গৌতম ব্রহ্ম: আউটডোরের টিকিটটা হাতে নিয়েই স্বাস্থ্য-আধিকারিকের চক্ষু চড়কগাছ!
চোখ কচলে আবার দেখলেন৷ না কোনও ভুল নেই৷ নীল-সাদা আউটডোর টিকিটে কম্পিউটারে লেখা কালো হরফে জ্বলজ্বল করছে রোগীর নাম৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ ফিমেল৷ ৪ জানুয়ারি, ২০১৭৷
বেলা ১১টা ৩৬ মিনিটে পিজি (এসএসকেএম) হাসপাতালে এসেছিলেন৷ দু’টাকা দিয়ে টিকিট করে নেফ্রোলজি বিভাগে দেখিয়েছেন৷ ডা. ডি সেনের আউটডোরে৷ টিকিটের উপর লেখা ব্লাড রিপোর্ট৷ কিডনির সমস্যা৷ আড়াই দিন ‘ইউরিন’ হয়নি৷ ভর্তির পরামর্শ দিয়েছেন ডাক্তার৷ আউটডোর টিকিটে তা লিখেও দিয়েছেন৷ সেই সঙ্গে দিয়েছেন একটি বিশেষ ‘নোট’৷ ‘নো শিডিউলড বেড ভ্যাকাণ্ট অ্যাভেলেবল ইন নেফ্রোলজি ফিমেল৷’ ফলে আউটডোর থেকে সরাসরি ভর্তি হতে পারেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ পিজির নেফ্রোলজি বিভাগের বারোটি বেড রয়েছে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে৷ সেখানেও এক অবস্থা৷ বেডের হাহাকার৷ সন্ধ্যা পর্যন্ত ভর্তি করা যায়নি রোগীকে৷ আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ‘নোট’ টিকিটে লিখেছেন ডাক্তার৷ তা হল, তিনবার ডেকেও পাওয়া যায়নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে৷ অর্থাত্ টিকিট জমা করে উধাও হয়ে গিয়েছিলেন রোগী৷ ফলে ভর্তির যতটুকু সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল তা-ও অঙ্কুরে নষ্ট হয়ে যায়৷ এরপর শুরু হয় রোগীকে ভর্তি করার জন্য তীব্র টানাপোড়েন৷ ময়দানে নামেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক আত্মীয়৷ মিত্রা সাঁতরা৷ তিনিই পিজি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভর্তির ব্যবস্থা করেন৷
সন্ধ্যায় সুপার অফিস থেকে ফোন যায় ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসার ডা. রেখা বাইনের কাছে৷ রেখাদেবীও প্রথমে চমকে উঠেছিলেন৷ হাত থেকে পড়ে যাচ্ছিল ফোন৷ সুপার অফিস থেকে এক আধিকারিক বলেন, “একজন রোগীকে ইমার্জেন্সিতে পাঠাচ্ছি৷ আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর নামেই নাম৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বয়স ৭৬৷ কিডনির সমস্যা৷ আড়াই দিন ধরে ‘ইউরিন’ হচ্ছে না৷ পারলে একটু ভর্তি করে নিন৷ মেঝে বা ট্রলি হলেও চলবে৷“ মেঝে-ট্রলিতে ভর্তি হতে হয়নি মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়েক৷ রাত সাড়ে ছ’টা নাগাদ কেবল ওয়ার্ডের ৪৭ নম্বর বেডে ভর্তি করা হয় বৃদ্ধাকে৷ অক্সিজেন-স্যালাইন চালু হয়েছে৷ রাত ন’টার মধ্যে তিনবার ডাক্তার দেখে গিয়েছেন৷ হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন পরিবার৷ খুশি মিত্রাদেবীও৷ জানালেন, “মমতাদেবীর বাড়ির লোকজন ফোনে কান্নাকাটি করছিলেন৷ বাধ্য হয়েই সুপার অফিসে এসে এক আধিকারিককে ধরি৷ উনিই ইমার্জেন্সিতে বলে মমতাদেবীকে ভর্তি করেন৷ না হলে হয়তো নেফ্রোলজি বিভাগের বাইরে আরও রাত পর্যন্ত পড়ে থাকতেন৷” মা-কে পিজিতে ভর্তি করতে পেরে খুশি ছেলে গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়৷ জানালেন, “সকাল থেকে নেফ্রোলজি বিভাগের বাইরেই মা-কে শুইয়ে রেখেছিলাম৷ আজ ভর্তি করতে পারব ভাবিনি৷ বহু জায়গায় ছোটাছুটি করেছি৷ শেষে বাধ্য হয়ে আমার এক আত্মীয়কে ফোন করি৷”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.