সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সব পেশারই নিজস্ব ধরন আছে, গুরুত্ব আছে। অভিজ্ঞরা বলেন, কোনও কাজই ছোট নয়। একথা ঠিক, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু আজকের মন্দার বাজারে কে, কোন পেশায় নিযুক্ত, তা একটা চর্চার বিষয় বটে। ঠিক যেমন এই মুহূর্তে নেটদুনিয়ায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে কলকাতার যুবক মিরাজ। পেশায় তিনি এক অনলাইন ফুড ডেলিভারি সংস্থার কর্মী। যাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর। সোশ্যাল মিডিয়ায় মিরাজের পড়াশোনা আর পেশার মধ্যে এমন আসমান-জমিন ফারাক সামনে এসে স্বভাবতই তা আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে।
কলকাতার মিরাজ বছর তেইশ-চব্বিশের এক ঝকঝকে যুবক। অনলাইন ফুড ডেলিভারি সংস্থা জোম্যাটোর কর্মী তিনি। খাবারের অর্ডার নিয়ে নিজের দু’চাকাকে সঙ্গী করে দোরে দোরে খাবার পৌঁছে দেন। জোম্যাটোর মাধ্যমে খাবার আনানোর সময় কর্মী পরিচিতির জায়গায় মিরাজের যোগ্যতা দেখে রীতিমতো তাজ্জব বনে গিয়েছেন গ্রাহকরা। দিন তিনেক আগে শৌভিক দত্ত নামে এক গ্রাহক জোম্যাটোয় খাবারের অর্ডার দিয়েছিলেন। পরিষেবা দিতে এগিয়ে গিয়েছিলেন মিরাজ। সেখানেই মিরাজের শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখে চোখ আটকে যায় তাঁর। দেখেন, মিরাজ এম কম অর্থাৎ বাণিজ্য বিভাগের স্নাতকোত্তর। অথচ কাজ করছেন ডেলিভারি বয় হিসেবে! শৌভিক নিজে এখনও পড়াশোনা করেন। তিনি মিরাজের এই পরিচিতিটি নিজের ফেসবুক পেজে শেয়ার করেন, যোগ্যতার অংশ আলাদাভাবে চিহ্নিত করেন। এবং সেইসঙ্গে লেখেন, ‘‘জোম্যাটো থেকে খাবার অর্ডার করে এইবার আমি অনুতপ্ত। আর পাঁচজনের মতো আমিও জোম্যাটো দেখতে দেখতে খাবারের অর্ডার দিয়েছিলাম। কিন্তু ডেলিভারি বয় সম্পর্কে যে তথ্য এল, তাতে মনে হচ্ছিল, যদি অর্ডারটা বাতিল করে দেওয়া যায়।’’ এরপর নির্দিষ্ট সময়ে মিরাজ খাবার নিয়ে পৌঁছে যান শৌভিকের বাড়িতে। মিরাজের সঙ্গে সাক্ষাৎপর্বও শৌভিক তাঁর সোশ্যাল মিডিয়ার পাতায় জানিয়েছেন। শৌভিকের কথায়, ‘‘খাবারের প্যাকেট নিয়ে মিরাজ যখন আমার বাড়িতে পৌঁছান, তখন তাঁর মুখে চওড়া হাসি। জোম্যাটো অ্যাপের পরিষেবা নিয়ে আমাকে রেট দেওয়ার অনুরোধ জানালেন। আমি কথা বলতে গিয়ে জানলাম, মিরাজ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পেয়েছেন। এম কম-এ তাঁর বিষয় ছিল, ফিনান্স এবং ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিং ।’’ নিজের এই অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়ে শৌভিক আরও লিখেছেন, ‘‘দেশ এবং রাজ্যে অনেক বদল প্রয়োজন। কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। আমরা খুব খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে চলেছি। অবিলম্বে পরিস্থিতি না পালটালে মুশকিল।’’ এত যোগ্যতা সম্পন্ন একজন ডেলিভারি বয়কে নিয়ে শৌভিকের এই প্রতিক্রিয়া সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ আলোড়ন ফেলেছে। হাজার তিনেকেরও বেশি লাইক, শেয়ার হয়েছে পোস্টটি।
সম্প্রতি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকারে বেলজিয়াম বংশোদ্ভুত ভারতীয় অর্থনীতিবিদ জানিয়েছিলেন, ভারতে বহু মানুষ ভুল পেশায় নিযুক্ত। অর্থাৎ নিজেদের যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ করার সুযোগ পান না। মিরাজ বোধহয় তাঁর সেই পর্যবেক্ষণেরই জলজ্যান্ত উদাহরণ। তবে শেষপর্যন্ত অভিজ্ঞতা পূর্ণ মানুষজনের কথায় ভরসা রেখেই বলতে হচ্ছে, কোনও কাজই ছোট নয়। হয়তো মিরাজ নিজের পেশায় খুশি। অথবা ভবিষ্যতে নিজের মতো করে কিছু একটা করার প্রস্তুতি তিনি নিচ্ছেন এভাবেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.