গৌতম ব্রহ্ম: ব্রিজ বিপর্যয়ের গ্রাসে পড়া এক চালক বিস্মৃত হয়েছিলেন নিজের নাম। ভুলে গিয়েছিলেন বাড়ির ঠিকানা। পরে অবশ্য সব মনে পড়ে যায়। সবাই এমন ভাগ্যবান নন। মাঝেরহাট-কাণ্ডে মাথায় আঘাত পাওয়া অনেকেরই স্মৃতিভ্রংশ হয়েছে। কেউ হারিয়েছেন স্বাভাবিক চলাফেরার ক্ষমতা। এঁরা সবাই স্নায়ুরোগের কবলে পড়েছেন। স্নায়ুতন্ত্রের স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে।
শুধু একদিনের কাহিনী নয়। নিত্যদিন হরেক পথ দুর্ঘটনা জন্ম দিচ্ছে এমন অনেক স্নায়ুরোগীর। এঁদের পুনর্বাসনে এবার ‘নিউরো রিহ্যাব সেন্টার’ চালু করছে পিজি (এসএসকেএম) হাসপাতাল। ব্রিজ বিপর্যয়ে জখম হওয়া যুবক থেকে পথ দুর্ঘটনার শিকার হওয়া যুবতী সবাইকেই বাঁচার নতুন দিশা দেখাবে এই কেন্দ্র। ২০ সেপ্টেম্বর পিজির ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের বহির্বিভাগে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করবে নিউরো রিহ্যাব সেন্টার। বৃহস্পতিবার বহির্বিভাগ বন্ধ থাকে। তাই আপাতত সপ্তাহে ওই একটি দিন সেখানে কাজ চলবে। ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের ডাক্তারবাবুদের পাশাপাশি নিউরো সার্জারি, সাইকিয়াট্রির বিশেষজ্ঞরাও থাকবেন। থাকবেন ফিজিওথেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপি, সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলর, প্রস্থেসটিস্ট, স্পিচ থেরাপিস্টরা। নেতৃত্বে তিনজন চিকিৎসক। ফিজিক্যাল মেডিসিনের ডা. রাজেশ প্রামাণিক, নিউরো সার্জারির ডা. বিমানকান্তি রায় ও সাইকিয়াট্রিস্ট ডা. সুজিত সরখেল।
[সেতুভঙ্গে ভোগান্তি চরমে, যাত্রীদের কাছে ইচ্ছামতো ভাড়া চাইছেন অটোচালকরা]
স্নায়ুরোগের রেফারেল সেন্টার হল পিজির ‘বাঙুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজি’। মনোরোগের ক্ষেত্রে ‘ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রি’। এই দুইয়ের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পিজিতে নতুন এই রিহ্যাব সেন্টার খুলছে ‘ফিজিক্যাল মেডিসিন’ বিভাগ। হাসপাতালের ‘রোগী কল্যাণ সমিতি’ সম্প্রতি এই ব্যাপারে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে। পিজি-র ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. রাজেশ প্রামাণিক জানিয়েছেন, স্ট্রোক, মেরুদণ্ডে আঘাত, পারকিনসনস, মুভমেন্ট ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত রোগী তো আছেনই, দুর্ঘটনাগ্রস্ত বহু মানুষও স্বাভাবিক হাঁটাচলার ক্ষমতা হারান। কারও ‘মেমোরি লস’ হয়। কেউ আবার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন কথা বলার। সবই স্নায়ুজনিত সমস্যা। আর ‘ফিজিক্যাল মেডিসিন’ ও ‘সাইকিয়াট্রি’-র সঙ্গে স্নায়ুতন্ত্রের নিবিড় যোগ। তাই এই ত্রিফলা প্রচেষ্টা। জানা গিয়েছে, এই প্রকল্প চালু হওয়ার দ্বিতীয় পর্বে ‘নিউরো রিহ্যাব ল্যাব’-ও খোলা হবে ‘ফিজিক্যাল মেডিসিন’ বিভাগে। রাজেশবাবুর দাবি, বেসরকারি ক্ষেত্রে রিহ্যাব সেন্টার থাকলেও পূর্বাঞ্চলে সরকারি ক্ষেত্রে কিছু নেই। সেই দিক থেকে পিজি দিশারী হতে চলেছে।
[ওভারহেডের তার ছিঁড়ে বিপত্তি, শিয়ালদহ মেন শাখায় ব্যাহত ট্রেন চলাচল]
পিজির উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন কলকাতার ‘ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্স’ (আইএনকে)-এর নিউরো রিহ্যাব সেন্টারের অধিকর্তা ডা. সুপর্ণ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি জানান, বছর চারেক আগে আইএনকে রিহ্যাব সেন্টার চালু করে। সম্প্রতি বাংলাদেশ দূতাবাসের বিপরীতে আলাদা রিহ্যাব-ভবন হয়েছে। তবে সরকারি ক্ষেত্রে পিজিই পথিকৃৎ। সুপর্ণবাবুর পর্যবেক্ষণ, স্ট্রোক হলে বা মাথায় আঘাত পেলে অনেক সময় শরীরের একদিক পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে। হাত-পা নড়াচড়ার ক্ষমতা থাকে না। এমনকী খাবার খাওয়ার ক্ষমতাও শক্তিও লোপ পায়। এই সব ক্ষেত্রে রিহ্যাব সেন্টার খুব কার্যকর। সেখানে চিকিৎসা করিয়ে বেশিরভাগ রোগী স্বাভাবিক ক্ষমতা ফিরে পান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.