তরুণকান্তি দাস: ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আগামিকাল রাতে নবান্নেই থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সামনে থেকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে এই দুর্যোগে লড়বেন তিনি। পরিস্থিতি মোকাবিলা প্রসঙ্গে মঙ্গলবার বিকেলেই দফায় দফায় বৈঠক চলেছে নবান্নে। মুখ্যমন্ত্রী বৈঠক করছেন জেলাশাসকদের সঙ্গেও। বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় সাধনে মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা কথা বলেছেন পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাশাসকের সঙ্গেও। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই সরানো হয়েছে উপকূলের তিন লক্ষ মানুষকে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “কয়েকটি জেলায় ঝড়ের অভিঘাত সবচেয়ে তীব্র হবে। পরশুদিন বিকেলের পরও তার রেশ থাকবে। তাই অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে আগামী দু’দিন কাটাতে হবে সবাইকে। নবান্নে ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। কোনও সমস্যা হলে সেখানে সরাসরি কথা বলা যাবে। কন্ট্রোল রুমের টোল ফ্রি নম্বর হল ১০৭০। এছাড়াও যোগাযোগ করা যাবে ২২১৪৩৫২৬ এবং ২২১৪১৯৯৫ নম্বরে।” তাঁর কথায়, সবচেয়ে বেশি বিপদের আশঙ্কা রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। তাই ইতিমধ্যেই সেখানকার ২ লক্ষ মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার ৫০ হাজার, পূর্ব মেদিনীপুরের ৪০ হাজার ও পশ্চিম মেদিনীপুরের ১০ হাজার মানুষকেও নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের সময় এক লক্ষ আশি হাজার মানুষকে তাদের বাড়ি থেকে সরিয়ে সরকারি শিবিরে নিয়ে যেতে হয়েছিল। এবার এখনই প্রায় ৩ লক্ষ মানুষকে সরাতে হল অর্থাৎ এই ঝড়ের দাপট কতটা তীব্র হবে তা এখনই বোঝা যাচ্ছে। শুধু এই জেলাগুলি নয়, কলকাতাতেও ঝড়-বৃষ্টি হবে। করোনা সংক্রমণে বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মাঝে এই ঘূর্ণিঝড়কে “মরার উপর খাঁড়ার ঘা” বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এই ঘূর্ণিঝড়ের তিনটি পর্যায় রয়েছে। হেড, আই এবং টেল। সবশেষে অর্থাৎ টেলের দাপট সবচেয়ে বেশি হবে। তাই ঝড় পুরোপুরি থেমে না যাওয়া পর্যন্ত সকলকে ঘরে থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন, “কেউ ত্রাণ শিবির থেকে বেরোবেন না পরশু সকাল পর্যন্ত। প্রশাসন বললে তবেই শিবির ছাড়বেন। সেখানে সরকার সাধ্যমত খাবার ব্যবস্থা করবে। শিশুদের জন্য খাবারের সব ব্যবস্থা থাকবে। তাই আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। ক্ষয়ক্ষতির বিষয়েও যত্ন নিয়ে সরকার পদক্ষেপ করবে। জানা গিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় রাজ্য কতটা তৈরি, তার খোঁজ নিতে এদিন ফোন করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বলেন, “আমরা জানিয়ে দিয়েছি, সরকার যথেষ্ট সতর্ক। সমস্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এসডিআরএফের ১৫ টি টিম নেমেছে। আছে এনডিআরএফও। প্রস্তুত রাজ্য সরকারের বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর।” এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগর মৌসুনি দ্বীপ, ফ্রেজারগঞ্জ, গোসাবা, ঘোড়ামারা, কাকদ্বীপ, ক্যানিং এলাকায় ঝড়ের দাপট বেশি থাকবে। উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগর, খেজুরি, কাঁথি, সুতাহাটার মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে। পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন এবং নারায়ণগড় আঘাত হানবে এই ঘূর্ণিঝড়। তবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত সরকার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.