স্টাফ রিপোর্টার: আবারও কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নাগরিকত্ব ইস্যু থেকে ক্রীড়া বা সংস্কৃতি জগতে বিভিন্ন এজেন্সির ‘হানা’কে হাতিয়ার করেছেন তিনি। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মমতার স্পষ্ট বক্তব্য, “বর্গিরা যেন আর হানা না দিতে পারে। গব্বর সিংরা যেন আর ক্ষতি করতে না পারে।” নতুন প্রজন্মকেও এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে বলেছেন তিনি। তিনি বলেন, “নাগরিকত্ব কি ওঁরা বিচার করবে? ভোট এলেই এসব নাটক চলে। বিচারপতিরাও ছাড় পাচ্ছেন না। কেউ ফোনে কথা বললেই তা রেকর্ড করা হচ্ছে।”
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সোমবারই রাজ্যের ২২১টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রকে এক লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। প্রায় ৪৩০০ নতুন ক্লাবকে পরিকাঠামো ও খেলাধুলোর উন্নতির জন্য দেওয়া হয়েছে দুই লক্ষ টাকা করে সাহায্য। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, কৃতী খেলোয়াড়, যাঁদের দরকার রয়েছে, তাঁরা যেন পেনশন পেতে পারেন, তা দেখতে হবে। বয়সকালে অনেক খেলোয়াড় অর্থাভাবে ভোগেন। তাঁদের কথা ভেবেই রাজ্যের এই ভাবনা। পাশাপাশি সিভিক ভলান্টিয়াররা ভাল খেললে তাঁদের চাকরি দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে খেলাশ্রী সম্মান প্রদান অনুষ্ঠানে গিয়ে তেমনই ইঙ্গিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের নাম না করেই তাঁদের খোঁচা মেরে এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “অনেককে দেখেছি দেশ জিতলেই টুইট করেন। ভোট এলে সাহায্য করে আবার সারা বছর খেলোয়াড়দের জন্য আর কিছু করতে দেখা যায় না। আমরা অনেক কিছু করি। কিন্তু পাবলিসিটি করি না। যেটা সারা বছর ধরে করি, সেটা আন্তরিকতা দিয়ে করি। পাঁচ বছরে একদিন করলে সেটা হয় না।”
ইতিমধ্যেই রাজ্যের ২৪ হাজার ক্লাবকে প্রথম ধাপে দু’লক্ষ এবং পরে তিন লক্ষ টাকা করে আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এদিন বলেন, “ক্রীড়াক্ষেত্রে আগের সরকারের তুলনায় সাত গুণ বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১১ সালে আমরা ক্ষমতায় আসার সময় ক্রীড়াক্ষেত্রে বরাদ্দ ছিল ৭৩ কোটি টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৫১৫ কোটি টাকা। আমরা যতটা সম্ভব করার চেষ্টা করছি। প্রচুর ক্লাব আছে যেখান থেকে ভাল খেলোয়াড় তৈরি হয়। কিন্তু তাদের পরিকাঠামো উন্নয়নের প্রয়োজন। আমরা তাঁদের কথা ভেবেই এই আর্থিক অনুদান চালু করেছি।” একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানান, শুধু এই সাহায্য নয়। পুলিশ ৩০-৪০ হাজার ক্লাবকে নিয়ে খেলাধুলার আয়োজন করে প্রতিযোগিতা করায়। ক্লাবের স্পনসর পাওয়া নিয়েও এদিন মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় এজেন্সির বিরুদ্ধে তোপ দাগেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “স্পনসরের টাকাতেই তো ক্লাব চলে। কে কোথা থেকে টাকা দিচ্ছে, তা ক্লাব জানবে কী করে? কোনও ক্লাব বা খেলোয়াড়দের আগে স্পনসর করত একাধিক সংস্থা। কিন্তু এখন এজেন্সি-র জন্য করতে ভয় পাচ্ছে।” মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, “শুধু খেলোয়াড় নন। একাধিক শিল্পী আছেন, যাঁদের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। রাজ্য সরকার তাঁদেরও সাহায্য করে। কিন্তু সবকিছু পাবলিসিটি করে না। কারণ তাতে তাঁদের সম্মানহানির সম্ভাবনা থাকে। আমরা এগুলো আন্তরিকতা দিয়ে করি। লোক দেখানোর জন্য নয়।”
এনআরসি এবং লোকের ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করা নিয়ে কেন্দ্রের সমালোচনা করেন মমতা। জানান, কার কী পদবি? কার কবে জন্ম হয়েছিল, এগুলো নিয়ে মাথাব্যথা। কেউ নাকি এদেশের লোক নয়! তিনি বলেন, “একটা পদবি মানুষের পরিচয় নয়। তাঁর পরিচয় কাজে। নেতা কাজের মধ্যে দিয়ে তৈরি হয়। এই মাটি আমাদের স্বপ্ন দেখায়। বাংলার প্রতিভা নিয়ে গোটা বিশ্ব চলছে।” কার সাথে কে কথা বলছে তার উপরও কেন্দ্র নজরদারি চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন জীবনকৃতী সম্মান দেওয়া হয় প্রাক্তন ফুটবলার সুকুমার সমাজপতি ও টেনিস খেলোয়াড় জয়দীপ মুখোপাধ্যায়কে। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে রাজ্য সরকারের এই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, পুরমন্ত্রী ও মেয়র ফিরহাদ হাকিম, লক্ষ্মীরতন শুক্লা-সহ বিশিষ্ট ক্রীড়া ব্যক্তিত্বরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.