কৃষ্ণকুমার দাস: যাঁদের জন্য এত বিপুল আয়োজন, তাঁরাই যদি দলে দলে আসতে না পারেন তা হলে সব পরিশ্রমই বৃথা। জনস্রোত যদি আসার সম্ভাবনা কমে যায়, তবে তো নামী স্পনসররাও মুখ ফিরিয়ে নেবে। বিগ বাজেটের তহবিলে জোর ধাক্কা খাবে।
[ সেতু ভেঙে পাসপোর্ট ‘মাটির তলা’য়, স্বপ্নভঙ্গ বিদেশযাত্রার]
ধর্মতলা থেকে খিদিরপুর-একবালপুর দিয়ে তারাতলা হয়ে বিভিন্ন পুজো মণ্ডপে আসেন বিচারক-সেলিব্রিটিরা। কিন্তু, এবার কি প্রবল যানজট টপকে আদৌও আসবেন তাঁরা? মাঝেরহাট সেতুভঙ্গ পরবর্তী যানজট দেখে দুঃশ্চিন্তায় চেতলা অগ্রণী, সুরুচি সংঘ, বেহালা নূতন দলের মতো বিগবাজেটের পুজোর উদ্যোক্তারা। বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করছেন হরিদেবপুর ৪১ পল্লি, অজেয় সংহতির মতো শহরের সেরা পুজোগুলির আয়োজকরাও। খবর নিচ্ছেন, পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে। উদ্বেগ বেড়েছে বাদামতলা আষাঢ় সংঘ, মুদিয়ালি, শিবমন্দির, ৬৪ পল্লি, অবসরের মতো হাজরা-কালিঘাট-ভবানীপুরের পুজো কমিটিগুলিরও। কারণ, মাঝেরহাটে সেতু ভাঙার কারণে এখন ঘুরপথে চলছে গাড়ি। তীব্র যানজট শুরু হয়ে গিয়েছে দক্ষিণ কলকাতার প্রাণকেন্দ্রেও। শারদ উৎসবে গত কয়েক বছরে রেকর্ড ভিড়ের সাক্ষী থেকেছে চেতলা অগ্রণী ও সুরুচি সংঘ। আবার বেহালার থিমপুজোর আকর্ষণও তো কম নয়! পুজোর ক’দিন মানুষের ভিড় আর যানজট সামলাতে দুর্গাপুর ব্রিজ, নিউ আলিপুর মোড়, তারাতলা ও হরিদেবপুরে বাড়তি ফোর্স নামাতে হয় কলকাতা পুলিশকে। পথে নামেন স্বয়ং পুলিশ কমিশনার-সহ কলকাতা পুলিশের পদস্থ পদাধিকারিরাও।
পুজোর আর বেশি দূর নেই। কিন্ত এখনই যে ‘মহাষ্টমীর যানজট’ শহরের পুজো বলয়ে! মঙ্গলবার হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছে মাঝেরহাট ব্রিজের একাংশ। তাই ডায়মন্ডহারবার রোডের বেশিরভাগ গাড়িই ঢুকে পড়েছে দুর্গাপুর ব্রিজ, নিউ আলিপুর মোড়, হরিদেবপুরে। জনজীবনের এমন ‘রুদ্র-মূর্তি’ দেখে রীতিমতো আতঙ্কিত পুজো উদ্যোক্তারা। তবে পুজোর আগে যানজটে সমস্যার মেটা নিয়ে আশাবাদী চেতলা অগ্রণীর সভাপতি ও মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি জানিয়েছেন, ‘দু-চারদিন যেতে দিন, নিশ্চয়ই আরও বিকল্প রুট চালু করে যান চলাচল স্বাভাবিক হবে।‘ পুজোর কলকাতায় খুঁটিপুজো, হোডিং, থিমসং-সহ নানা অভিনবত্বের প্রবর্তক নিউ আলিপুরের সুরুচি সংঘ। মধ্যরাতেও সুরুচি পুজো দেখার জন্য দীর্ঘ লাইন পড়ে দুর্গাপুর ব্রিজে। গাড়ির দীর্ঘ সারি তারাতলা মোড় ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু, এখন নিউ আলিপুর পেট্রোল পাম্পে তীব্র যানজটে নাজেহাল স্থানীয় বাসিন্দারা। ‘সত্যিই খুব চিন্তার ব্যাপার। মাঝেরহাট ব্রিজ ফের চালু না হলে দর্শনার্থীদের পৌঁছনো একটা বড় চ্যালেঞ্জ হবে পুজোর ক’দিন।‘ উদ্বিগ্ন সুরুচি সংঘের সম্পাদক স্বরূপ বিশ্বাস। তাঁর আশা, বেহালা বুড়োশিবতলা ও লাগোয়া রাস্তাগুলিতে যদি পার্কিং তুলে দিয়ে যানচলাচল শুরু হয়, তাহলে পুজোয় যানজট কমবে।
[ ব্রিজ বিপর্যয়ের জের, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ নিউ আলিপুর-মাঝেরহাট ট্রেন চলাচল]
টালিগঞ্জের করুণাময়ী ব্রিজ পেরিয়ে হরিদেবপুর ৪১ পল্লি, বিবেকানন্দ পার্ক অ্যাথলেটিক ক্লাব ও অজেয় সংহতিকে ঘিরে পুজোয় জনস্রোত বয়ে যায়। উদ্যোক্তাদের আশঙ্কা, ‘দর্শক, বিচারক কেউ আসতে পারবেন না। আর ভিড় না হলে স্পনসররাও তো টাকা দেবে না।‘ ৪১ পল্লি পুজোর অন্যতম কর্তা কাউন্সিলর সোমা চক্রবর্তীও বলছেন, ‘এমনিতেই সরু রাস্তা। এখন আবার রাস্তা অচল হয়ে যাচ্ছে। পুজোর ক’দিনের কথা ভেবে চিন্তা হচ্ছে।‘ বেহালা নূতন দলের আহ্বায়ক সন্দীপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘এমন পরিস্থিতি থাকলে দর্শক, বিচারক কেউই ঠিকমতো পৌছাবে না। পুজোর স্পনসর ও হোর্ডিংয়ের সংখ্যা এবং টাকা দুটোই অনেক কমিয়ে দেবে। কিন্তু বাজেট কমাতে পারব না। এদিকে আবার নয়া আশঙ্কার কথা শোনালেন বড়িশার সভাপতি কাউন্সিলর তথা বেহালা ক্লাবের কার্যকরী সভাপতি সুদীপ পোল্লে। জানালেন, ‘পানিহাটি থেকে প্রতিমা আনতে হবে ১০ চাকার লরিতে। কীভাবে ঠাকুর আনব? লরির তো দূরের কথা ট্যাক্সিও আসতে চাইছে না বেহালায়।”
[ রাইটস’-র রিপোর্টে উদ্বেগ, দুর্বলতার নিরিখে প্রথম বঙ্কিম সেতু]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.