ফাইল ছবি।
স্টাফ রিপোর্টার: আজকাল দেখছি, অনেকে বলছে, আমি তৃণমূল বুঝি না, ওই দাদা বুঝি। দলের প্রতীক ছাড়া কেউ পঞ্চায়েতে একটা বুথেও জিততে পারবেন না। কেউ এখানে নেতা নয়, আমিও কর্মী। নেতা যদি কেউ হয়, সে হল জোড়া ফুল। মনে রাখবেন, দলই শেষ কথা, দল ছাড়া কারও কোনও অস্তিত্ব নেই, অন্য নেতার নাম নয়, সব কিছু বুঝে ফেসবুকে পোস্ট করুন। এভাবেই বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোরে তৃণমূলের বিশেষ অধিবেশনে দলীয় কর্মীদের শৃঙ্খলা ও অনুশাসন নিয়ে কড়া বার্তা দিলেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি দলের শৃঙ্খলাপরায়ণ ও বুথে বুথে বিরোধীদের সন্ত্রাসের সামনে বুক চিতিয়ে ‘সাচ্চা’লড়াই করা কর্মীদের প্রশংসা করেছেন।
নেত্রীর আগেই বক্তব্য রাখতে গিয়ে অভিষেকও দলীয় শৃঙ্খলা প্রসঙ্গে বলেছেন, “সংবাদ মাধ্যমে অনেক কথা বলে অনেকেই দলকে ছোট করছেন। দলের সঙ্গে যাঁরা বেইমানি করেছিলেন, সেই মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারীদের কিন্তু আমিই চিহ্নিত করেছিলাম। এবারেও বেইমানদের ল্যাজেগোবরে করার দায়িত্বটা আমি নিলাম।” নেত্রীর নির্দেশ পেয়ে আজ, শুক্রবার থেকেই জেলায় জেলায় দলীয় কর্মীরা বুথভিত্তিক ভোটার লিস্টের কাজ নিয়ে মাঠে নেমে পড়ছেন।
দল বাদ দিয়ে ‘ব্যক্তি-আনুগত্য’কে যে একদম প্রশ্রয় দেওয়া হবে না, তা স্পষ্ট করে দিয়ে মমতা বলেন, “আমি নিয়মিত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সবার ফেসবুক দেখি, কে কী পোস্ট করছেন, সবটাই নজরে রাখি।” উল্লেখ্য, আর জি কর নিয়ে বিরোধীদের আন্দোলনের সময়ে দলের সিংহভাগ যেমন পাল্টা প্রচারে নামা দূরের কথা, কার্যত নিশ্চুপ ছিল, তেমনই উঠতি নেতাদের একাংশ দল বাদ দিয়ে ব্যক্তিপূজায় ‘ব্যস্ত’ হয়ে পড়েছিলেন। মমতার এদিনের কড়া নিশানা যে দলকে উপেক্ষা করে সেই ‘ব্যক্তি-আনুগত্য’ দেখানো কর্মীরা, তা খোলাখুলি জানিয়েছেন নেত্রী।
সমস্ত জেলা তৃণমূল সভাপতিদের ইন্ডোরের মঞ্চ থেকে নেত্রীর নির্দেশ, ‘‘সকলকে ডেকে নিয়ে একসঙ্গে আগামী একবছর সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করুন। যাঁরা সবাইকে নিয়ে চলতে পারবেন না, তাঁদের আমি বদলে দেব।’’ এর পরই মমতার মন্তব্য, যাঁরা শুধু বিবৃতি দেন, দলের সমালোচনা করেন, তাঁদের জন্য আমার কোনও দয়ামায়া নেই। এদিন নেত্রী আরও একবার পঞ্চায়েত ও কাউন্সিলরদের নাম করে সরাসরি স্বচ্ছ জীবনধারা এবং দুর্নীতি থেকে দূরে থাকার বার্তা দিয়ে মমতা বলেন, “শুধুমাত্র নিজের কথা ভাবলে হবে না, দলের কথা মাথায় রেখে কাজ করুন।”
দলের বৈঠকে গেলে কী করতে হবে, কোন কর্মীদের তিনি পুরস্কৃত করবেন, কাদের দলের দায়িত্ব থেকে ব্যর্থতার জেরে অপসারণ করবেন, তার প্রতিটি বিষয় বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোরে দলের রাজ্য সম্মেলনে স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “আমি সেই কর্মীকে পুরস্কৃত করতে চাই, যে কর্মী কিছু পাওয়ার আশা না করে বুথে গিয়ে ভোটের দিন বুক চিতিয়ে লড়াই করে, অথচ কিছু চায় না।” একই সঙ্গে এদিন মমতা কর্মীদের ৪ দফা দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন– ১) ভোটার লিস্টে ভূতুড়ে ভোটার বাদ দিতে কাল থেকেই নেমে পড়ুন। ২) বুথে বুথে জনসংযোগ বৃদ্ধি করে সরকারের ৯৬টি প্রকল্প প্রত্যেকটি পরিবারে পৌঁছে দিতে হবে। ৩) সংগঠন মজবুত করতে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে নামুন। নজর রাখতে হবে বিজেপি বা সিপিএমের হাতে যেন কোনও নিরীহ মানুষ অত্যাচারিত না হয়। ৪) আসন্ন বিধানসভা ভোটে বিজেপিকে হারাতে ক্রিকেট-ফুটবলে আরও জোরে ‘চার্জ’করতে হবে।”
দলীয় কর্মীদের উজ্জীবিত করে এদিন মমতা বলেন, “মানুষকে সঙ্গে নিয়ে নম্রভাবে নতমস্তকে ঘরে ঘরে পৌঁছে সরকারি পরিষেবা পৌঁছে দিন। বিজেপির জামানত জব্দ করুন, বাংলা মা-কে এগিয়ে যেতে দিন।” নেত্রীর পাশাপাশি এদিন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ব্যক্তিস্বার্থে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করা যাবে না। বিধায়ক থেকে ব্লক স্তরের নেতাদের আমি বলতে চাই, কাজে যেন শিথিলতা না আসে। বিজেপি বাংলাকে কলুষিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ২০২৬-এ লড়াইয়ের জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।”
এর পরই অভিষেকের ঘোষণা, “নেত্রী বলেছিলেন দুই তৃতীয়াংশের বেশি আসনে আমরা ক্ষমতায় আসব। আমি বলতে চাই ২১৫টির বেশি আসন আমাদের পেতে হবে। এক ছটাক জমিও কাউকে ছাড়া যাবে না।” শুধুমাত্র যাঁরা সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করে রাজনীতি করেন, তাঁদেরও এদিন সরাসরি সতর্ক করে অভিষেক বলেছেন, “হোয়াটসঅ্যাপে রাজনীতি না করে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। রাস্তায় নেমে কাজ করতে হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.