সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: টোল প্লাজায় গাড়ি থামিয়ে ঘুষ নিচ্ছেন সেনাবাহিনীর জওয়ানরা, অভিযোগ তুলেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক ডেকে সেনাবাহিনী জানিয়ে দিল, ওই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন৷ মেজর জেনারেল সুনীল যাদব এদিন স্পষ্ট করে বলেন, একেবারে রুটিনমাফিক পণ্যবাহী গাড়ির তথ্য সংগ্রহ করছিলেন ইস্টার্ন কমান্ড সেনাবাহিনীর জওয়ানরা৷ বিভিন্ন রাজ্যের এন্ট্রি পয়েন্টে এক্সাইজ তথ্য সংগ্রহ করছিলেন জওয়ানরা৷ দেশের সেনাবাহিনীকে নিয়ে অযথা বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে বলেও এদিন বৈঠকে ক্ষোভ চেপে রাখেননি সুনীল যাদব৷ কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পারিকরও জানিয়েছেন, পুলিশকে জানিয়েই পশ্চিমবঙ্গের টোল প্লাজায় সেনা মোতায়েন হয়েছে৷ এমনকী পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবেই টোল প্লাজাগুলিতে ইন্সপেকশন চালানো হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷
শুক্রবার লোকসভা এবং রাজ্যসভায় তৃণমূল-সহ বিরোধীরা এই ইস্যুতে তুমুল বিক্ষোভ দেখান৷ পারিকর জানিয়েছিলেন, শুধু পশ্চিমবঙ্গই নয়, অসম-অরুণাচল-মিজোরাম-সহ নর্থ-ইস্টের (উত্তর-পূর্ব ভারতের) সমস্ত রাজ্যেই টোল প্লাজায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে৷ তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “প্রথমত, পশ্চিমবঙ্গ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্তর্ভূক্ত নয়৷ তাছাড়া দেশে জরুরি অবস্থাও জারি হচ্ছে না৷ তা হলে কেন আচমকা সেনা মোতায়েন করা হল৷ অবিলম্বে সেনা প্রত্যহার করা হোক৷ কারণ এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোকে আঘাত করছে৷” এর জবাবে কেন্দ্রীয় সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অনন্ত কুমার জানান, ভারতীয় সেনাকে দয়া করে রাজনীতিতে জড়াবেন না৷ এটা একটা রুটিন ঘটনা৷ এনিয়ে অযথা সওয়াল করা হচ্ছে৷ একটি সাধারণ বিষয়কে নিয়ে যেভাবে রাজনীতি হচ্ছে, তা আর যাই হোক সমাধানের লক্ষ্যে নয়৷ প্রতিরক্ষামন্ত্রী পারিকরও বলেন, “কলকাতায় বা পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য জায়গায় যে চেকিং হয়েছে বা হচ্ছে তা ইতিমধ্যে বিহার, উত্তরপ্রদেশ এবং ঝাড়খণ্ডেও হয়েছে৷ পশ্চিমবঙ্গেও সেনা মোতায়েন করার আগে দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের অবগত করা হয়েছে৷ এমনকী, তাদের সঙ্গে আলোচনাও করা হয়েছে৷ ২৮-৩০ নভেম্বর ওই চেকিং হওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু, ২৮ তারিখ রাজ্যে ধর্মঘট ছিল৷ তাই পুলিশের তরফেই ওই তারিখ বাতিল করতে বলা হয়৷ এবং তাদের পরামর্শ মেনেই ১-২ ডিসেম্বর ওই চেকিং হয়৷ আমার বলতে খারাপ লাগছে, কিন্তু সেনার কাজ নিয়ে এভাবে বিতর্ক তৈরি করা ঠিক নয়৷ আসলে বিরোধীদের রাজনৈতিক হতাশারই বহিঃপ্রকাশ এই ঘটনা”
কলকাতাতেও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এদিন জানানো হয়, গত ২৪ নভেম্বর কলকাতা পুলিশ, রাজ্য প্রসাশনের কর্তাদের রুটিন তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি জানানো হয়৷ ২৫ তারিখ কলকাতা পুলিশের উত্তর পেয়ে ফের ২৬ তারিখ আরেকটি চিঠি পাঠায় সেনা৷ ২৭ নভেম্বর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথবাহিনী রাজ্যের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল, এন্ট্রি পয়েন্ট চিহ্নিত করতে ‘রেইকি’ চালায়৷ ২০১৫ সালেও ১৯-২১ নভেম্বর ইস্টার্ন কম্যান্ড ওই নির্দিষ্ট অঞ্চলগুলিতে নজরদারি চালিয়েছিল, তথ্য সংগ্রহ করে৷ সেই সময় কলকাতা পুলিশের দু’জন ইন্সপেক্টরও তাঁদের সঙ্গে ছিলেন বলে জানিয়েছেন সুনীল যাদব৷ কলকাতা পুলিশের বিশেষ অনুরোধেই ৩০ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর এই রুটিন নজরদারি চালানো হয় বলেও এদিন জানিয়েছে সেনা৷ এ রাজ্যের পাশাপাশি একইরকম অভিযান চলছে অসম, অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, মেঘালয়, সিকিম ও মিজোরামেও৷ উত্তর-পূর্ব ভারতে মত ৮০টি ডেটা পয়েন্ট গোটা দেশে তৈরি হয়েছে৷ প্রতিটি পয়েন্টে ৫ থেকে ৬ জন করে সেনা জওয়ান বিনা হাতিয়ারে কেবলমাত্র তথ্য সংগ্রহের কাজ করছে বলেও জানিয়েছে সেনা৷ তবে মুখ্যমন্ত্রী সামরিক অভ্যুত্থানের যে অভিযোগ তুলেছেন, সেই প্রসঙ্গকে ‘রাজনৈতিক’ বলে প্রতিক্রিয়া দিতে আপত্তি জানান সুনীল যাদব৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.