সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রাজনৈতিক মেন্টর কিংবা ব্যক্তিগত অভিভাবক বা ‘দাদা’ – জীবনের অনেকটা অংশ জুড়ে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের (Pranab Mukherjee) নানা ভূমিকার পরিচয় খুব কাছ থেকে পেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দাদা-বোনের অটুট সম্পর্কের জগৎটা এবার শূন্য হল। অসীম শ্রদ্ধা-স্নেহের বন্ধনটা ছিঁড়ে ফেলে পরলোকে পাড়ি দিয়েছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। এই খবর শোনার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত ফেসবুক পোস্টে সেই আক্ষেপ গোপন রইল না।
সেই সাতের দশকে, যখন রাজনীতিতে সবে হাতেখড়ি মমতার, যখন এই ভাবী রাজনীতিককে প্রায় কেউই চেনেন না, সেই অঙ্কুর দশায় কিন্তু প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মতো দুঁদে রাজনীতিক ঠিক চিনে ফেলেছিলেন তাঁকে। দেখেই বুঝেছিলেন, এ মেয়ে যাবে বহুদূর। আর তখন থেকেই স্নেহের অবারিত দুয়ার খুলে তিনি স্বাগত জানিয়েছিলেন ছাত্র রাজনীতিতে নবাগতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee)। ‘তুই’ সম্বোধনে আশীর্বাদী হাত রেখেছিলেন মাথায়। আর সেদিনের মমতারও বুঝতে বিন্দুমাত্র অসুবিধা হয়নি, তিনিও পেয়েছেন এক মহীরূহের ছায়া। কংগ্রেস শিবিরে দাদা-বোনের সম্পর্কে আবদ্ধ হয়েছেন দু’জনে। মমতা যতবারই সাফল্য পেয়েছেন, সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছেন প্রণববাবু। অভিনন্দন, শুভেচ্ছার পাশাপাশি পরামর্শ দিয়েছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়।
এরপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংসদ হয়ে দিল্লির রাজনীতিতে পা দেওয়ার পর সেই সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির দিল্লির বাড়িতে এ রাজ্যের আজকের মুখ্যমন্ত্রীর ছিল অবাধ যাতায়াত। ছোট বোনের আবদারে ডায়বেটিস আক্রান্ত দাদাকে যে কতবার মুখ বুজে চকলেট খেয়ে ফেলতে হয়েছে, তার হিসেব নেই। দিল্লির সেসব দিনের কথা এই দিনে দাঁড়িয়ে ভেসে উঠেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের টুইটে। তিনি স্পষ্টই লিখেছেন, ”রাজনৈতিক জীবনে আমার প্রথম সাফল্য থেকে মুখ্যমন্ত্রী হওয়া পর্যন্ত প্রতি পদক্ষেপে প্রণবদার সান্নিধ্য পেয়েছি। তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ ছাড়া দিল্লি সফর ভাবাই যেত না…”
It is with deep sorrow I write this. Bharat Ratna Pranab Mukherjee has left us. An era has ended. For decades he was a father figure. From my first win as MP, to being my senior Cabinet colleague, to his becoming President while I was CM…(1/2)
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) August 31, 2020
So many memories.A visit to Delhi without Pranabda is unimaginable. He is a legend in all subjects from politics to economics. Will be forever grateful. Shall miss him immensely. My condolences to Abhijit & Sharmistha (2/2)
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) August 31, 2020
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে প্রণব মুখোপাধ্যায় নিজের পর্যবেক্ষণে জানিয়েছিলেন, ”কংগ্রেস ছেড়ে তো অনেকেই বেরিয়ে গিয়েছে। কেউ তেমন কিছু করতে পারেনি। ও কিন্তু করে দেখিয়েছে। ওর জনপ্রিয়তার আমাদের চেয়ে অনেক বেশি।” তবে এই মধুর সম্পর্কেও খানিকটা অম্লতা মিশেছিল ক্ষণিকের জন্য। ২০১৩ সালে দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় প্রণব মুখোপাধ্যায়কে একবাক্যে সমর্থন করতে চাননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ নিয়ে একমাত্র তাঁর টালবাহানার জেরে দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদের নির্বাচন নিয়ে জল গড়িয়েছিল বহু দূর। শেষপর্যন্ত প্রতিপক্ষ, লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার, পিএ সাংমার বিরুদ্ধে অর্ধেকেরও বেশি ভোটে জিতে যান বাঙালি দুঁদে রাজনীতিক। পা বাড়ান রাইসিনার পথে।
আর তখনই দাদা-বোনের টালমাটাল সম্পর্ক ফের জোড়া লাগে। ছোট বোনের কাছে দাদা আবদার করে বসেন, ”যা হওয়ার হয়েছে, তুই ভুলে যাস, আমিও ভুলে যাব। তুই না এলে আমার শপথগ্রহণ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।” এই ডাক উপেক্ষা করার ক্ষমতা, ইচ্ছা কোনওটাই ছিল না জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। হাজারও ব্যস্ততা সামলে তিনি সেদিন গিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতির শপথ অনুষ্ঠানে। উভয়েই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, ছোটখাটো বিরোধিতা তুচ্ছ বিষয়, আসলে রাজনীতির বিশাল আঙিনায় তাঁদের আসন অনেকটাই উঁচুতে। সেই উচ্চতা থেকে আজ একটি আসন ফাঁকা হয়ে গেল প্রণব মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে।
ছবি: পিন্টু প্রধান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.