ফাইল ছবি
স্টাফ রিপোর্টার: দুর্গাপুজো (Durga Puja) মিটতেই রাজ্য বিজেপিতে আলোচনার কেন্দ্রে আগামী ‘ডিসেম্বর’ মাস। রাজ্য বিজেপি নেতাদের মুখে ডিসেম্বর প্রসঙ্গ এসেছিল বেশ কয়েকমাস আগে। যে চর্চা শুরু হয়েছিল বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) কথায়। যিনি ডিসেম্বর মাসের মধ্যে তৃণমূল (TMC) সরকারকে বিরাট ধাক্কা দেওয়ার হুঙ্কার দিয়েছিলেন। শুভেন্দুর কথায় উৎসাহিত হয়ে একই হুঙ্কার দিতে শোনা গিয়েছিল রাজ্য বিজেপির আরও বেশ কয়েকজন নেতাকে। তারপর থেকে ‘ডিসেম্বর’ মন্ত্র জপতে শোনা গিয়েছিল রাজ্য বিজেপির ক্ষমতাসীন শিবিরের অনুগত কর্মী, সমর্থকদের।
কিন্তু এ মুহূর্তে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সূত্রে খবর, ডিসেম্বর মাসে আসলে বড় মাপের ধাক্কা আসতে চলেছে রাজ্য বিজেপিতেই (BJP)। রীতিমতো প্রবল সেই ধাক্কায় রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের গোটা কাঠামোটাই ভেঙে আমূল পালটে যেতে পারে। রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস সরকারকে যাঁরা ধাক্কা দেওয়ার ‘স্বপ্ন’ দেখাচ্ছিলেন, তাঁদের অনেকেরই কুর্সিচ্যুত হওয়ার ‘গল্প’-ও ভাসছে মুরলীধর সেন লেনের বাতাসে। প্রকাশ্যে অবশ্য এ প্রসঙ্গে মুখ খুলছেন না কেউই। প্রসঙ্গ তুললেই সবার মুচকি হেসে জবাব, ‘‘দেখুন না কী হয়।’’ যে কথাও যুগপৎ কৌতূহল ও আশঙ্কা – দুইই বাড়ছে বঙ্গ বিজেপির নিচের তলায়।
শুভেন্দু অধিকারীর ডিসেম্বর তত্ত্বকে পরবর্তীকালে জোরাল করেছিল রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বা দিলীপ ঘোষদের একই হুঙ্কারধ্বনি। যদিও নবান্ন (Nabanna) অভিযানের দিন সেই হুঙ্কারের সুর ক’দিন আগে পালটে অন্য কথা বলেছেন দিলীপ। সুকান্ত বা শুভেন্দুরা অবশ্য মত বা পথ কিছুই পালটাননি। রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, রাজ্য বিজেপি নেতাদের এই হুঙ্কারের জোর ইডি বা সিবিআইয়ের ক্রমবর্ধমান তৎপরতা। যার জবাবে তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র তথা রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের (Kunal Ghosh) কটাক্ষ, ‘‘যদি সিবিআই-ইডি দিয়েই সরকার বদল হয়, তবে রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী – এসব পদে তদন্তকারী সংস্থার লোকেদেরই বসানো হোক না!’’ এসবের মধ্যে আচমকা বাংলায় এসে মিঠুন চক্রবর্তী (Mithun Chakraborty) বলে গিয়েছেন, তৃণমূল কংগ্রেসের বহু বিধায়ক ও নেতা তাঁর ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। এ প্রসঙ্গে মহারাষ্ট্রের একনাথ শিন্ডে কাণ্ডের প্রসঙ্গও আলতো করে টেনেছেন তিনি। যদিও বলিউড অভিনেতা টার্নড রাজনৈতিক নেতা মিঠুনের সেই দাবিকে গুরুত্ব দেয়নি তৃণমূল নেতৃত্ব। তারপরও অবশ্য ডিসেম্বর নিয়ে আলোচনা থামেনি গেরুয়া শিবিরে।
কিন্তু পুজো মিটতেই অন্য রকম খবর আসছে দিল্লি থেকে। দলের সর্বভারতীয় কার্যালয়ে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে বঙ্গ বিজেপির কাঠামোর ‘রেনোভেশন’-এর ভবিষ্যদ্বাণী। বিজেপির এক সর্বভারতীয় নেতার কথায়, ‘‘গত এক বছরে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের ভূমিকায় যারপরনাই বিরক্ত অমিত শাহ-জেপি নাড্ডারা। যে কারণে সচেতনভাবেই রাজ্য নেতাদের পাঠানো দুর্গাপুজোয় বাংলায় আসার আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি। অথচ ওই সময় পাশের রাজ্য বিহারে এসেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। শোনা যাচ্ছে, ডিসেম্বরে রাজ্য বিজেপির একাধিক তাবড় নেতা পদচ্যুত হতে চলেছেন। যার মধ্যে কয়েকটি নাম রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো। পুরনো ও নতুন কর্মীদের সমন্বয়ের রসায়নে জোর দিতেই এই আমূল রদবদলের চিন্তা।
জানা যাচ্ছে, দলে ‘সমন্বয় ফর্মুলা’ তৈরি করার দায়িত্ব বিশ্বস্ত কয়েকজন নেতাকে দিয়েছেন অমিত শাহ। সেই ফর্মুলা চূড়ান্ত হলেই রদবদলের ঝড় ধাক্কা দেবে বঙ্গ বিজেপির অভ্যন্তরীণ কাঠামোয়। বেকার হতে হবে রাজ্যের বেশ কয়েকজন পদাধিকারীকে। দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, “ডিসেম্বরে সাংগঠনিক নির্বাচন হবে। আমাদের রাজ্যেও হতে পারে। সেটা কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ঠিক করবেন। গত বছর বিধানসভা নির্বাচন ছিল। তাই সাংগঠনিক রদবদল হয়নি। সেটি বকেয়া রয়েছে।” সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য, “সাংগঠনিক ক্ষেত্রে নির্বাচন ও রদবদল যা হবে, সবই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ঠিক করবেন।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.