সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইস্যু একটাই – জাতীয় নাগরিকপঞ্জি অর্থাৎ এনআরসি। আর এটা রাজ্যের শাসকদলের কাছে সবচেয়ে বড় বিজেপি বিরোধী হাতিয়ার। সেই অস্ত্রে শান দিয়েই ২০২০-র পুরভোট হবে। আর তার পরের বছরের বিধানসভা ভোটে এনআরসি-ই হবে তুরুপের তাস। আজ তৃণমূল ভবনে দলের সাংসদ, বিধায়কদের নিয়ে পুরভোটে প্রস্তুতি সংক্রান্ত বৈঠকে এ নির্দেশ দিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোট স্ট্র্যাটেজিস্ট প্রশান্ত কিশোর। আর পাশে বসে তাঁর বক্তব্যে সিলমোহর দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
আর বেশি সময় নেই। ডিসেম্বর পেরিয়ে আগামী বছর শুরু হলেই, ফের রাজ্যে ভোটের দামামা বেজে যাবে। আগামী মে মাসের মধ্যে পুরসভার ভোট। তাই আর কোনওরকম ঢিলেমি নয়। এখন থেকে কোমর বেঁধে লেগে পড়তে হবে। এমনই মনে করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই উৎসবের মরশুম কিছুটা ফিকে হতেই দলের জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে ভোটের প্রস্তুতি আলোচনায় বসে পড়লেন তিনি। বৃহস্পতিবার তৃণমূল ভবনে তাই ডাক পড়েছিল তৃণমূলের সব বিধায়ক, সাংসদদের। সঙ্গে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী পরামর্শদাতা প্রশান্ত কিশোর। তিনিই কার্যত সবটা ঠিক করে দিচ্ছেন, ফলে তাঁকে সামনে রেখেই এবারের প্রস্তুতির সুর বেঁধে দিতে চাইছেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
এদিন দু’ দফায় বৈঠক হয় তৃণমূল ভবনে। প্রথমবার আলোচনা সভায় ছিলেন স্যর পিকে। তিনিই প্রাথমিকভাবে নেতাদের বুঝিয়ে দেন আগামী পুরভোটের প্রচারে কী করতে হবে। এনআরসি নিয়ে আরও প্রচারের পাশাপাশি ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচিতে আরও জোর দেওয়ার কথা বলেন প্রশান্ত কিশোর। কীভাবে মানুষের মগজে এনআরসি-র নেতিবাচক প্রভাবের কথা ঢুকিয়ে দিতে হবে, সে বিষয়ে সকলকে নিখুঁত পরামর্শ দেন পিকে। প্রয়োজনে বুথে বুথে গিয়ে সকলকে বোঝাতে হবে যে এনআরসি লাগু হলে রাজ্যে কী কী সমস্যা হতে পারে। পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, ‘জাতি, ভাষাভাষির ভিত্তিতে কোনও এনআরসি হবে না। এসব মানব না। এ নিয়ে মানুষজনকে নিয়ে আন্দোলন হবে।’
‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচিটি মূলত পিকে-র মস্তিষ্কপ্রসূত। লোকসভা ভোটে তৃণমূলের আশানুরূপ ফলাফল না হওয়ায় জনসংযোগে বাড়তি নজর দিতে তাঁর এই কর্মসূচি। সেই কাজে নেমে বেশ সাফল্যের মুখও দেখেছেন তৃণমূল নেতারা। তাই সেই কর্মসূচি আরও ভালভাবে পালন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তফসিলি জাতি ও উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষজনের আরও কাছাকাছি যেতে হবে নেতাদের, এমন নির্দেশ দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেসব এলাকায় মানুষের সুবিধা-অসুবিধার কথা তাঁদের ঘর পর্যন্ত গিয়ে শুনতে হবে এবং তা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরতে হবে নেত্রীর কাছে। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পগুলির সুবিধা এসব জায়গায় কতটা পৌঁছচ্ছে, নজর দিতে হবে সেদিকেও।
বৈঠকের দ্বিতীয়ার্ধ্বে প্রশান্ত কিশোর ছাড়া তফসিলি জাতি ও উপজাতির জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সবমিলিয়ে, আসন্ন পুরভোট এবং তার পরের বছর বিধানসভা ভোটকেই পাখির চোখ করছে তৃণমূল। লোকসভার ফলাফলের পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সেদিকে সদা সতর্ক থাকছে রাজ্যের শাসকদল।
ছবি: পিন্টু প্রধান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.