সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ধর্ম নিয়ে নাম না করেই ‘বিভেদকারী’ বিজেপিকে ফের একহাত নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
উত্তরবঙ্গের পাহাড় সফর শেষে শুক্রবার বিকেলে কলকাতা বিমানবন্দরে নেমে মুখ্যমন্ত্রী সোজা নিউটাউন অ্যাকশন এরিয়া থ্রি-তে অবস্থিত আদিবাসী ভবনে বিরসা মুন্ডার ১৫০-তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখানে কারও নাম না করেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ভোট এলেই ওরা ধর্ম করে। আর আমরা ৩৬৫ দিন মানুষের কাজ করি। ওরা স্বামীজিকে নিয়ে রাজনীতি করে।” এখানেই মমতার প্রশ্ন, স্বামীজির বাড়ি বিক্রি হয়ে যাচ্ছিল। তখন ওরা কোথায় ছিল? দার্জিলিংয়ে ভগিনী নিবেদিতার বাড়ি বিমল গুরুংদের হাতে চলে গিয়েছিল। কলকাতায় সিস্টার নিবেদিতার বাড়িও দখল হয়ে যাচ্ছিল। সবটাই তো আমি রক্ষা করেছি!
এ প্রসঙ্গ টেনে মমতা জানিয়ে দেন, “আমি শীঘ্রই দিঘায় যাব জগন্নাথ মন্দিরের কাজ দেখতে। সেখানে জগন্নাথের মার্বেল মূর্তি এসে গিয়েছে। তবে ট্রাডিশন মেনে ছোট্ট একটি নিমকাঠের ঠাকুর করেছি। সেটাই পুজো হবে। এছাড়াও বড় ঠাকুর, ভোগঘর, ট্রাস্টি বোর্ড, পুরোহিত, সব কিছুই হবে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলেই।” পাশাপাশি সেখানে একটি চৈতন্যদেবের তোরণ হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী সেটির নাম দিয়েছেন ‘চৈতন্যদ্বার’। রামমন্দির অসমাপ্ত অবস্থায় উদ্বোধন হয়েছিল। সেই প্রসঙ্গেও বিজেপির নাম না করে মমতার খোঁচা, “অসমাপ্তভাবে কিছু উদ্বোধন করা মানে, তাঁকে অসম্মান করা হয়। দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের কাজ শেষ হলে তবেই আমরা সেটি উদ্বোধন করব। কালীঘাটের স্কাইওয়াকের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। পুরো সম্পূর্ণ হলে তবেই চালু করব।’’
এদিনের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, বাংলার পুজো উৎসবে পুলিশ-প্রশাসন সহ জরুরি পরিষেবার সঙ্গে জড়িত যেমন– দমকল, মিউনিসিপ্যাল ও স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীদের জন্য বাড়তি ছুটি বাড়িয়ে পনেরো দিনের করা হল। আগে এই ছুটি ছিল দশ দিন। বিরসা মুন্ডার ১৫০-তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী রাজ্য জুড়ে বিরসা মুন্ডার জন্মের সার্ধ শতবর্ষ উৎসব পালনের কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী। আগামী ২১ নভেম্বর পর্যন্ত তা চলবে। মমতা মনে করেন, আগামী প্রজন্মের কাছে বিরসা মুন্ডার অবদান তুলে ধরতে হবে। তাই রাজ্যের তরফে এমন উদ্যোগ। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “অনেকেই জঙ্গলের জমি দখলের চেষ্টা করছে। আমরা বিধানসভায় আইন করেছি ট্রাইবালদের জমির অধিকার তাদের হাতেই তুলে দিয়েছি। জঙ্গলের অধিকার আদিবাসীদের হাতেই থাকবে।”
এদিন আদিবাসী সম্প্রদায়ের হাতে মুখ্যমন্ত্রী ধামসা-মাদল তুলে দেন। সেইসঙ্গে শিক্ষা, শিল্প, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া ক্ষেত্রে কৃতী আদিবাসীদের সম্মান প্রদান করেন। মুখ্যমন্ত্রী মনে করিয়ে দেন, আগে জঙ্গল রক্তাক্ত ছিল। আমরাই সেখানে শান্তি এনেছি। এরপর একে একে আদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য তাঁর সরকারের সাফলে্যর খতিয়ান তুলে ধরেন। মমতা জানান, ষাট ঊর্ধ্ব প্রায় তিন লক্ষ আদিবাসীকে পেনশন দিই। আগে ট্রাইবাল দফতরের বাজেট ১৬০ কোটি টাকা ছিল। এখন বেড়ে তা হয়েছে দেড় হাজার কোটি টাকা। রাজ্যে ২১ লক্ষ ৬২ হাজার ছাত্রছাত্রীকে স্কলারশিপ দিই। ১৭৩ কোটি টাকা শিক্ষাশ্রী স্কলারশিপ দেওয়া হয় আদিবাসী পড়ুয়াদের। উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে গিয়ে পড়াশোনার খাতে ২০ লক্ষ টাকা স্কলারশিপের ব্যবস্থা করেছি। ঝড়গ্রামে কবি সাধু রামচাদ মুর্মুর নামে বিশ্ববিদ্যালয়। নয়াগ্রামে পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মুর নামে সরকারি কলেজ তৈরির পাশাপাশি আদিবাসী স্কুল, গার্লস স্কুল, মডেল স্কুল হস্টেল, আইসিডিএস সেন্টার ইত্যাদি গড়া হয়েছে। সাঁওতালি ও অলচিকি ভাষাকে আমরাই স্বীকৃতি দিয়েছি। এছাড়া বন্য অধিকার আইনের মাধ্যমে প্রায় ৪৯ হাজার আদিবাসী মানুষকে ফরেস্ট পাট্টা ও ৮৫১ কমিউনিটি পাট্টা বিলি করা হয়েছে। ১ কোটি ৬২ লক্ষের বেশি মানুষকে জাতি শংসাপত্র দিয়েছি।
আদিবাসীদের খেলাধুলা চর্চায় কোনওরকম সমস্যা না হয়, তা সুনিশ্চিন্ত করতে মঞ্চে উপস্থিত ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রীর। এছাড়াও এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, সুজিত বসু, বিরবাহা হাঁসদা প্রমুখ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.