সুব্রত বিশ্বাস: মাঝেরহাটে ভেঙে পড়া ব্রিজের অটুট অংশ যা রেলের আওতায় তা পুরোপুরি সুরক্ষিত বলে জানাল পূর্ব রেল। ভেঙে পড়া অংশের কোনওরকম দায়বদ্ধতা তাদের নেই বলেও জানিয়ে দিয়েছে তারা।
[পোস্তার পর মাঝেরহাট, পরপর ব্রিজ বিপর্যয়ে দায়ের জনস্বার্থ মামলা]
বুধবার রেলের চিফ ইঞ্জিনিয়ার (ব্রিজ) ও রাইটস-এর প্রতিনিধি রেল লাইনের উপরের ব্রিজ ও লাইনের সুরক্ষা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখার পর রেল জানায়, রেলের ব্রিজ সুরক্ষিত। স্পষ্টভাবে তেমন কিছু না জানালেও রেল ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশ জানিয়েছেন, রেল লাইনের উপর যে সব ব্রিজ ও লাইনে কালভার্ট রয়েছে তা পর্যবেক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণে রেলের ত্রুটি থাকে না। লাইনের উপরের ব্রিজের তিনটি অংশের উপরের অংশটা রেলের দায়িত্বে থাকলেও দুই ধারের অ্যাপ্রোচ অংশ রাজ্যের আওতায়। রেলের আওতায় ব্রিজ পরীক্ষার শিডিউল আছে। পরীক্ষার জন্য ইন্সপেক্টর থাকেন। ইন্সপেক্টরকে অবশ্যই ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ার হতে হয়। একজনের আওতায় সাত থেকে আটটি ব্রিজ বা কালভার্টের দায়িত্ব থাকে। রেল ব্রিজগুলির ইতিহাস রেজিস্টার থাকে। যা সব সময় অনুধাবন করে দেখা হয়। এমনকী নিয়মিত কী কী আইটেম পরীক্ষা করা হবে এবং তা কবে কবে তা নির্ধারণ করা থাকে রেজিস্টারে। পুরো বিষয়টি ব্রিজ বিভাগের আওতায়। যার ঊর্ধ্বতন চিফ ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ার। এছাড়া ব্রিজের উপর ও নিচ দিয়ে ট্রেন যাওয়ার সময় চালক ও গার্ডকেও দিতে হয় ‘ট্রিপ রিপোর্ট’। চালক ও গার্ড ট্রিপ রিপোর্টে সন্দেহজনক কোনও শব্দ, ঝাঁকুনি বা গন্ডগোলের কিছুর আভাস পেলে ট্রিপ রিপোর্টে জানান। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্রিজ বিভাগের ইঞ্জিনিয়াররা গিয়ে সেই ব্রিজ পরীক্ষা করে। রেল স্পষ্ট করে না জানালেও রীতিমতো আকার ইঙ্গিতে জানিয়েছে, এত পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ব্রিজ রক্ষণাবেক্ষণে রেলের গাফিলতি থাকার কথা নয়, এমনকী থাকেও না।
ব্রিজ ভাঙার পর বজবজ শাখা ও চক্র রেল বন্ধ রাখলেও রাতে তা আবার চলাচল শুরু করে। পূর্ব রেল জানিয়েছে, তাদের সব লাইনই নিরাপদ এবং ট্রেন চলাচলের উপযুক্ত রয়েছে। তাই বুধবার বজবজ শাখা ও চক্ররেল চলেছে নিয়মিতভাবেই। মঙ্গলবার রেল লাইনের উপরের ব্রিজ অক্ষত থাকলেও রাত ন’টা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা সম্পর্কে রেল জানিয়েছে, আইন মেনে মাঝেরহাট স্টেশন কর্তৃপক্ষ শিয়ালদহ কন্ট্রোলে খবর দিলে সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় বজবজ শাখার ওই অংশে। কারণ বিপত্তি না বুঝে ট্রেন চালনো সম্ভব নয়। এর পর সুপারভাইজাররা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিরাপদ বলে রিপোর্ট দেওয়ার পর রাত ন’টার সময় ট্রেন চালু হয়। তবে গতির সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। কারণ, বেশি গতি থাকলে কম্পাঙ্কের ফলে ব্রিজের অন্য অংশ ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই এদিনও গতি কম রেখে ট্রেন চলে নিউ আলিপুর-মাঝেরহাটের মধ্যে। ব্রিজের ভাঙা অংশের দিকে চক্ররেলের লাইন হওয়ায় নিউ আলিপুর পর্যন্ত ট্রেন চললেও পরে ইঞ্জিনিয়ারদের সবুজ সংকেত পাওয়ার পর মাঝেরহাট পর্যন্ত ট্রেন চলে। ট্রেন অনিয়মিত চলায় এদিন অফিস টাইমে ট্রেনে ভিড়ে নাজেহাল হন যাত্রীরা। তবে এদিন এই অসুবিধায় যাত্রীদের ক্ষোভ চোখে পড়েনি বরং ছিল স্বস্তির বাতাবরণ। তাঁদের কথায়, এত বড় দুর্ঘটনার পরও ট্রেন চলাচল স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়নি, এটাই আশার বিষয়।
[ব্রিজ ভাঙার সঙ্গে মেট্রো প্রকল্পের কোনও যোগ নেই, প্রাথমিক রিপোর্টে জানাল ‘রাইটস’]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.