সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মোদি সরকার…হায় হায়! তানাশাহি…নেহি চলেগা!
হালকা শীতের দুপুরে শহর আড়মোড়া ভাঙল এই স্লোগানে৷ আর সেই মন্ত্রেই ডোরিনা ক্রসিং যেন হয়ে উঠল মোদি বিরোধিতার মক্কা৷ সৌজন্যে অবশ্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বিরোধী রাজনীতির পোড় খাওয়া মানুষ তিনি৷ কীভাবে কর্মীদের শিখিয়ে-পড়িয়ে বিরোধী মঞ্চ জমিয়ে তুলতে হয়, তা তাঁর থেকে ভাল আর কে জানে! সোমবার শহর যেন দেখল সেই পুরনো মমতাকেই৷ যিনি মুখ্যমন্ত্রী নন৷ সরকারের সাফল্য বর্ণনা আর প্রস্তাবিত প্রকল্পের মধ্যে নিজেকে আটকে রাখছেন না৷ বদলে পাখি পড়া পড়িয়ে তৈরি করে নিচ্ছেন সকলকে৷ আর তারপর সকলকে সামিল করছেন এক মঞ্চে৷
নোট বাতিলের প্রতিবাদে তৃণমূলের প্রতিবাদ মিছিলে মানুষের ঢল ছিল গোড়া থেকেই৷ জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দলে দলে মানুষ ভিড় জমিয়েছিলেন৷ যদিও নেত্রী নিজে বললেন, “এ আন্দোলন শুধু তৃণমূলের নয়৷ এ আন্দোলন মানুষের৷” তাই কলেজে-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী থেকে মজুর-কৃষক-মজদুর সকলেই যেন এতে সামিল হন, সে অনুরোধ রাখলেন তিনি৷ মোদিকে একহাত নিয়ে এদিন তৃণমূল নেত্রী বলেন, “আমাদের একটাই কথা, হঠকারী সিদ্ধান্ত বাতিল করুন৷ ব্যাঙ্কে-এটিএমে টাকা নেই মানুষ খাবে কী? মাসের শুরুতে মাইনে দিতে পারবেন তো!” গতকালই ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে দেশকে ক্যাশলেশ ইকোনমিতে সাবালক হয়ে ওঠার বার্তা দিয়েছিলেন মমতা৷ এদিন মোদিকে তুলোধনা করে বলেন, “ক্যাশলেস না বেসলেস? খালি মোবাইল মোবাইল করছে, মানুষ কি মোবাইল খাবে?”
নোট বাতিলের বিরোধিতা তিনি করছেন না৷ কিন্তু সিদ্ধান্ত যে পরিকল্পনাহীন তা আরও একবার সোচ্চারে জানালেন মমতা৷ “নোট বাতিলে আমাদের কিছু যায় আসে না৷ কিন্তু ব্যাঙ্কে-এটিএমে যদি পর্যাপ্ত টাকা পাওয়া যায় তাহলেই হল৷ কিন্তু তা তো হচ্ছে না৷ এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত পৃথিবীতে কখনও নেওয়া হয়নি৷ মোদি এখন ভগবান হয়ে উঠতে চাইছেন৷ দেশকে রসাতলে পাঠিয়ে ঘুমোচ্ছেন উনি৷,” তোপ মমতার৷
এদিন বামেরাও বনধ দেখেছিল রাজ্যে৷ কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে তাতে কোনও সাড়া পড়েনি৷ এদিন শহর দেখল বামেদের ঠিক যা করার কথা ছিল, তাই-ই করে দেখালেন তৃণমূল নেত্রী৷ কৌশলী মমতা এদিন তাঁর প্রতিবাদ মঞ্চ থেকে দূরে রেখেছিলেন রাজ্যের নেতা-মন্ত্রীদের৷ বদলে তাঁর সঙ্গে ছিলেন শিল্পী-সাহিত্যিক-কলাকুশলীরা৷ বিদ্বজ্জনদের গলাতেই মোদি সরকার বিরোধিতার আওয়াজ তুলে স্পষ্টতই দিল্লিকে অন্যরকম একটি বার্তা দিতে চাইলেন৷ তাঁর প্রতিবাদ থেকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য তুলে রেখে সাধারণ মানুষের স্বার্থটিকে আরও একবার স্পষ্ট করে দিলেন৷ আর ঠিক এই জায়গাতেই ভরদুপুরে বামেদের জালে যেন গোলটি ঢুকিয়ে দিলেন তৃণমূল নেত্রী৷ বামেরা মোদির বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করলেন বটে, কিন্তু না আছে তার ধার, না আছে ভার৷ সাজানো বাগান তো শুকিয়েইছিল৷ রাজ্য রাজনীতিতে বামেদের সিদ্ধান্তের প্রাসঙ্গিকতাও যে মলিন এদিন তা আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন বামেরাই৷ সেখানেই অনেকটা ফাঁকা জমি পেয়ে গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ রীতিমতো বামপন্থী কায়দাতেই তিনি আজ জমিয়ে দিলেন মোদি বিরোধিতার মঞ্চে৷ বক্তৃতা শেষে যখন উপস্থিত শিল্পীরা ‘পথে এবার নামো সাথী’র সুর ছড়িয়ে দিলেন শহরের আকাশে বাতাসে৷ ঠিক সেই মুহূর্তেই যেন প্রায় নিরুচ্চারে অনেকে বলেই ফেললেন, বামেদের আজ সত্যিই ব্যর্থতার দিন৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.