ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: অবশেষে নীরবতা ভাঙলেন৷ প্রতিক্রিয়া দিলেন জম্মু-কাশ্মীর পুনর্গঠন সংক্রান্ত কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত নিয়ে৷ প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর মঙ্গলবার দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘কাশ্মীরে যা ঘটেছে, সব দেখেছি৷ কেন্দ্রের পদ্ধতি নিয়ে আপত্তি আছে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কাশ্মীরবাসীর সঙ্গে কথা বলা যেত। ওমর আবদুল্লা, মেহবুবা মুফতিকে গ্রেপ্তার করা ঠিক হয়নি। অবিলম্বে ওদের ছেড়ে দেওয়া উচিত। আমরা এই বিল সমর্থন করি না। গণতান্ত্রিক পদ্ধতি মানেনি কেন্দ্র। বিজেপি ভোট রাজনীতি করছে৷’
সোমবার দিনের প্রথমার্ধ্বেই জম্মু-কাশ্মীর থেকে বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা অর্থাৎ অস্থায়ী ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার সংক্রান্ত বিল পাশ হয়ে যায় সংসদের উচ্চকক্ষে৷ রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরিত সেই বিল অনুযায়ী, এবার থেকে জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ – দুটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে৷ এই বিল নিয়ে বিরোধীদের তুমুল আপত্তি হেলায় উড়িয়ে দ্বিতীয় মোদি সরকার ঐতিহাসিক জয়লাভ করে৷ তখন থেকেই বিরোধী রাজনৈতিক মহলের একাংশ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছিল বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া পেতে৷ কারণ, কেন্দ্রে বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ের অন্যতম মুখ তিনি৷ কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে তিনি এবিষয়ে একেবারে নীরব ভূমিকা পালন করেছিলেন৷
তবে মঙ্গলবার দুপুর নাগাদ সেই নীরবতা ভাঙলেন তিনি৷ প্রত্যাশিতভাবেই ৩৭০ ধারা অবলুপ্ত করে জম্মু-কাশ্মীর পুনর্গঠন বিলের বিরোধিতা করলেন৷ বললেন, ‘গণতান্ত্রিক পদ্ধতি মেনে বিল পাশ করানো হয়নি৷ তারপর কাশ্মীরের পরিস্থিতি যা হয়েছে, তা দেখে ভয় হচ্ছে৷ কারফিউ জারি হয়েছে৷ মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন৷ আমাদের অখণ্ডতা রক্ষা করতে হবে৷ সকলের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানই কাম্য৷ দেশমায়ের স্বার্থে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক না কেন, তা যদি শান্তিপূর্ণ পথে হয়, তাতে আমাদের সমর্থন থাকবে৷’ এরপর তাঁর আরও মন্তব্য, ‘ওমর আবদুল্লা, মেহবুবা মুফতির মতো প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে যে আচরণ করা হল, তা ঠিক নয়৷ সন্ত্রাসবাদীদের মতো এভাবে গ্রেপ্তার করা ঠিক হয়নি৷ ওঁদের ছেড়ে দেওয়া উচিত৷’ রাজ্যের দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেপ্তারি যে অনুচিত কাজ, তাও বললেন৷ এনসি নেতা ওমর আবদুল্লা তাঁর দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক বন্ধু৷ লোকসভা ভোটের আগে মমতার উদ্যোগে গঠিত বিজেপি বিরোধী শিবিরগুলিতে তাঁকে নিয়মিত দেখা গিয়েছে৷ সুতরাং, এক্ষেত্রে তাঁর গ্রেপ্তারিতে সম্পূর্ণভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমব্যথী হবেন, সেটা স্বাভাবিক৷
সেইসঙ্গে চিরাচরিত ভঙ্গিতেই বিজেপির বিরুদ্ধে ‘ভোট রাজনীতি’র অভিযোগ তুললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ আর এখানেই প্রশ্ন তুলছেন অনেকে৷ তাঁদের মত, দ্বিতীয় মোদি সরকার কাজ করতে নেমে একের পর এক যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তা আসলে জনস্বার্থে৷ তাৎক্ষণিক তিন তালাক সংশোধনী বিলই তার বড় প্রমাণ৷ দীর্ঘদিনের অশান্ত কাশ্মীরে স্থায়ী শান্তি ফেরাতে তাকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ দেওয়াও আসলে উপত্যকাবাসীর মঙ্গলের জন্য৷ যেখানে এই জনদরদী বিল পাশ করাতে কেন্দ্রকে কোনও ভোটের পথেই হাঁটতে হল না, সেখানে কীভাবে ‘ভোট রাজনীতি’র প্রশ্ন ওঠে? উত্তর যাই-ই হোক, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখানেও বুঝিয়ে দিলেন যে বিজেপি বিরোধিতা থেকে তিনি কিছুতেই সরছেন না৷
অন্যদিকে, মঙ্গলবার লোকসভায় দলের সংসদীয় নেতা হিসেবে জম্মু-কাশ্মীর পুনর্গঠন বিল নিয়ে অত্যন্ত সাবধানী প্রতিক্রিয়া দিলেন তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়৷ যা থেকে তৃণমূলের অবস্থান কী, তা স্পষ্টই হয়নি৷ যদিও তারপরেই তৃণমূল সুপ্রিমো নিজে তাঁর বক্তব্যে অবস্থান স্পষ্ট করে দিলেন৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.