌথভাবে পরীক্ষা চলছে।
টালা ব্রিজের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে ইতিমধ্যে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ হয়েছে যান চলাচলে। রাইটস ও পূর্ত দপ্তর ইঞ্জিনিয়ারদের পরীক্ষার পর লরির মতো ভারী গাড়ি তো বটেই, চলতি বাসেরও রুট ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। রবিবার থেকেই সেই ঘোরানো পথে যাতায়াত শুরু করেছে বাস। যার জেরে বেশ দুর্ভোগে যাত্রীরা। আজ সোমবার থেকে সেই পথে যেতে গিয়ে কার্যত নাস্তানাবুদ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তার মধ্যেই এই ব্রিজ নিয়ে আশঙ্কার কথা উঠে এল মুখ্যমন্ত্রীর কথায়। এমনকী, সেতু তৈরির সময়ের কোনও নথিও পাওয়া যাচ্ছে না।
রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘যখন বলছি পরীক্ষা করে দেখ কী পরিস্থিতি। ইঞ্জিনিয়াররা বলছেন কাগজ নেই। ভিতরে কতটা ক্ষতি হয়েছে উপর থেকে বোঝা যাবে না।’ এই পরিস্থিতিতে যাত্রী সুরক্ষায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিতে তিনি বাধ্য হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।বলেছেন, ‘এই অবস্থায় রিস্ক নেওয়া যাচ্ছে না। হুট করে যদি বিপদ হয়ে যায়। আর ব্রিজ বন্ধ করে দিলে পাবলিক কোথায় যাবে? কোটি কোটি মানুষ যাতায়াত করেন। যোগাযোগ একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। ট্রাফিকের সমস্যা হবে। সব কিছু ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত যেটা মানুষের পক্ষে হবে, সেটা নিতে হবে।’
সোমবার আরেক দফায় এ নিয়ে বৈঠক রয়েছে নবান্নে। এর মধ্যে এও শোনা গিয়েছে যে পুজোর পর ছোট গাড়ির চলাচলেও বিধিনিষেধ আরোপ হতে পারে। তেমন হলে ব্রিজটি চলাচলের জন্য একেবারেই বন্ধ করে দেওয়ার উপক্রম হবে। এর মধ্যে মাঝেরহাট ব্রিজ নিয়ে জট কাটার খবর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। রবিবার শহরজোড়া পুজোর বিজ্ঞাপন নিয়েও মুখ খোলেন মুখ্যমন্ত্রী। রাস্তার ধারে বিজ্ঞাপন লাগানোর ক্ষেত্রে নূ্ন্যতম বিধি মানা হয়েছে বলে পুজো কমিটিগুলোকে ধন্যবাদ দিয়েছেন তিনি। ভিআইপি পাস নিয়ে ফের শুনিয়েছেন নিষেধাজ্ঞার কথা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.