গৌতম ব্রহ্ম: সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতির সুযোগ বাড়ছে। সেক্রেটারিয়েট, ডিরেক্টরেট, রিজিওনাল অফিস সব বিভাগেই উঁচুতলার পদের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। সেকশন অফিসার থেকে শুরু করে অ্যাডিশনাল সেক্রেটারি, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি থেকে ডেপুটি সেক্রেটারি, সব পদেই সরকারি কর্মীদের দ্রুত পদোন্নতির সুযোগ করে দিচ্ছে নবান্ন। এছাড়া হেলথ স্কিমের সীমা বাড়ানো থেকে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের শূন্যপদ দ্রুত পূরণ করে দপ্তরগুলিকে আরও শক্তিশালী করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন থেকে ১৬ এবং ২৫ বছরের পরিবর্তে চাকরি জীবনের ১৫ এবং ২৪ বছরেই উচ্চ বেতনক্রম বা হায়ার স্কেলের সুবিধা পাবেন সরকারি কর্মীরা।
বুধবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee) সরকারি কর্মীদের একাধিক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানেই তিনি একগুচ্ছ সুযোগ-সুবিধা এবং পদোন্নতির সুযোগের কথা ঘোষণা করেন। অফিসার ও কর্মী প্রতিনিধিদের স্পষ্ট বার্তা দেন, সরকারি কর্মীরাই রাজ্যের সবচেয়ে বড় শক্তি। তাঁদের কর্মজীবন নিয়ে রাজ্য সরকার যথেষ্ট সচেতন। এদিন মুখ্যমন্ত্রী মুখ্যসচিবকে সেক্রেটারিয়েট, ডিরেক্টরেট এবং রিজিওনাল অফিস সংক্রান্ত সমস্ত পদোন্নতি আগামী তিন মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দেন। ১লা জুন থেকেই এই নতুন ঘোষণা কার্যকর করা হবে।
এই মুহূর্তে কোনও সরকারি কর্মচারী ৮ বছর, ১৬ বছর এবং ২৫ বছর চাকরির পর পদোন্নতি না হলেও সংশ্লিষ্ট কর্মচারী পরবর্তী স্কেলে বেতন পেতে শুরু করেন। এই কার্যকালের সময়সীমা ৮ বছর, ১৬ বছর এবং ২৫ বছরের পরিবর্তে ৮ বছর, ১৫ বছর এবং ২৫ বছর করা হচ্ছে। এছাড়া হেলথ স্কিমের আওতায় থাকা সরকারি কর্মচারীদের ক্যাশলেস স্বাস্থ্যবিমার সীমা বাড়ানো হল। এতদিন দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত টাকা পর্যন্ত ক্যাশলেসের সুযোগ পেতেন কর্মচারীরা। এবার তা বাড়িয়ে দু’-লক্ষ টাকা করা হল। পাশাপাশি সংখ্যালঘু দফতরের কর্মচারীদের এসএসকে এবং এমএসকে শিক্ষকদের তিন শতাংশ হারে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি এবং অবসর নেওয়ার সময় এককালীন তিন লক্ষ টাকা পাবেন।
ডব্লুবিসিএস অফিসারদের জন্যও ভাল খবর শোনান মুখ্যমন্ত্রী। ‘১৯’-এর স্কেলে কাজ করা ডব্লুবিসিএস অফিসাররা এবার দু’-বছর কাজ করলে ২০ স্কেলে পৌঁছে যাবেন। অর্থাৎ তাঁদের বেতন কাঠামোয় পরিবর্তন হবে। চিফ ইঞ্জিনিয়ারদের স্পেশাল সেক্রেটারি, সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ারদের জয়েন্ট সেক্রেটারি হিসাবে গণ্য করা হবে। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পদোন্নতির জেরে বিভিন্ন দফতরে যে শূন্যপদ তৈরি হয়েছে, তা দ্রুত পূরণ করা হবে। রাজ্য সচিবালয়ের পদের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। জয়েন্ট সেক্রেটারি ও স্পেশাল সেক্রেটারির পর্যায়ে বাড়ানো হচ্ছে পদ। সেচ দফতরে নতুন পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। পূর্ত এবং জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরে সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ারের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। সেক্রেটারিয়েট সার্ভিসে এই প্রথমবার এত বেশি সংখ্যক পদ বাড়ানো হল।
অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আগে ছিল ১১২, বেড়ে তা হল ১৫০। ডেপুটি সেক্রেটারি পদ বাড়াল ৩৬টি। দশটি জয়েন্ট সেক্রেটারির পদ বাড়ানো হল। অ্যাডিশনাল সেক্রেটারির পোস্ট দশটি তৈরি করা হল। অর্থাৎ কমন ক্যাডার সার্ভিসের কর্মীরাও অতিরিক্ত সচিব পদে উন্নীত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। সেকশন অফিসার বেড়ে হল ১৩৭, ওএসডি বাড়াল ৯২। সমস্ত সার্ভিসেই পদের সংখ্যা বাড়ানো হল। যেমন কমন ক্যাডার সার্ভিসে সেকশন অফিসারের ৪৭০ পদ ছিল। তা বেড়ে ৬০০ হল। ওএসডি ২০৮ থেকে বেড়ে ৩০৮ করা হল। অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ১১২ থেকে ১৫০ করা হল। ডেপুটি সেক্রেটারি ১১৪ থেকে বাড়িয়ে ১৫০ করা হল। জয়েন্ট সেক্রেটারির সংখ্যা ২০ থেকে বাড়িয়ে ৩০ করা হল। এই সিদ্ধান্তের জেরে সমস্ত স্তরের গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মীরা লাভবান হবেন বলেই মনে করা হচ্ছে। মঙ্গলবারই মুখ্যমন্ত্রী সরকারি ক্ষেত্রে ১.২৫ লক্ষ করিয়োগের কথা ঘোষণা করেন। কোন দফতরে কত কর্মী নিয়োগ হবে, তারও বিস্তারিত তথ্য জানান তিনি। আগামী দু-তিন মাসের মধ্যেই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। শেষ হবে এক বছরের মধ্যে। এবার পদোন্নতির সুযোগ বাড়িয়ে সরকারি কর্মীদেরও মন জয় করলেন মুখ্যমন্ত্রী। আসলে কেন্দ্রীয় হারে ডিএ-র দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করছেন বাম-সমর্থিত সরকারি কর্মীদের যৌথ মঞ্চ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.