Advertisement
Advertisement

Breaking News

অন্য ২১ পালনে মমতা

একুশের ভোটের আগে আজ অন্য ২১ পালনে মমতা, কী বার্তা তৃণমূল নেত্রীর? নজর বিরোধীদেরও

আজ মমতার ভাষণ শুনতে জনতার ভরসা ফেসবুক, ইউটিউবই।

Mamata Banerjee celebrates different 21 July amidst Corona scare
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:July 21, 2020 9:46 am
  • Updated:July 20, 2022 5:07 pm  

কিংশুক প্রামাণিক: ধর্মতলা নয়, করোনার কারণে ও প্রযুক্তির কল্যাণে আজ সব বুথ, সব বাড়ি, সব স্মার্ট ফোনে ফেসবুক, ইউটিউবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) একুশে জুলাইয়ের সরাসরি ভাষণ। অতীতকে ছাপিয়ে এবার রেকর্ড সংখ্যক মানুষ শুনতে পাবেন তাঁর কথা। সেই অর্থে এক অভিনব কর্মসূচি আজ। ২২ মার্চ থেকে ২০ জুলাই, চার মাস একটিও রাজনৈতিক কর্মসূচি তিনি করেননি। একদিকে অতিমারী করোনা মোকাবিলা, অন্যদিকে গোদের উপর বিষফোঁড়া আমফান দুর্যোগ, দুই সামলাতে সামলাতে কখন ২১ জুলাই এসে গেল।

অথচ আজকের দিনটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন। ধর্মতলার মঞ্চে দাঁড়িয়ে বরাবর নতুন সংগ্রামের শপথ নেন তিনি। জীবনের বহু বড় বড় সিদ্ধান্তের পীঠস্থান এই ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ। এখন কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি করার উপায় এবং ফুরসত, কিছুই নেই মমতার। কিন্তু আজকের দিনটি অন্য। তাই চার মাস পর প্রশাসকের খোলস ছেড়ে জননেত্রীর চেয়ারে বসতেই হচ্ছে তাঁকে। দিতে হবে রাজনৈতিক ভাষণ। তুলে ধরতে হবে বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপট। এবং নিশ্চিতভাবে আগামীর শপথ। সোমবার এক বার্তায় একুশকে স্মরণ করে তিনি দিনটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেছেন। করোনা যাবে কি যাবে না, সেই অনিশ্চয়তার মধ্যেও আজ থেকেই তাঁকে ভোটের ঘুঁটি সাজানোর কাজটি শুরু করতে হবে। কারণ, বছর শেষ হলেই বিধানসভা নির্বাচনের ঢাকে কাঠি পড়বে। সবচেয়ে কঠিনতম ভোট। তৃতীয় মা-মাটি-মানুষ সরকারের মুখ্যমন্ত্রীর আসনে থেকেই আগামী বছর ২১ জুলাই তিনি ধর্মতলায় বক্তৃতা দেবেন কি না, তা চূড়ান্ত হবে আগামী ভোটে। তারই কাউন্টডাউন আজ থেকে শুরু।

Advertisement

[আরও পড়ুন: করোনা আবহে চলতি বছর কীভাবে শহিদ দিবস পালন করবে তৃণমূল? জেনে নিন খুঁটিনাটি]

কাজে কাজেই ২১-এর ভোটকে সামনে রেখে আজ ২১ জুলাইয়ের বার্তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কিন্তু আজ কোনও সমাবেশ হচ্ছে না। ধর্মতলায় দূর দূর থেকে আসা লাখো লাখো মানুষের ঢল আজ দেখবে না কলকাতা। সামাজিক দূরত্ববিধির ফাঁসে বাৎসরিক বিশাল সমাবেশ এবার বাধ্য হয়েই স্থগিত। শহিদ স্মরণ হবে বুথে বুথে। সময় সেই দুপুর ১টা। আর ঠিক ২টোয় কালীঘাটের অফিস থেকে বক্তৃতা শুরু করবেন মমতা। সমস্ত টিভি চ্যানেল, তৃনমূলের নিজস্ব ফেসবুক, ইউটিউব লাইভে সেই বক্তৃতা সম্প্রচার হবে। নেত্রী যথারীতি তুলে ধরবেন তাঁর আগামী কর্মসূচি। দলীয় কর্মীদের তিনি এই বার্তা দেবেন যে, যত দিন না করোনা দূর হয় স্থানীয় স্তরে মানুষের পাশে থাকতে হবে, বিজেপির ‘অপপ্রচার’ রুখতে হবে। দলের ঐক্য-শৃঙ্খলা অন্যতম ইস্যু। ভোটের স্ট্র্যাটেজি কী, সেসব অনেক পরের বিষয়, অনেক সময় হাতে আছে। আজকের মঞ্চ থেকে বিজেপি-বিরোধী সব মানুষের সমর্থন প্রাথনা করবেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী। দশ বছরের কাজকে তুলে ধরে এগোনোর বার্তা দেবেন কর্মীদের।

তৃণমূল নেতৃত্ব তাদের এই কর্মসূচিকে মোদি-শাহদের মতো ‘ভারচুয়াল’ বলতে চায় না। যুক্তি, এত অর্থ খরচ করা সম্ভব নয়। সামাজিক বিধি মেনে কোনও তথাকথিত র‌্যালি এবার হচ্ছে না। ২১-এর পরম্পরা মেনে নেত্রী এবার পার্টি অফিস থেকে ভাষণ দেবেন। সংবাদ মাধ্যম, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে রাজ্যের দশ কোটি মানুষের কাছে তৃণমূল নেত্রীর বার্তা পৌঁছে দেওয়া একমাত্র উদ্দেশ্য। মজার কথা হল, কোনও সমাবেশ না হলেও এবার সম্ভবত নতুন এক রেকর্ড সৃষ্টি করতে চলেছেন মমতা। অন্যবার সব নেতা, কর্মী গ্রাম, পাড়া ছেড়ে কলকাতা চলে আসেন। এবার সবাই থাকবেন এলাকায়। প্রায় প্রতিটি বুথে জায়েন্ট স্ক্রিনে সম্প্রচার হবে ভাষণ। উৎসাহী মানুষ বাড়িতেও শুনবেন। সেই অর্থে সব পাড়ার সব ঘরে আজ এক একটা একুশের সভা। প্রথা মেনে সকালে তৃণমূল ভবনে পতাকা উত্তোলন। পরে ধর্মতলা অস্থায়ী শহিদ বেদিতে রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সির তর্পণ। মঞ্চে সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, নেতাই, সাঁইবাড়ি ও ২১ জুলাইয়ের শহিদ পরিবার থাকেন। এবার তাঁরা থাকবেন নিজ এলাকায় তৃণমূলের মঞ্চে। বিধায়করা থাকবেন নিজ এলাকায়।

[আরও পড়ুন: তৃণমূলের শহিদ দিবসের পালটা বিজেপির ‘প্রহসন দিবস’, নয়া কর্মসূচি ঘোষণা দিলীপ ঘোষের]

১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই তৎকালীন যুব কংগ্রেস সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মহাকরণ অভিযান অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান ১৩ জন। সেই থেকে এই ২১-এর সমাবেশ হয়ে আসছে। শত দুর্দিনেও সমাবেশ করেছেন মমতা। রেকর্ড ভাঙার সভা তাঁকে বরাবর বাড়তি শক্তি জুগিয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমাবেশের প্রেক্ষিত বদলেছে। আজকের ২১ সিপিএমবিরোধী জেহাদের নয়, এখন সংগ্রাম বিজেপিকে এই রাজ্যে ঠেকিয়ে সরকারকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। একমাত্র ২০১১ সালের ২১ জুলাই সমাবেশ ধর্মতলা থেকে সরিয়ে বিগ্রেডে নিয়ে যাওয়া নয়, ৩৪ বছর পর বামফ্রন্টের পরাজয় পালন করা হবে বলে। কিন্তু ২০২০ এক ব্যতিক্রমী অধ্যায়। করোনা ভাইরাসের (Coronavirus) দাপটে গোটা বিশ্ব সংকটে। গত একশো বছরে মানব সভ্যতার এমন বিপর্যয় আসেনি। সারা পৃথিবী স্তব্ধ। বাতিল সব বড় ইভেন্ট। স্বাভাবিকভাবে একুশের সমাবেশের প্রযুক্তির নতুন রূপ। মমতা কী বলবেন, সেদিকে নজর দলীয় কর্মী শুধু নয়, বিরোধী দল ও সাধারণ মানুষেরও।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement