সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বরাবরের সুসম্পর্ক। প্রকাশ্যে হোক কিংবা অন্তরঙ্গ আড্ডায়, শ্রদ্ধা-স্নেহের সম্পর্কে বাঁধা ছিলেন কৃষ্ণা বসু আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, প্রাক্তন সাংসদ, নেতাজি পরিবারের প্রবীণ সদস্যের প্রয়াণে তাঁকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে সেসব কথাই উঠে এল মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে।
শনিবার বিকেলে নেতাজি ভবনে কৃষ্ণা বসুকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সঙ্গে ছিলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমও। তাঁর মরদেহে ফুল-মালা দেওয়ার পর তিনি বলেন, “কৃষ্ণা বসুর প্রয়াণ বঙ্গ রাজনীতির বড় ক্ষতি। তাঁর রাজনৈতিক পরামর্শ থেকে বঞ্চিত হওয়ার বেদনা ভোলার নয়। বড় শূন্যস্থান তৈরি হল। তিনি তৃণমূল পরিবারের কাছেও মায়ের মতো ছিলেন।” তিনি আরও বলেন, “গত ২৬ ডিসেম্বর আমার সঙ্গে দেখা হয়েছিল তাঁর। নেতাজি পরিবারের ধারা বজায় রেখেছিলেন। নেতাজি সংক্রান্ত গবেষণাও ধাক্কা খাবে কৃষ্ণা বসুর প্রয়াণে।”
এদিন কৃষ্ণা বসুকে শেষবারের জন্য শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। তিনিও ফুলের মালায় শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন। ছেলে সুগত বসুর সঙ্গে কথা বলেন, প্রকাশ করেন সমবেদনা। দিনভর প্রয়াত শিক্ষাবিদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছেন আরও বহু বিশিষ্ট মানুষজন।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন থেকে শুরু করে সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সকলেই তাঁর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ। একসময়ের সতীর্থ সম্পর্কে বলতে গিয়ে বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে অমর্ত্য সেন বললেন, কৃষ্ণা বসুর সান্নিধ্য পাওয়াকে তিনি সৌভাগ্য বলে মনে করেন। ভাবনার আদানপ্রদান করে তাঁরা সমৃদ্ধ হতেন, যা আজকের পর থেকে বন্ধ হয়ে যাবে বলে আক্ষেপের সুর তাঁর গলায়।
কৃষ্ণা বসুর জীবনাবসানে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। শনিবার শোকবার্তায় বিমান বসু বলেন, “প্রয়াত ডা: শিশির বসু ও অধ্যাপিকা কৃষ্ণা বসুর সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের পরিচয়। পরে কৃষ্ণা বসু যখন প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে অংশ নিলেন তখনও সম্পর্ক ক্ষুন্ন হয়নি। বিভিন্ন সময় নানা বিষয়ে তাঁর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। আমি তাঁর জীবনাবসানে গভীর শোক জানাচ্ছি এবং তাঁর পরিবারবর্গকে আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।” রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভুলে বর্ষীয়ান প্রাক্তন সাংসদের প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন বর্তমান সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “দু-একবার দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। আমার কাজের প্রশংসা করেছিলেন উনি। তা আমার কাছে সৌভাগ্যের। তাঁর প্রয়াণ রাজনীতিতে অপূরণীয় ক্ষতি বলেই মনে করি।”
সন্ধে সাড়ে সাতটা নাগাদ এলগিন রোডের নেতাজি ভবন থেকে কৃষ্ণা বসুর মরদেহ নিয়ে শুরু হয় অন্তিম যাত্রা। পরিবারের সদস্য, অগণিত অনুরাগীর সঙ্গে পা মিলিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কেওড়াতলা মহাশ্মশানে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁর শেষকৃত্য হয়। তার আগে গান স্যালুটে তাঁকে শেষশ্রদ্ধা জানানো হয়েছে।
ছবি: পিন্টু প্রধান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.