ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: অরুণা শানবাগের উপরে হামলার পাঁচ দশক পরেও যে কর্মক্ষেত্রে আজও সুরক্ষিত নন মেয়েরা— তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে ২০২৪-এ আর জি কর কাণ্ড। গত শতাব্দীর সাতের দশকে মুম্বইয়ের কেইএম হাসপাতালের বেসমেন্টে ধর্ষিতা হন পেশায় নার্স অরুণা। পাশবিক অত্যাচারের জেরে ৪২ বছর কোমায় ছিলেন তিনি। অন্যদিকে গত ৮ আগস্ট রাতে আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুন করা হয়। ওই ঘটনার প্রতিবাদে শুরু হয়েছে তুমুল আন্দোলন। উত্তেজনার এই আবহে ধর্ষণের মতো অপরাধ রুখতে ‘অপরাজিতা’ বিল আনতে চলেছে মমতা সরকার। বিলের প্রধান উদ্দেশ্য হল—যৌন নির্যাতনে কঠোরতম শাস্তির ব্যবস্থা করা। প্রশ্ন হল, নতুন এই বিল কি অরুণা শানবাগদের ন্যায় দিতে পারবে?
ধর্ষণের ঘটনায় কঠোরতম সাজা দিতে বিল আনার কথা আগেই জানিয়েছিল রাজ্য সরকার। সেই উদ্দেশ্যে সোমবার বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন বসে। সেখানেই নয়া ‘অপরাজিতা নারী ও শিশু বিল’ (পশ্চিমবঙ্গ ফৌজদারি আইন সংশোধনী বিল, ২০২৪)-এর খসড়া আলোচনার জন্য সব পক্ষের মধ্যে বিলি করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিলটি পেশ হওয়ার কথা বিধানসভায়। এখন প্রশ্ন হল, ধর্ষণের অপরাধে কি মৃত্যুদণ্ড হবে অপরাধীর? ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় কিন্তু সেই বিধান নেই। ধর্ষণের ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছরের কারাবাস। ধর্ষণ এবং খুনের ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। ১৬ বছরের কম বয়সি কাউকে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বনিম্ন ২০ বছরের শাস্তির বিধান রয়েছে। অপরাধ বিবেচনা করে ‘যাবজ্জীবন’ কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। তবে ১২ বছরের কম বয়সি শিশুকে ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত হলে ২০ বছরের কারাবাস। অপরাধ বিবেচনা করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, এমনকী মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে।
অর্থাৎ অরুণা শানবাগের মতো ভয়ংকর নির্যাতনের ঘটনায় মাত্র ১০ বছর জেল খাটলেই খালাস পাবে অত্যাচারী! মমতা সরকারের বিলে এখানেই বড় বদল আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে বিলের খসড়া প্রকাশ্যে এসেছে, সেখানে বলা হয়েছে, নির্যাতিতার শরীরে যদি একাধিক আঘাতের চিহ্ন থাকে, এমনকী অত্যাচারের ভয়াবহতায় নির্যাতিতা যদি কোমায় চলে যান বা অচৈতন্য হয়ে পড়েন, তবে সেক্ষেত্রে দোষ প্রামাণিত হলে মৃত্যুদণ্ড হবে অপরাধীর। উল্লেখ্য, এই বিল রাজ্য আনলেও বর্তমান আবহে চাপে পড়বে কেন্দ্রও। ভাবা হতে পারে আইন সংস্কারের বিষয়ে।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৩ সালের নভেম্বর। ডিউটি শেষ করে পোশাক বদলাতে মুম্বইয়ের কেইএম হাসপাতালের বেসমেন্টে গিয়েছিলেন সেখানকার নার্স অরুণা। সে সময়েই তাঁর উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল হাসপাতালের এক সাফাইকর্মী। গলায় কুকুর বাঁধার চেন জড়িয়ে তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। গলায় চেন দেওয়ার কারণে দীর্ঘক্ষণ মস্তিষ্কে রক্ত পৌঁছয়নি অরুণার। দৃষ্টিশক্তি হারান তিনি। বাকি ৪২টি বছর তাঁর কেটেছিল ওই হাসপাতালেরই চার নম্বর ওয়ার্ডে শুয়ে। ২০০৯ সালে অরুণাকে ‘মুক্তি’ দিতে আদালতের কাছে নিষ্কৃতিমৃত্যুর আর্জি জানিয়েছিলেন পেশায় লেখিকা ও সাংবাদিক পিঙ্কি। সেই আর্জি গৃহীত না হলেও এ দেশে নিষ্কৃতি-মৃত্যু নিয়ে ভাবনাচিন্তার পথ সুগম হয় অরুণার ঘটনায়। দুঃখজনক হল, আইনের ফোকর গলে ১৯৮০ সালে মাত্র ৭ বছর জেল খেটে মুক্তি পান অরুণার ঘটনায় অভিযুক্ত সাফাইকর্মী সোহন লাল সিং।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.