গৌতম ব্রহ্ম: ‘বাবুসোনা তুমি কি পাগল? নাকি তোমার পেট খারাপ? ডাক্তার হতে চেয়ে আত্মহত্যা করার এত ইচ্ছে কেন?’ ‘এই বয়সে সাইকিয়াট্রিক প্রবলেম একেবারেই ঠিক না।’ ‘ছেলেটা মরতে চাইছে যখন মরতে দিন না।’ ‘মহামূর্খ ছাড়া কেউ ডাক্তার হতে চায় না।’ স্বপ্নভঙ্গের হতাশায় ডাক্তারি পড়ার স্বপ্ন দেখা মাধ্যমিকের দুই কৃতীকে এই ভাষাতেই উপদেশ ও ‘পরামর্শ’ দিলেন এ রাজ্যের ডাক্তারদের একাংশ। জল ঢালতে চাইলেন ডাক্তার হওয়ার উৎসাহ-উদ্দীপনায়।
পূর্ব মেদিনীপুরের মহম্মদপুর দেশপ্রাণ বিদ্যাপীঠের সৌগত দাস। ফালাকাটা গার্লস হাই স্কুলের শ্রেয়সী পাল। এবছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় মেধাতালিকার প্রথম দুই স্থান দখল করেছে এই দু’জন। সংবাদমাধ্যমের কাছে সাক্ষাৎকার দিয়ে গিয়ে দু’জনই জানিয়েছে, ভবিষ্যতে তারা ডাক্তার হতে চায়। তারপরই এই দুই কৃতীর স্বপ্নকে কটাক্ষ করতে শুরু করেছেন কিছু চিকিৎসক। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁদের সেই কটাক্ষ ঘিরে স্বভাবতই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। দু’টি ক্ষেত্রেই প্রথম পোস্ট করেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. প্রভাসপ্রসূন গিরি। তিনি ফার্স্ট বয় সৌগতকে প্রশ্ন করেন, “বাবুসোনা তুমি কি পাগল? নাকি তোমার পেট খারাপ? ডাক্তার হতে চেয়ে আত্মহত্যা করার এত ইচ্ছে কেন? তা-ও আবার এই দেশে, এই রাজ্যে!’
[ আরও পড়ুন: গরমে সংকট মেটাতে পুরসভার নয়া উদ্যোগ,চাহিদামতো বাড়তি জল সরবরাহ শহরে]
পোস্টের নিচে কমেন্ট করেছেন ২৪ জন। যাঁদের ৯০ ভাগই ডাক্তার। কেউ বলেছেন, “দাদা, ওর খুজলি হয়েছে। মলম লাগাতে হবে।” কেউ আবার কমেন্ট করতে গিয়ে ভাষার ভারসাম্য হারিয়েছেন। বলেছেন, “হয়ে গেল। বাঁশ কেন ঝাড়ে এসো আমার…”। কেউ আবার বলেছেন, “স্যারদের হাতে তো মার খাওনি। এবার জনগণের হাতে মার খাওয়ার জন্য তৈরি হও।’ ডা. দেবাশিস চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘‘এই বয়সে মানসিক সমস্যা একেবারেই ঠিক না। বাড়ির লোকের বোঝানো উচিত।’’
ডেন্টিস্ট দীপাঞ্জয় ঘোষ কমেন্ট করেন, “আহ, ছেলেটা মরতে চাইছে যখন মরতে দিন না। ডা. বিশ্বম্ভর আগরওয়ালের উক্তি, ‘মহামুর্খ ছাড়া কেউ ডাক্তার হতে চায় না।’ বিনা মূল্যে ডাক্তারি করার ইচ্ছা প্রকাশ করায় প্রভাসপ্রসূনবাবু মঙ্গলবার শ্রেয়সীকেও কটাক্ষ করেন। প্রশ্ন করেন, “‘বিনামূল্যে চিকিৎসা! খাবে কী? মার? মার খেয়েই পেট ভরে যাবে? ওষুধও কি বিনামূল্যে কিনে দেবে? যদি সরকারি চাকরি করে তাহলে ও কি মাইনে নেবে না? সবাইকে বিনামূল্যে দেখলে নিজের অন্নসংস্থান হবে কী করে?”
[ আরও পড়ুন: অধিবেশনে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান বিজেপি কাউন্সিলরের, উত্তপ্ত কলকাতা পুরসভা ]
পোস্টটি মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত ৩২০টি ‘রিঅ্যাকশন’ পেয়েছে, ৫১ টি শেয়ার হয়েছে। ১২২ জন কমেন্ট করেছেন। কলকাতার চিকিৎসক ডা. গৌরগৌতম কর আবার কৃতীর বাবা-মাকে খোঁচা দিয়ে বলেছেন, “আশা করি কৃতীর বাবা-মা ওর জন্য প্রচুর জমিয়ে রেখে যাবেন। আর সংসারী হলে স্বামীও বিনা রোজগারে চিকিৎসা সাপোর্ট করবেন। তাহলে ও নিশ্চয়ই পারবে!” প্রভাসপ্রসূণবাবু অবশ্য জানিয়েছেন, “শ্রেয়সী বিনামূল্যে ডাক্তারির কথা বলায় যেভাবে প্রবল হাততালির ঢেউ শুরু হয়েছিল, তার প্রেক্ষিতেই পোস্ট দু’টি করেছি। ডাক্তাররা কতটা হতাশ পোস্টের কমেন্টগুলি দেখলেই বুঝবেন।”
অবশ্য অন্য মতও আছে। মেদিনীপুর কলেজের এক অধ্যাপক ফটিকচাঁদ ঘোষ অবশ্য ডাক্তারদের পাল্টা পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর মত, “মাননীয় ডাক্তারবাবুরা বিনা পয়সায় কথাটাকে একটু অন্যরকম ভাবে দেখুন। ও অন্যায় কিছু বলেনি। বিনা পয়সায় রোগী দেখে ও পাঁচখানা বাড়ি দামি গাড়ি বিদেশ ভ্রমন করতে পারবেনা হয়তো কিন্তু খেতে-পরতে পারবে। এখনও অনেক ডাক্তার পাঁচ টাকা বা পঞ্চাশ টাকায় রোগী দেখেন। একটা বাচ্চা মেয়ের স্বপ্ন ও আবেগ নিয়ে মজা করার অধিকার আপনাদের কেউ দেয়নি।” সব মিলিয়ে কৃতী কিশোর-কিশোরীর স্বপ্ন ও তার যৌক্তিকতা ঘিরে চিকিৎসক মহলের এই অদ্ভূত প্রতিক্রিয়া সবার নজর কেড়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.