ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: ১৪২৬ বিয়াল্লিশে ৪২! এই স্লোগান তুলেই সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনের জোরদার প্রচার করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অন্যান্য তৃণমূল নেতারা৷ কিন্তু ফলাফল বের হতেই মাথা ঘুরে গিয়েছে শাসকদলের৷ বিয়াল্লিশে ৪২ তো হয়নি, বরং বিজেপির চোরাস্রোতে ভেসে গিয়েছে তৃণমূলের নিজের ঘরের ১২টি আসন৷ ২০২০ সালের পুরসভা নির্বাচন ও ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে যা অত্যন্ত বিপজ্জনক বলেই মনে করছে তৃণমূল নেতৃত্ব৷ সেকারণেই লোকসভা ভোটের ফলাফল কাটাছেঁড়া করতে শনিবার কালীঘাটে বৈঠক ডাকলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বৈঠকে হাজির থাকতে বলা হয়েছে লোকসভা নির্বাচনে দলের জয়ী সাংসদ ও পরাজিত প্রার্থীদের৷ এছাড়া ডাকা হয়েছে তৃণমূলের সমস্ত জেলা সভাপতি ও দলের পর্যবেক্ষকদের৷
[ আরও পড়ুন: কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাচ্ছেন বাংলার একাধিক সাংসদ, তুঙ্গে জল্পনা ]
সূত্রের খবর, ওইদিন সমস্ত জেলা সভাপতি ও পর্যবেক্ষকদের থেকে পরাজয়ের কারণ বুঝতে চাইবেন দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সংগঠনের কোথায় এখনও খামতি রয়ে গিয়েছে, কোন বিধানসভা কতটা পিছিয়ে পড়েছেন তৃণমূল প্রার্থীরা ইত্যাদি তথ্য বুঝে নেবেন তিনি৷ বিধানসভা ধরে ধরে ফলাফলের কাটাছেঁড়া করবেন৷ এছাড়া দীর্ঘদিন ধরেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব তৃণমূলের একটা বড় সমস্যা৷ একাধিক প্রশাসনিক বৈঠকে এবং দলীয় সভায় তৃণমূল নেত্রীকে তা নিয়ে সরব হতেও দেখা গিয়েছে৷ নেত্রীর কাছে এবিষয়ে ধমক খেয়েছেন দলের অনেক শীর্ষ নেতা৷ রাজনৈতিক মহলের মতে এই অন্তর্দ্বন্দ্ব এবং নব্য তৃণমূল ও আদি তণমূলের লড়াই লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে বিশেষ সাহায্য করেছে৷ শাসকের গোষ্ঠীকোন্দলকে কাজে লাগিয়ে ভিতরে ভিতরে ভীত শক্ত করেছে গেরুয়া শিবির৷ দলীয় সূত্রে খবর, এদিন সেই বিষয়েও আলোচনা করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সেক্ষেত্রে দলের কয়েকজনের ডানা ছাঁটা হতে পারে৷ বিশেষ করে যে সমস্ত নেতার ঔদ্ধত্য নিয়ে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে নেত্রীর কাছে, তাঁদের দায়িত্ব কমানো হতে পারে৷
[ আরও পড়ুন: কলকাতার দুই আসনই থাকছে তৃণমূলের, জয় নিশ্চিত যাদবপুরেও ]
লোকসভা নির্বাচনের ফলে দেখা যাচ্ছে উত্তরবঙ্গ থেকে কার্যত ধুয়ে মুখে সাফ হয়ে গিয়েছে তৃণমূল৷ ওয়াকিবহাল মহলের আশঙ্কা, সেকারণে দলনেত্রীর কোপের মুখে পড়তে পারেন উত্তরবঙ্গের নেতারা৷ একই চিত্র দেখা যেতে পারে জঙ্গলমহলের ক্ষেত্রেও৷ সেখানে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেই বিজেপির অস্তিত্বের প্রমাণ মিলেছে৷ তারপর সেখানকার জেলা নেতৃত্বকে কখনও প্রকাশ্যে কখনও গোপনে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছিলেন তাঁদের৷ কিন্তু লোকসভার ফল বের হতে দেখা গিয়েছে, কোনও কাজই করেননি জঙ্গলমহলের তৃণমূল নেতারা৷ বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুরের আসন হাতছাড়া হয়েছে ঘাসফুল শিবিরের৷ এই পরাজয়ের কারণে সেই জেলার নেতৃত্বকে শাস্তি দিতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এমনই গুঞ্জন রাজনৈতিক মহলে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.