ছবি: প্রতীকী
স্টাফ রিপোর্টার: গত বছরের তুলনায় এবছরের মাধ্যমিকে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমল প্রায় চার লক্ষ। গত বছর যেখানে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১০ লক্ষ ৯৮ হাজার ৭৭৫ জন। সেখানে চলতি বছরের মাধ্যমিকে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৬ লক্ষ ৯৮ হাজার ৬২৮ জন। কেন এক বছরে এক লাফে এতো কমল পরীক্ষার্থীর সংখ্যা? কারণ হিসাবে কোভিড অতিমারী পরিস্থিতি ও সেই সময়কালে চলা অনলাইন পঠনপাঠনকেই দায়ী করলেন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, এবছর প্রায় ৯ লক্ষ পড়ুয়া নথিভুক্ত হয়েছিলেন। তার মধ্যে দু’লক্ষ পড়ুয়া প্রস্তুতির অভাবে বা টেস্ট পরীক্ষায় সফল না হওয়ায় পরীক্ষার জন্য ফর্ম পূরণ করেননি। অতিমারীকালে ক্লাসরুম শিক্ষার অভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে সমস্যা হয়ে থাকতে পারে বলে মত সভাপতির। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, এটা সারা বিশ্বে প্রমাণিত সত্য যে ভার্চুয়াল পঠন-পাঠন কখনও ক্লাসরুম শিক্ষার বিকল্প হতে পারে না।
এদিন পর্ষদ (WBBSE) সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অতিমারীর (Coronavirus) কারণে এই পড়ুয়ারা অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে থাকাকালীন ক্লাসরুম শিক্ষা থেকে অনেকাংশে বঞ্চিত হয়েছেন। আমরা মনে করি, ক্লাসরুম শিক্ষা অত্যন্ত জরুরি। আমি এখনও সম্পূর্ণ পর্যালোচনার বা শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনার সুযোগ পাইনি। তবে, আমার মনে হয়, হতে পারে অতিমারীর কারণে দীর্ঘ সময় ক্লাসরুম শিক্ষা নিয়ে যে প্রতিবন্ধকতা ছিল তারই একটা প্রভাব আমরা দেখতে পাচ্ছি।’’ এছাড়া, ২০১৭ সালে ভরতির নির্দেশিকায় বয়সসীমায় একটি ছাড়ের শর্ত না থাকায় অনেক পড়ুয়া ভর্তি হতে পারেনি। সেই প্রসঙ্গ টেনে সভাপতি বলেন, ‘‘আমরা জানতাম, এবছর সেটার একটা প্রতিফলন ঘটবে। কারণ ২০১৭ সালে যারা ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিলেন, তাঁরাই এবছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী।’’ এই দুইয়ের প্রভাবেই এবারের পরীক্ষার্থীর সংখ্যা চার লক্ষ কমেছে।
২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে চলেছে এবছরের মাধ্যমিক পরীক্ষা। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠক করে পরীক্ষার সামগ্রিক প্রস্তুতির চিত্র তুলে ধরেন পর্ষদ সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, মোট ২৮৬৭টি পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে চলেছেন প্রায় ৭ লক্ষ পরীক্ষার্থী। ছাত্রের তুলনায় ছাত্রী পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। ইতিমধ্যেই ২১টি জেলায় পৌঁছে গিয়েছে প্রশ্নপত্র। বিশৃঙ্খলা এড়াতে পরীক্ষার প্রথমদিন থেকে পরীক্ষাকেন্দ্রে অভিভাবকদের প্রবেশে জারি করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। প্রথমবার পরীক্ষাকেন্দ্রের ভিতরে থাকবেন পুলিশ আধিকারিকরা। প্রতিটি পরীক্ষাকেন্দ্রকে সিসিটিভি নজরদারির আওতায় আনতে আগেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল পর্ষদের তরফে। পর্ষদের কাছে এখনও পর্যন্ত জমা পড়া ৯০ শতাংশ রিপোর্ট অনুযায়ী সেই নির্দেশ মানা হচ্ছে বলেই জানাচ্ছেন পর্ষদ সভাপতি। পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে সময়ে সময়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য তৈরি করা হয়েছে একটি নতুন অ্যাপ। পরীক্ষাকেন্দ্রে থাকা অতিরিক্ত ভেন্যু সুপারভাইজার সেই অ্যাপের মাধ্যমে পর্ষদকে তথ্য পাঠাবেন পরীক্ষার দিনগুলিতে।
মাধ্যমিক পরীক্ষার চলাকালীন প্রশ্নপত্র যাতে কোনও ভাবেই বাইরে না বেরিয়ে আসে সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর রেখেছে পর্ষদ। রামানুজবাবু (Ramanuj Ganguly) বলেন, ‘‘কোনও ভাবে যাতে পরীক্ষা চলাকালীন প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে বাইরে না বের হয়, আমরা সেই চেষ্টা করছি। বিষয়গুলো মাথায় রেখে আমরা কিছু ব্যবস্থা নিয়েছি। যোগাযোগ ব্যবস্থার ধরনে একটু বদল আনা হয়েছে। আরও অনেকগুলি নতুন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষা নিয়ে প্রস্তুতির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। পরীক্ষা যাতে সুষ্ঠুভাবে, ভালোভাবে হয়, কোনও বিঘ্ন না ঘটে, তার জন্য পর্ষদ ঐকান্তিক চেষ্টা করবে।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.